parbattanews

বাইশারী বাজারের দোকানদারকে ইয়াবা দিয়ে ফাঁসানোর ঘটনায় ব্যবসায়ীদের প্রতিবাদ সমাবেশ

পার্বত্য বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বাইশারী বাজারের মোঃ শহিদুল্লাহ নামের এক দোকানদারকে ইয়াবা দিয়ে ফাঁসানোর ঘটনায় ব্যবসায়ীদের উদ্যোগে প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোমবার (৩০ নভেম্বর) সকাল ১০টায় বাইশারী বাজার চত্বরে এই প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

বাইশারী বাজার পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম বাহাদুরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তারা বলেন, পানের দোকানদার মোঃ শহিদুল্লাহ একজন মানসিক রোগী। সে কোনদিন ইয়াবা ব্যবসায় জড়িত থাকতে পারে না। তাকে পূর্ব শত্রুতার জের ধরে লম্বাবিল এলাকার বাসিন্দা নব্য কোটিপতি নামধারী মোঃ হারুনুর রশিদ নামের এক ব্যক্তি কৌশলে তার তালাবিহীন ক্যাশ ড্রয়ারে ইয়াবা ঢুকিয়ে দিয়ে ফাঁসিয়ে দিয়েছে।

ব্যবসায়ীরা বলেন, গত ২৫ নভেম্বর বিকালে শহিদুল্লাহ’র বোনের জামাই মঞ্জুর আলমের সাথে নব্য কোটিপতি হারুন গরুর খড় ক্রয় করে টাকা না দেওয়ার বিষয় নিয়ে বাকবিতান্ডা হলে মোঃ শহিদুল্লাহর বোনের জামাই মঞ্জুর আলমকে মোঃ হারুন প্রকাশ্যে মারধর করে এবং বাজার থেকে তুলে নেওয়ার চেষ্টা করে। ঐ সময় মোঃ শহিদুল্লাহ হারুনের মারধর থেকে বোনের জামাইকে বাঁচাতে গিয়ে তার সাথে ধস্তাধস্তি হয় ও কিলঘুষি মারে। তখন হারুন ২৪ ঘন্টার ভিতরে যে কোন কৌশলে মোঃ শহিদুল্লাহকে দেখে নেওয়ার হুমকি প্রদান করে।

এছাড়া স্থানীয় অনেকের কাছে হারুন ফাঁসিয়ে দেওয়ার বিষয়টি মোবাইল ফোনেও জানায়। যার ফলে গত ২৬ নভেম্বর শহিদুল্লাহর দোকানে তার অগোচরে তালাবিহীন ক্যাশ ড্রয়ারে ইয়াবা ঢুকিয়ে দিয়ে সটকে পড়ে। বিকাল ৪টা৪৫ মিনিটে পুলিশ গোপন সংবাদের ভিত্তিতে খবর পেয়ে সরাসরি শহিদুল্লাহর দোকানে গিয়ে তালাবিহীন ক্যাশ ড্রয়ার থেকে ইয়াবা গুলো উদ্ধার করে এবং তাকে আটক করে বলে ব্যবসায়ীরা জানান। সেই দিন থেকে মোঃ হারুন বাইশারী থেকে উধাও হয়ে যায়।

বাইশারী বাজারের উপস্থিত শত শত ব্যবসায়ী প্রতিবাদ সমাবেশে ইয়াবা দিয়ে ফাঁসিয়ে দেওয়ার ঘটনার বিষয়টি সুষ্ট তদন্ত ও নব্য কোটিপতি মোঃ হারুন কে আইনের আওতায় এনে গ্রেপ্তারের দাবি জানান এবং উক্ত ঘটনার তীব্র নিন্দা জানান।

জসিম উদ্দিনের পরিচালনায় সমাবেশে অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, নাইক্ষ্যংছড়ি প্রেসসহ সভাপতি অবসর প্রাপ্ত সেনা সার্জেন্ট আব্দুল হামিদ, ইউপি সদস্য আবু তাহের, ব্যবসায়ী মোঃ ইলিয়াছ, মোঃ জসিম উদ্দিন, আব্দুল আলীম, মোঃ ইউসুফ, আব্দু শুক্কুর প্রমুখ।

সভাপতির বক্তব্যে জাহাঙ্গীর আলম বাহাদুর বলেন- উক্ত ঘটনায় আমি নিজেও হতবাক। কিভাবে সরাসরি পুলিশ শহিদুল্লাহর ক্যাশ ড্রয়ার থেকে ইয়াবা গুলো পেল? তিনিও উক্ত ঘটনার সুষ্ট তদন্ত পূর্বক এই রহস্য বের করার দাবি জানান। পাশাপাশি ইয়াবা দিয়ে অসহায় দোকানদারকে ফাঁসানোর ঘটনায় সকল ব্যবসায়ীর পক্ষ থেকে তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করেন এবং ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তার জন্য সকলকে নিজ দোকানের প্রতি খেয়াল রাখা ও বর্তমান শুস্ক মৌসুমে বাজার পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা ও আগুন থেকে সাবধানে থাকার আহবান জানান।

মোঃ শহিদুল্লাহ’র বড় ভাই মোঃ আব্দু শুক্কুর জানান, আমার ভাই শহিদুল্লাহ আটক হওয়ার পর নাটের গুরু কোটিপতি দাবীদার মোঃ হারুন বাইশারী ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বার রমজান আলম ও বিভিন্ন লোকজনের মাধ্যমে আটক শহিদুল্লাহকে ছাড়িয়ে আনতে সমস্ত খরচাদি সে বহন করবে এবং বিষয়টি নিয়ে আর বাড়াবাড়ি না করে চুপ থাকা এবং তাকে এ বিষয়ে ক্ষমা করে দেওয়ার প্রস্তাব দেন। শহিদুল্লাহর পরিবার মোঃ হারুনের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় পুরাতন ইয়াবা ব্যবসায়ীদের সাথে আঁতাত করে বাকী ভাইদেরও ফাঁসিয়ে দেওয়ার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে বলে জানান আব্দু শুক্কুর।

কে সেই মোঃ হারুনুর রশিদ! লম্বাবিল এলাকার মৃত আবুল হোছনের পুত্র নব্য কোটিপতি দাবীদার হারুনুর রশিদের বিষয়ে সরজমিনে অনুসন্ধান করতে গিয়ে জানা যায়, যিনি গত ৫ বছর আগেও চায়ের দোকানের কর্মচারী ছিল। পরবর্তীতে সে বাইশারী বাজারে চায়ের দোকান দেয়। কিছুদিন পর চায়ের দোকান গুটিয়ে নিয়ে চোরা পথে কাঠ পাচার শুরু করে। বর্তমানে নিজেকে চট্টগ্রাম শহরের আবুল খায়ের গ্রুপের ঠিকাদার দাবি করে এলাকায় দাপটের সাথে ঘুরে বেড়ায়।

গত তিন বছরে সে বাইশারী বাজারে অর্ধকোটি টাকা দিয়ে দোকান প্লট ক্রয়, রাবার বাগান, জায়গা-জমি ক্রয় এবং বাইশারী বাজারে ইলেকট্রনিক’স দোকান, মুরগির খামার সহ প্রায় কোটি টাকারও বেশি জানা-অজানা সম্পদের মালিক বনে যায়। এ নিয়ে এলাকার লোকজনও বলে বেড়ায়, সে অল্প দিনে কিভাবে কয়েক কোটি টাকার মালিক হয়? উক্ত বিষয় গুলো বাইশারী বাজার সহ শত শত মানুষের মুখে বলতে শোনা যায়। স্থানীয়দের দাবী, মোঃ হারুনুর রশিদের বিষয়টি গোয়েন্দা সংস্থা সহ দুদকের নজরে আসলে শীগ্রই মূল রহস্য বের হয়ে আসবে।

Exit mobile version