parbattanews

বাংলাদেশ-মিয়ানমার বর্ডার পাস ট্রানজিট যাতায়াত বন্ধের এক বছর পার

 

টেকনাফ প্রতিনিধি:

রোহিঙ্গা ইস্যু সংক্রান্ত জটিলতায় দীর্ঘ এক বছর ধরে বাংলাদেশের টেকনাফ ও মিয়ানমারের মংডু সীমান্ত বাণিজ্যের ট্রানজিট যাতায়াত বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছে টেকনাফ স্থল বন্দরের ব্যবসায়ীরা।

টেকনাফ স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, রাখাইন রাজ্যের সহিংসতার ঘটনার পর থেকে মিয়ানমার মংডু শহর থেকে মালামাল না এলেও মিয়ানমারের জেলা শহর আকিয়াব থেকে বিভিন্ন প্রকার মালামাল আসা এখনো অব্যাহত রয়েছে।

বর্তমানে রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের উপর জাতিগতভাবে নিধন করতে নেমেছে মিয়ানমারের সেনা ও অগ্র বৌদ্ধরা। মিয়ানমারে এখনো সংঘাত ও রোহিঙ্গাদের উপর নির্যাতন অব্যহত রেখেছে। একারণে বর্ডার পাশ চালু হচ্ছে না। ব্যবসায়ীরা আশা করছেন, রোহিঙ্গাদের বিষয়ে কোন একটা সমাধান হলে হয়তো ট্রানজিট চালু হতে পারে। একারণে সরকার হারাচ্ছে প্রচুর পরিমাণ রাজস্ব। তার পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এ এলাকার মাধ্যম আয়ের মানুষেরা। দিনের পর দিন কমতে শুরু করে টেকনাফ স্থলবন্দরের আমদানি ও রপ্তানি। কমতে থাকে রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রা এবং টেকনাফ স্থলবন্দরের ব্যবসায়ীদের মাঝে দেখা যাচ্ছে চরম হতাশা। কারণ বন্দর ব্যবসায়ীদের কোটি কোটি টাকা মিয়ানমার মংডু ব্যবসায়ীদের কাছে আটকা পড়ে আছে।

টেকনাফ স্থলবন্দরের আমদানি ও রপ্তানীকারক এমএ হাশেম জানান, মংডু ও টেকনাফ সীমান্তের ট্রানজিট ১ বছর যাবত যাতায়াত বন্ধ থাকায় পণ্য আনা নেওয়ার কাজে সমস্যা দাঁড়িয়েছে। এ সমস্যা আরো দীর্ঘদিন থাকলে ব্যবসা-বাণিজ্য অনেকাংশে কমে যাবে।

টেকনাফ স্থলবন্দর বোট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন জানান, টেকনাফ-মংডু সীমান্ত বাণিজ্য বন্ধ থাকায় তারা লোকসানে পড়েছে এবং তাদের বেশ কিছু ট্রলার বিকল হয়ে পড়ে আছে নাফনদীতে। এসব ট্রলারের মাঝি এবং মালিকরা অভাব-অনটনে দিন কাটাচ্ছে।

টেকনাফ স্থলবন্দরের ইমিগ্রেশন কর্মকর্তা শাজাহান মিয়া জানান, মিয়ানমারে সহিংসতাকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো রাখার জন্য ট্রানজিট যাতায়াত বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে এই বর্ডার পাস যাতায়াত পুনরায় চালু করার জন্য অনেক চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের উপর ধারাবাহিক নির্যাতন অব্যাহত থাকায় দীর্ঘ এক বছর ধরে এই যাতায়াতের পথটি চালু করা সম্ভব হয়নি। তার পাশাপাশি দীর্ঘ ১ বছর সময় অতিবাহিত হওয়ায় এ কর্মস্থলে দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা অন্যত্র বদলি হয়ে চলে গেছে। এতে নিস্ক্রিয় হয়ে পড়ে আছে টেকনাফ বর্ডার পাশ ট্রানজিট যাতায়াত।

টেকনাফ স্থলবন্দরের ব্যবস্থাপক জসিম উদ্দিন জানান, ‘মিয়ানমারের সংঘর্ষকে কেন্দ্র করে দীর্ঘ এক বছর যাবত  মিয়ানমারে মংডু শহর থেকে আগের মত পণ্যবাহী ট্রলার টেকনাফ স্থলবন্দরে আসছে না। মাঝে মাঝে বিভিন্ন প্রকার পন্য নিয়ে কয়েকটি ট্রলার বন্দর ব্যবসায়ীদের সাথে যোগাযোগের মাধ্যমে মিয়ানমার মংডু শহর থেকে আনতে পেরেছে। সেই ধারাবাহিকতায় গত মাসে  সরকারি রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রা বেশি আদায় হয়েছে।

উল্লেখ্য, গত ২০১৬ সালের ৮ অক্টোবর গভীর রাত থেকে মিয়ানমার সীমান্তের বিভিন্ন এলাকায় বিজিপি ও সন্ত্রাসীদের মধ্যে হামলা, ভাংচুর, গোলাগুলির সূত্রপাত হয়। এর জের ধরে মিয়ানমার রাখাইন রাজ্যের সেনারা মাসের পর মাস লাগাতারভাবে রোহিঙ্গাদের ওপর শুরু করে অমানবিক নির্যাতন, জ্বালিয়ে দেওয়া হয় তাদের বাড়িঘর। এরপর শুরু হয় গণহারে মানুষ হত্যা। এই হত্যাকাণ্ড থেকে রেহাই পায়নি নারী ও শিশুরাও।

Exit mobile version