parbattanews

বাইশারীর গহীন অরণ্যে অবৈধ ইট ভাটা, নষ্ট হচ্ছে পরিবেশের ভারসাম্য, উজাড় হচ্ছে বনাঞ্চল

Et-Vata (2) copy

বাইশারী প্রতিনিধি:

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বাইশারী ইউনিয়নের গহীন অরণ্য ১নং ওয়ার্ড কাগজি খোলা ও পার্শ্ববর্তী ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড রইগার ঝিরি সাপের ঘাটা নামক স্থানে অবৈধভাবে গড়ে তোলা হয়েছে দুইটি ইট ভাটা। বনভূমির পাহাড় কাটা মাটি দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে ইট। জ্বালানী হিসেবে যোগান দেওয়া হচ্ছে সংরক্ষিত বনাঞ্চলের মূল্যবান গাছগাছালি।

বিগত আট বছর ধরে ওই ইট ভাটার আশেপাশে নির্বিচারে বনজঙ্গল ও বনের কচিকাঁচা গাছ, পাহাড় কর্তন সহ নানাবিধ তাণ্ডবে প্রাকৃতিক বনভূমি ন্যাড়া ভূমিতে পরিণত হলেও দেখার কেউ নেই। ইট ভাটার বিষাক্ত কালো ধোঁয়ায় আক্রান্ত স্কুল পড়ুয়া শিশু ও এলাকাবাসী।

প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দেওয়ার পরও বহাল তবিয়তে চালিয়ে যাচ্ছে অবৈধ ইট তৈরি কার্যক্রম। গ্রামবাসী ও স্কুল পরিচালনা কমিটির অভিযোগ অবৈধ ইট ভাটার মালিক প্রভাবশালী হওয়ায় বনবিভাগের দুর্নীতি পরায়ন কর্তব্যরত ব্যক্তিদের ম্যানেজ করায় এ অবৈধ ইট ভাটার কার্যক্রম বন্ধ হচ্ছে না। এ দাবি এলাকার সুশীল সমাজের।

সরজমিনে বাইশারী ইউনিয়নে ১নং ওয়ার্ড কাগজি খোলা ঘুরে দেখা যায়, নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা সদর থেকে আনুমানিক ৪০ কি.মি উত্তরে ফাঁসিয়াখালী সীমান্ত সংলগ্ন ১নং ওয়ার্ড কাগজি খোলা ও পার্শ্ববর্তী ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নে ১নং ওয়ার্ড সাপের ঘাটা এলাকায় দুইটি অবৈধ ইট ভাটা অবস্থিত। যাহা সম্পূর্ণ টিনের চিমনি দিয়ে তৈরী।

ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, শ্রমিকেরা পাহাড় কেটে ইট তৈরি ও মাটি মজুদ করছে। আরও কিছুদুর পূর্ব উত্তরে গিয়ে দেখা যায়, বনাঞ্চলের শত শত মণ লাকড়ি মজুদ করা হয়েছে। ইট ভাটায় কর্মরত দুই শ্রমিকের নিকট জানতে চাইলে কি দিয়ে ইট পুড়ানো হয় তারা অকপটে স্বীকার করে বলেন, লাকড়ি ছাড়া আর কি দিয়ে ইট পুড়ানো হবে। কয়লার কথা জিজ্ঞেস করলে তারা বলেন, এখানে এত লাকড়ি মজুদ রয়েছে কয়লার কোন প্রয়োজন হয় না।

কক্সবাজার পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক সর্দার সরিফুল ইসলাম জানান, সংশোধিত আইনে সংযোজিত পরিবেশ ও জীব বৈচিত্র সংরক্ষণ এবং উন্নয়নের স্বার্থে আধুনিক প্রযুক্তির ইট ভাটা অর্থাৎ ঝিকঝাক কিলন, টেনেল কিলন অথবা অনুরূপ উন্নত মানের প্রযুক্তিতে ইট ভাটা স্থাপন করতে হবে। কৃষি জমি অথবা পাহাড় টিলা থেকে মাটি কেটে বা সংগ্রহ করে ইটের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না। কর্তৃপক্ষের অনুমোদনক্রমে ইট তৈরি করার জন্য পুকুর, খালবিল, নদ-নদী, চরাঞ্চল বা পাহাড় কেটে মাটি সংগ্রহ করা যাবে না। ব্যবহার কমানোর জন্য কমপক্ষে ৫০ শতাংশ ফাঁপা ইট তৈরি করতে হবে। নির্ধারিত মান মাত্রায় কয়লা ব্যবহার করতে হবে। তিনি আরও বলেন উপজেলা সদর সরকারী বা ব্যক্তি মালিকানাধীন বন, অভয়ারণ্য বাগান, কৃষি জমি, পরিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা, নিষিদ্ধ এলাকা সীমা রেখা থেকে নূন্ন্যতম ১ কি.মি দূরত্বের মধ্যে ইট ভাটা করা যাবে না।

পার্বত্য জেলায় পরিবেশ উন্নয়ন কমিটির নির্ধারিত স্থান ছাড়া অন্য কোন স্থানে ইট ভাটা তৈরি সম্পূর্ণ নিষেধ রয়েছে। তিনি আরও জানান, বান্দরবানের বিভিন্ন স্থানে প্রায় ২৬টি ইট ভাটা রয়েছে। যার একটিও নীতিমালায় পড়েনা। ইট ভাটার মালিক ডুলাহাজারা এলাকার বাসিন্দা নাজমুল হক পিয়ারো বলেন, তিনি ইট ভাটার ব্যাপারে হাই কোর্টে রিট করেছেন। অপর মালিক শামশু উদ্দিন বলেন, ইট ভাটা তৈরির কোন অনুমতি তার কাছে নেই।

স্থানীয়দের অনেকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে পার্বত্যনিউজকে জানায়, ইট ভাটার বৈধতাতো দূরের কথা, প্রভাবশালীদের ম্যানেজের মাধ্যমে দীর্ঘকাল যাবৎ এ কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। তারা আরও বলেন, ইট ভাটার মালিক প্রভাবশালী হওয়ায় তার বিরুদ্ধে মুখ খুলে কথা বলার সাহস এখানকার সাধারণ মানুষের নেই।

সরজমিনে আরও দেখা যায়, ইট ভাটার মাত্র পাঁচশত গজের ভিতর রয়েছে একটি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, তিনশত গজের ভিতর রয়েছে পুলিশ ফাঁড়ি, ছয়শত গজের মধ্যে রয়েছে মসজিদ, মাদ্রাসা ও বৌদ্ধ বিহার। আর চতুর্দিক রয়েছে প্রাকৃতিক বনভূমি ও জনসাধারণের বসবাস। ইট ভাটার কালো ধোঁয়ায় স্কুল ছাত্র-ছাত্রীরা অনেকেই এখন অসুস্থ বলেও জানা যায়।

বাইশারী ইউপি চেয়ারম্যান মো. আলম কোম্পানী বলেন, ১নং ওয়ার্ড এলাকায় একটি ইট ভাটা রয়েছে। তার কাগজপত্র আছে কিনা তিনি কিছুই জানেন না। তিনি আরও বলেন, এ ইট ভাটা শুধু তার আমলে নয় বিগত দিনেও ছিল এবং মৌসুম শুরু হলে প্রতি বছর ইট ভাটার কার্যক্রম শুরু হয়।

এ বিষয়ে বনবিভাগের নাইক্ষ্যংছড়ি ও সাঙ্গু রেঞ্জের দায়িত্বপ্রাপ্ত রেঞ্জ কর্মকর্তা এসএম হারুন জানান, বিষয়টি বনবিভাগের নয়। তারপরও তিনি খতিয়ে দেখবেন।

Exit mobile version