প্রত্যাবাসনে প্রস্তুত বাংলাদেশ: ২২ আগস্ট শুরু হচ্ছে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন!

fec-image

মিয়ানমার সেনা, বিজিপি, নাটালা বাহিনীর নির্যাতনের মূখে পালিয়ে এসে উখিয়া-টেকনাফে আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমার নাগরিকদের স্বদেশ প্রত্যাবাসন শুরু করার জন্য আশ্রয়ন কেন্দ্র এবং জেটিঘাট প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে। বাংলাদেশ যেকোন মূল্যে কাঙ্খিত এই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সফল করতে প্রস্তুত রয়েছে। অপরদিকে মিয়ানমারও তাদের বরণে প্রস্তুত আছে জানিয়েছেন প্রত্যাবাসন নিয়ে কর্মরত সংশ্লিষ্টরা। তবে জোর করে নয় রোহিঙ্গার সদিচ্ছার উপরই নির্ভর করে ফেরত পাঠানো হবে জানান শরনার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার।

জানা গেছে, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য শালবাগান ক্যাম্প ইনচার্জ অফিসের পাশে এবং কেরুনতলীতে প্রত্যাবাসন বিশেষ আশ্রয়ন কেন্দ্র তৈরি করা হয়েছে। প্রস্তুত করা হয়েছে প্রত্যাবাসন জেটিঘাট। এই প্রত্যাবাসন সফল করতে শরণার্থী ত্রাণ ও পূর্ণবাসন কমিশনারের লোকজনসহ ইউএনএইচসিআরের লোকজন কাজ করে আসছে। একইভাবে স্থলপথ দিয়ে প্রত্যাবাসনের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে প্রশাসন।

বুধবার সরজমিন উখিয়ার টিভি রিলে কেন্দ্রের পাশে ঘুমধুম ট্রানজিট ঘুরে দেখা যায়, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য এ ট্রানজিট প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ট্রানজিট ক্যাম্পে ১৬টি শেডের মধ্যে ৫৭টি কক্ষ রয়েছে। প্রত্যাবাসনের জন্য প্রস্তুত এমন ৫৭টি পরিবারকে সেখানে রাখা যাবে। তবে বিকেল ৫টা পর্যন্ত কোন পরিবারকে সেখানে আনা হয়নি।

ট্রানজিট ক্যাম্পে দায়িত্বরত আবুল কাশেম নামের শরনার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কার্যালয়ের একজন কর্মচারী ছাড়া আপাতত আর কাউকে পাওয়া যায়নি।

কুতুপালং ক্যাম্প ইনচার্জ রেজাউল করিম বলেন, প্রথম ধাপে যে ৩৪৫০জনের তালিকা করা হয়েছে এরা সবাই টেকনাফের বিভিন্ন ক্যাম্পের। তাদেরকে নৌপথ দিয়ে প্রত্যাবাসন করার সিদ্ধার্থ রয়েছে, কিন্তু বৈরী আবহাওয়ার কারণে কোন সময় সমুদ্র উত্তাল থাকে তাই স্থলপথ দিয়েও প্রত্যাবাসনের চিন্তা ভাবনা রয়েছে। আমাদের ট্রানজিট ক্যাম্প থেকে শুরু করে সীমান্ত পর্যন্ত সব রকমের প্রস্তুতি গ্রহণ করা আছে।

উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নিকারুজ্জামান চৌধুরী জানান, ২২ আগস্ট রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে নৌপথের পাশাপাশি স্থলপথকেও প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এই লক্ষ্যে প্রশাসনিক ভাবে প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে ট্রানজিটসহ সীমান্ত এলাকায়।

এদিকে গত বছর ১৫ নভেম্বর রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের প্রথম পদক্ষেপ ব্যর্থ হওয়ার পর আবারো জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তৎপরতার পর প্রাথমিকভাবে ৩হাজার ৪শ ৫০জনের এই প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু করতে যাচ্ছে সরকার। এই প্রক্রিয়াটি মুলত রোহিঙ্গাদের সদিচ্ছার উপরই নির্ভর করছে।

একটি গোপন সুত্র জানায়, প্রত্যাবাসনেরর তালিকাভুক্ত রোহিঙ্গাদের অনেকে মিয়ানমারে ফিরতে আগ্রহ থাকলেও রোহিঙ্গা ক্যাম্প নিয়ন্ত্রণকারী উগ্রপন্থী স্বশস্ত্র গ্রুপ আলেকিনের ভয়ে মূখ খুলতে পারছেনা। যেহেতু রোহিঙ্গারা এই গ্রুপটির কাছে জিম্মি এবং নিরাপত্তাহীন অবস্থায় রয়েছে। তাই তাদের কথার বাহিরে গেলে রাতে হামলার আশঙ্কা থাকে। এছাড়াও কতিপয় এনজিও কর্মকর্তাদের রহস্যজনক কর্মকাণ্ড রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন বিরোধী হিসেবে উৎসাহিত করা হচ্ছে বলেও বিভিন্ন সুত্রের দাবি।

২৬নং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের সিআইসি খালেদ হোসেন দুপুরে বলেন , ২০ আগস্ট ২১পরিবার এবং ২১ আগস্ট পর্যন্ত ২৩৫ পরিবারের মতামত নেওয়া হয়েছে। অনেকে মিয়ানমারে ফেরার জন্য মতামত দিয়েছে। কেউ প্রত্যাবাসন বিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত হলে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে। তাই কাঙ্খিত রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সফলভাবে সম্পন্ন করার জন্য আমরা প্রস্তুত রয়েছি।

শরণার্থী ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা (অতিরিক্ত সচিব) আবুল কালাম জানান, রোহিঙ্গারা আগের তুলনায় অনেক নমনীয় কারণ প্রত্যাবাসনের তালিকাভুক্ত কোন রোহিঙ্গা এবার কেউ ক্যাম্প ছেড়ে যায়নি। তারা মতামত দিয়েছে, আবার দাবি-দাওয়ার কথাও জানিয়েছে। এ পরিস্থিতিতে কেবল স্বেচ্ছায় যেতে চাইলেই রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন করা হবে। তবে সকল সমস্যা কাটিয়ে রোহিঙ্গারা তাদের নিজ দেশ মিয়ানমারে ফিরে যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: প্রত্যাবাসনে প্রস্তুত বাংলাদেশ, শুরু হচ্ছে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন