parbattanews

বাংলাদেশ সীমানায় গুলি, বান্দরবান সীমান্তে সতর্কতা জারি

নিজস্ব প্রতিবেদক, বান্দরবান:

মিয়ানমারের সীমান্ত পুলিশের নির্যাতন থেকে বাঁচতে শতশত রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ বান্দরবানের নাইক্ষংছড়ির তুমব্রু সীমান্তে জিরো পয়েন্টে আশ্রয় নিয়েছে। সোমবার (২৮ আগস্ট) সকাল সাড়ে নয়টার দিকে বর্ডার গার্ড (বিজিবি) তাদের পুশব্যাক করতে গেলে মিয়ানমারের সীমান্ত বাহিনী বিজিপি গুলি ছুঁড়ে। এতে বাংলাদেশ সীমান্তের বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। স্থানীয়রা অন্তত ৮টি বিকট শব্দ শোনার কথা জানিয়েছেন। এঘটনায় তুমব্রু সরকারী প্রথমিক বিদ্যায়ল বন্ধ করে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

অন্যদিকে সোমবার সাড়ে ১২টার দিকে নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম সীমান্তে মিয়ানমারের সেনা বাহিনীর সদস্যরা মহড়া দিয়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয়রা। বিজিবি কর্মকতারা বলছেন, কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া সীমান্ত পরিস্থিতি স্বভাবিক রয়েছে।

এদিকে মিয়ানমারের উত্তরাঞ্চলের রাখাইন রাজ্যে আইনশৃঙ্ক্ষলা বাহিনীর সঙ্গে রোহিঙ্গাদের সংঘর্ষের ঘটনায় কক্সবাজারের পর বান্দরবানের সীমান্তে সতর্কতা জারি করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। সেইসঙ্গে বর্ডার অবজারভেশন পোস্টে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।

সোমবার সকালে হঠাৎ গুলির শব্দে জিরো পয়েন্টে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা এবং সীমান্তের বাংলাদেশিদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। আত্মরক্ষার্থে তারা দিগ্বিদিক ছুটাছুটি করতে থাকেন।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর অবস্থান সত্ত্বেও রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ ঠেকানো যাচ্ছেনা। রাতের অন্ধকারে বিভিন্ন পয়েন্টে ফাঁকি দিয়ে অনুপ্রবেশ করছে রোহিঙ্গারা। এ পর্যন্ত প্রায় ৮ হাজারেরও বেশী অনুপ্রবেশ করেছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়।

স্থানীয় আব্দুল হক জানান, গত শুক্রবার থেকে গুলির শব্দ পাচ্ছি। কিন্তু আজকের মতো গুলির শব্দ শুনিনি। গুলির শব্দে পরপরই বিজিবি সেখান থেকে স্থানীয়দের সরিয়ে নেয়।

স্কুলের সহকারী শিক্ষক মজিবুল হক জানান, গুলির শব্দে আতঙ্কিত হয়ে আমরা স্কুলের ছেলে-মেয়েদের পেছনের দরজা দিয়ে বের করে দেই।

ঘুমধুম ইউপি সদস্য মো. কামাল জানান, মিয়ানমার থেকে ৪টি গুলি বাংলাদেশ তুমব্রু বাজার, আরেকটি স্কুলে ও অন্য দুটি বাজারের পার্শ্ববর্তী ব্যাক্তি মালিকানাধীন বাগানে পড়ে। সকালে সীমান্তে কলাবাগান এলাকায় আশয়্র নেওয়া রোহিঙ্গা নারী-পুরুষদের সীমান্তে ওপারে পুশব্যাক করতে গেলে মিয়ানমার থেকে গুলি করা হয়। তবে বিজিবির পক্ষ থেকে এর কোনো জবাব দেওয়া হয়নি।

স্থানীয়রা জানান, গুলির সীমান্তে স্থানীয় বসবাসকারী ও তুমব্রু বাজারের ব্যবসায়ীদের মধ্য আতংঙ্খ দেখা দিয়েছে। পরে বিজিবি সতর্ক অবস্থান এবং সীমান্তে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।

ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ জানান, সীমান্তে অনুপ্রবশ ঠেকানো যাচ্ছেনা। শতশত রোহিঙ্গা জিরো পয়েন্টে এসে জড়ো হয়েছে। কুতুপালং ক্যাম্প থেকে তাদের খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে। এছাড়া আত্মীয়-স্বজনরা যে যার মত পারছেন জিরো পয়েন্টে অবস্থান নেয়া নারী-পুরুষদের সহযোগিতা করছেন।

জেলা প্রশাসক দিলীপ কুমার বণিক জানান, সীমান্ত দিয়ে যাতে রোহিঙ্গারা অনুপ্রবেশ করতে না পারে সেজন্য জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় প্রশাসনকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

মিয়ানমারের ঢেকুবনিয়া এলাকার রোহিঙ্গাদের গ্রামগুলোতে এখনও ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেয়া ও হামলার ঘটনা ঘটছে বলে জানিয়েছেন অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গারা।

রবিবার বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ-বিজিবির মহাপরিচালক (ডিজি) মেজর জেনারেল আবুল হোসেন এব ব্রিফিংয়ে মিয়ানমার বাহিনী এবং সশস্ত্র রোহিঙ্গাদের প্রতি ইঙ্গিত করে বলেছেন সীমান্তের জিরো লাইন ক্রস করলে সমুচিত জবাব দেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন।

সূত্র জানায়, এদিকে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞ থেকে বেঁচে আসা ছোট্ট সরু তুমব্রু খালের ওপারে নো-ম্যান্স ল্যান্ডে আশ্রয় নিয়েছে শত শত রোহিঙ্গা মুসলিম নারী, শিশু ও বৃদ্ধ।

বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকে আশ্রিতরা ক্ষুধা ও পিপাসায় কাতর হয়ে পড়েছেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। বিজিবির সশস্ত্র পাহারায় শরণার্থীদের কাছে খাবার ও পানি ঠিকমতো পৌঁছানো কঠিন হয়ে গেছে। খাল পার হয়ে ছোট ছোট শিশুদের সকাল থেকেই এপার থেকে পানি নিয়ে যেতে দেখা গেছে।

প্রসঙ্গত, গত বছর রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমার সেনা বহিনীর খুন, ধর্ষন, অগ্নি সংযোগ ও হত্যাযজ্ঞ বন্ধ করতে জাতিসংঘের কফি আনানের নেতৃত্বে গঠিত কমিশন বৃহস্পতিবার রোহিঙ্গাদের ওপর থেকে বিধিনিষেধ প্রত্যাহার এবং তাদের নাগরিকত্ব প্রদানের প্রতিবেদন প্রকাশের কয়েক ঘন্টার মধ্যেই নতুন করে হামলা ও হত্যাযজ্ঞ শুরু করে মিয়ানমার সরকার।

চলতি মাসের শুরুতে রাখাইন রাজ্য সেনা মোতায়েন করে অভিযান চালায় মিয়ানমার সরকার। এরই মধ্যে গ্রামের পর গ্রাম রোহিঙ্গাদের অবরুদ্ধ করে রাখা হয়।

এঘটনায় গত বৃহস্পতিবার মধ্যরাতের রোহিঙ্গা যোদ্ধারা অন্তত ২৫টি পুলিশ পোস্টে হামলা ও একটি সেনা ঘাঁটিতে ঢুকে পড়ার চেষ্টা করলে সংঘর্ষ হয়।

 

Exit mobile version