বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত চুক্তি: ব্যবসায়ীদের সাত দিনের বৈধ সুযোগ, তিন দিনেই সীমাবদ্ধ!

image_1642.bangladesh+myanmar1h

মুহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান, টেকনাফ:
বাংলাদেশ-মিয়ানমারের ব্যবসায়িক সুযোগ-সুবিধা ও চোরাচালান বন্ধে মধ্যে দ্বিপক্ষীয় চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ১৯৯৫ সালের ৫ সেপ্টেম্বর চুক্তি সম্পাদনের পর থেকেই অবাধে দু’দেশের ব্যবসায়ীরা যাওয়া-আসা শুরু করে। ব্যবসায়ীরা বৈধপথে সাতদিনের সময় নিয়ে মিয়ানমার প্রবেশ করলেও সীমান্তরক্ষী বাহিনী তাদের তিনদিনের বেশি থাকতে দিচ্ছে না। সাম্প্রতিক মিয়ানমারের সহিংস ঘটনার পর সীমান্ত বাহিনী ব্যবসায়ীদের উপর দ্বিগুন কড়াকড়ি আরোপ করেছে। এমন অবস্থার মুখোমুখি হওয়ার পরও অবাধে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা।

গত এক বছরে বাংলাদেশের ২৬৪জনের বিপরীতে মিয়ানমারের ৫৯৯জন ব্যবসায়ী বৈধপথে আসা যাওয়া কিছুটা কমিয়ে দিয়েছে। অথচ মিয়ানমারের ব্যবসায়ীদের সুযোগ-সুবিধা পূর্বের ন্যায় থাকায় এখনো তারা নিয়মিত বাংলাদেশে আসা-যাওয়া করছে।
সূত্র জানায়, বাংলাদেশ-মিয়ানমারের সীমান্ত চুক্তিতে শুধুমাত্র মংডু এলাকায় ব্যবসায়ীরা সাতদিন পর্যন্ত অবস্থান করতে পারার বিষয়টি উল্ল্যেখ রয়েছে। কিন্তু সে দেশের সরকার ও সীমান্ত বাহিনীর সদস্যরা তিনদিনের বেশি কোন ব্যবসায়ীকে থাকতে দিচ্ছে না। গত ৪ ডিসেম্বর সর্বশেষ সেক্টর পর্যায়ে পতাকা বৈঠকেও বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের পক্ষ থেকে সাতদিন থাকার বিষয়টি তুলে ধরা হয়। কিন্তু এখনো ব্যবসায়ীরা তার সুফল পায়নি।   

ব্যবসায়ীদের অভিযোগ আমরা মিয়ানমারে গেলে তিন মাইলে বাহিরে আমাদেরকে যেতে দেয়না সে দেশের সরকার। কিন্তু মিয়ানমার লোকজন বাংলাদেশে আসলে গুটা বাংলাদেশ যাওয়া আসা করতে পারে।
টেকনাফ ইমিগ্রেশনের ইনচার্জ উপ-পরিদর্শক মো. হারুনুর রশিদ বলেন, মিয়ানমারের মংডু প্রদেশে ব্যবসায়িরা সাতদিন থাকার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু সহিংসতার পর থেকে সেদেশের ইমিগ্রেশন ও সীমান্তরক্ষী বাহিনী তাদের তিনদিনের বেশি থাকতে দিচ্ছে না। আগামি মাসে দু’দেশের চেম্বার পর্যায়ের আরো একটি বৈঠকের সম্ভাবনা রয়েছে। বৈঠকে ব্যবসায়ী প্রতিনিধিরা তাদের বানিজ্য ও ইমিগ্রেশন সংক্রান্ত বিষয়গুলো তুলে ধরবেন। আশা করছি, বৈঠকের পর বিষয়টি সুরাহা হয়ে যাবে।

ব্যবসায়ীরা জানায়, যাবতীয় নিয়ম অনুসরণ করে সেদেশে গেলেও ইমিগ্রেশন তাদেরকে তিনদিনের বেশি থাকতে দেয় না। অনেক ব্যবসায়ী নিদিষ্ট সময় ফুরিয়া যাওয়ায় পুনরায় দেশে ফিরে ভিসা লাগিয়ে মিয়ানমার যায়। এতে স্বাভাবিক কাজকর্ম ব্যহত হওয়ার পাশাপাশি ব্যবসায়িকভাবেও ক্ষতিগ্রস্ত হতে হয়। অথচ সেদেশের ব্যবসায়িরা বাংলাদেশে এসে পুরো সাতদিন থাকতে পারে। দু’দেশের চুক্তিতেও সাতদিন থাকার বিষয়টি উল্লেখ থাকলেও বাংলাদেশী ব্যবসায়িদের বৈধ সুযোগ তিনদিনেই সীমাবদ্ধ!    

ইমিগ্রেশন অফিস সূত্র জানায়, পাসপোর্টের ফটোকপি, ভোটার আইডি কার্ড, জাতীয় সনদপত্রের ফটোকপি জমা দিয়ে যে কেউ মিয়ানমারের মংডু প্রদেশে প্রবেশ করতে পারে। এতে প্রতিজনকে এক হাজার ৩৩৫ টাকা গুনতে হয়। এরমধ্যে কাস্টমস খরচ ৫০০ টাকা, পারমিট ইস্যু ১০০টাকা, আসা-যাওয়া বোট ভাড়া ৭০০টাকা, বন্দর চার্জ ৩৫টাকা। বোট ভাড়া ব্যতিরেকে বাকি টাকা ব্যাংকের চালানের মাধ্যমে অথবা নগদে ইমিগ্রেশনে জমা দিলেই মিয়ানমার প্রবেশকারীদের বাংলাদেশ সরকার অনুমোদিত প্রবেশ অনুমতি বই সরবরাহ করা হয়। এই বই নিয়ে মিয়ানমারের মংডু প্রদেশে অবাধে চলাফেরা করতে পারে। একই নিয়মে সে দেশের ইমিগ্রেশন পয়েন্টও নীল রঙের একটি প্রবেশ অনুমতি বই সরবরাহ করে।

টেকনাফ সিএনএফ এজেন্ট ব্যবসায়ী মোঃ হাসিম বলেন, গত পতাকা বৈঠকে আমরা সাতদিন থাকার বিষয়টি অবহিত করেছি। মিয়ানমারের ব্যবসায়ীরা এদেশে সাতদিন থাকতে পারলেও আমরা থাকতে পারি মাত্র তিনদিন। যে কারণে আমরা ব্যবসায়িকভাবে চরম ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছি। গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়িক কাজ থাকলে দেশে ফিরে ভিসা লাগিয়ে আবারো যেতে হয়। এভাবে বাংলাদেশের ব্যবসায়িদের উপর চলা অবিচারের সুষ্ঠ প্রতিকার দাবি করেন তিনি।

এ ব্যপারে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহ মুজাহিদ উদ্দিন বলেন, আগামীকাল ২৪ জানুয়ারী মিয়ানমারে বর্ডার ট্রেডের উচ্চ পর্য়ায়ে একটি বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে যদি বৈঠক হয় তাদের সাথে আলোচনা করে এ বিষয়ে সুরহা বের করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন