parbattanews

বাংলাদেশ সীমান্তে মিয়ানমারের সেনা সমাবেশ: ঢাকায় রাষ্ট্রদূতকে তলব

বাংলাদেশ সীমন্তে মোতায়েনকৃত মিয়ানমারের সেনা সদস্য

বাংলাদেশ-মিয়ানমার আন্তর্জাতিক সীমান্তে গত শুক্রবার ভোর থেকে মাছ ধরার ট্রলারে করে মিয়ানমারের সেনাদের সন্দেহজনক গতিবিধি লক্ষ করেছে বাংলাদেশ। সীমান্ত এলাকায় অন্তত তিনটি পয়েন্টে গত কয়েক দিনে মিয়ানমার সৈন্যদের উপস্থিতি দেখা গেছে।

বিনা উসকানিতে এভাবে সীমান্তের কাছে নতুন করে সেনা সমাবেশের প্রতিবাদে ঢাকায় মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত অং কিউ মোয়েকে রোববার তলব করা হয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। সন্দেহজনক এসব তৎপরতা বন্ধ করে দুই দেশের মধ্যে ভুল–বোঝাবুঝি অবসানের জন্য মিয়ানমারকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে বলেছে বাংলাদেশ।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মিয়ানমার সেলের মহাপরিচালক মো. দেলোয়ার হোসেনের দপ্তরে মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে তলব করা হয়।

মিয়ানমার অনুবিভাগের মহাপরিচালক মোহাম্মাদ দেলোয়ার হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে ডেকে এনে আমাদের উদ্বেগের বিষয়ে জানিয়েছি। এ ধরনের সন্দেহজনক আচরণ দুই দেশের কারও জন্য ভালো নয়।’

মিয়ানমার ও ঢাকার সম্পর্কে বিষয়ে যুক্ত সূত্রগুলো জানিয়েছে, সন্দেহজনক গতিবিধির মাধ্যমে এ সেনাসমাবেশ দুই দেশের মধ্যে ভুল–বোঝাবুঝি সৃষ্টির সুযোগ তৈরি করতে পারে। পাশাপাশি ২০১৭ সালের আগস্টে রাখাইনে গণহত্যা শুরুর প্রাথমিক পর্বে এভাবেই সেখানে সৈন্যদের জড়ো করেছিল মিয়ানমার সেনাবাহিনী।

ফলে ১১ তারিখ ভোরে শুরু হওয়া সেনাসমাবেশের কারণে রাখাইনে এখন যেসব রোহিঙ্গা রয়েছেন, তাদের মধ্যে নতুন করে ভীতি ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

জানা গেছে, রাখাইন রাজ্যের মংডু উপজেলার কিং চং, নাখুরা, চাই রি পিন, লা ইয়া, কিয়ক চং, কা নিউন ছুয়াং, মিন গা লার গি ও গার খু ইয়া প্রভৃতি দুই দেশের আন্তর্জাতিক সীমান্তে ট্রলার থেকে সৈন্যরা নেমেছেন। এর সীমান্ত পয়েন্টগুলোর মধ্যে অন্তত একটির দূরত্ব আন্তর্জাতিক সীমান্তের ২০০ মিটারের মধ্যে। ওই তিন পয়েন্টে মাছ ধরার ট্রলারের কাঠের নিচে বসিয়ে সৈন্যদের জড়ো করা হয়েছে। শুক্রবার ভোরে অন্তত এক দিনেই এক হাজারের বেশি মিয়ানমারের সৈন্যদের আনা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

রাখাইনের অভ্যন্তরীণ সূত্রগুলো পার্বত্যনিউজকে জানিয়েছে, কিছুদিন আগে আরাকান আর্মির হাতে আটক মিয়ানমারের দুই সেনা সদস্য ভিডিও বার্তায় রোহিঙ্গা নির্যাতনের কথা স্বীকার করায় মিয়ানমার সেনাবাহিনী বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, এই দুই সেনা সদস্য ইতোমধ্যেই নেদারল্যান্ডের আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের হেফাজতে পৌঁছে গেছে। বিষয়টি নিয়ে মিয়ানমারের ভেতরে তোলপাড় হয়।

এদিকে এখনো আরাকান আর্মির হাতে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাসহ বেশ কয়েকজন সেনা কর্মকর্তা এখনো আটক রয়েছে। তারাও যদি একই কায়দায় সীমান্ত পেরিয়ে গণহত্যার দায় স্বীকার করে তাহলে মিয়ানমার সরকার ও আর্মির ভাবমর্যাদার জন্য তা মারাত্মক হুমকি হতে পারে। এই প্রেক্ষাপটে আরাকান আর্মির হাতে আটক মিয়ানমার আর্মির সদস্যদের উদ্ধারের জন্য মিয়ানমার সশস্ত্র বাহিনীর কম্বিং অপারেশনের অংশ হিসেবে এই সেনা সমাবেশের ঘটনা ঘটতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

Exit mobile version