parbattanews

বাঘাইছড়িতে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের চেষ্টা

a1 copy

সাজেক প্রতিনিধি:

বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। এ দেশের ইতিহাস ও সংস্কৃতি যুগ যুগ ধরে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির স্বাক্ষর বহন করে আসছে। ধর্মীয় বিশ্বাসের দিক থেকে ভিন্নতা থাকলেও এ দেশের হিন্দু- মুসলমান-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান সুদৃঢ় সামাজিক বন্ধনে আবদ্ধ। সমতলে বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের পূজা উৎসব হিন্দু-মুসলমান মিলেমিশে উপভোগ করে।

অনুরুপ ভাবে পার্বত্য এলাকায় বসবাসরত শান্তি সম্প্রীতি প্রিয় সকল সম্প্রদায়ের লোকজন বসবাস করে আসছে আবহমান কাল থেকে। পার্বত্য এলাকাতেও একইভাবে বৈসাবি উৎসবও সকল সম্প্রদায়ের লোকজনের অংশগ্রহণে আনন্দঘন পরিবেশে পালিত হয়ে থাকে, কিন্তু শান্তি সম্প্রীতি প্রিয় লোকদের মাঝে উগ্র সাম্প্রদায়িকতার ছোবল দেওয়ার জন্য লিপ্ত থাকে কিছু স্বার্থান্বেষী মহল। আর এসব স্বার্থান্বেষী মহল সম্প্রীতি প্রিয় সাধারণ জনগণের মাঝে সাম্প্রদায়িকতার বিষ বাষ্প ছড়িয়ে দিয়ে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টায় থাকে।

তারই অংশ হিসেবে শান্তি সম্প্রীতি প্রিয় বাঘাইছড়িবাসীর মাঝে হঠাৎ করে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের চেষ্টায় চালাচ্ছে। সাম্প্রদায়িকতার বিষ বাষ্প ছড়িয়ে দিয়ে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের লক্ষ্যে কিছু স্বার্থান্বেষী মহল তাদের নিজস্ব অনলাইন ওয়েব পোর্টালের মাধ্যমে অপপ্রচার করে পাহাড়ি বাঙ্গালীর মাঝে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টির পায়তারা করছে। আর এসবের বিস্তারিত তথ্য না নিয়ে অনাকাঙ্কিত কিছু হলুদ সাংবাদিকও এমন রিপোর্ট প্রকাশ করে থাকে। আর এসব ওয়েব পোর্টালের ফেইসবুক পেজ থেকে উগ্রসাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর লোকেরা ফেসবুকে শেয়ার করে লোকজনের মাঝে আতঙ্ক সৃষ্টি করছে।

সম্প্রতি কয়েকটি অনলাইন ওয়েব পোর্টাল বাঘাইছড়িতে সাম্প্রদায়িক উস্কানীর লক্ষ্যে নিউজ প্রকাশ করেছে, যে বাঘাইছড়ি দুইটিলা নামক এলাকায় নিরাপত্তাবাহিনীর মদদে সেটলাররা কামিনি কুমার চাকমা (লাম্বা পেদা) নামে এক কৃষকের প্রায় ১২০০ কলা গাছ কেটে সাবাড় করে দিয়েছে। কেটে দেওয়া বাগানের ছবিও প্রকাশ করেছে ওইসব ওয়েব পোর্টালে।

সরেজমিনে পরিদর্শনে গেলে দেখা যায় দুইটিলা নামক এলাকায় প্রকাশিত ছবির মত কোন বাগান চোখে পড়ার মত নেই। নিরাপত্তাবাহিনীর দুইটিলা ক্যাম্পের হেলিপেড এ্যারিয়া থেকে ১০-২০গজ দূরত্বে ৭-৮টির মতো কলাগাছ ও আগাছাসহ কাটা রয়েছে। অথচ অন্য কোন এলাকায় সংঘটিত ঘটনার ছবি প্রকাশ করে স্বার্থান্বেষী মহল তাদের কয়েকটি নিজস্ব অনলাইন ওয়েব পোর্টালের মাধ্যমে শান্ত বাঘাইছড়িকে অশান্ত করার চেষ্টা চালাচ্ছে।

এবিষয়ে নিরাপত্তাবাহিনীর সাথে যোগাযোগ করলে জানায়, ক্যাম্পের নিরাপত্তার জন্য ক্যাম্প ও হেলিপ্যাডের আশেপাশের এলাকার আগাছা পরিস্কার করা হয়েছে। এতে ৫-৮টির মতো কলাগাছ কাটা হয়েছে। বিষয়টিকে এখন কিছু স্বার্থান্বেষীমহল তাদের হীন স্বার্থ উদ্ধার করতে অপপ্রচার করছে এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের পায়তারা করছে। অপপ্রচারের মাধ্যমে সাধারণ জনগণকে নিরাপত্তা বাহিনীর মুখোমুখি অবস্থান করিয়ে নিজেদের স্বার্থ উদ্ধারের চেষ্টা করছে। এতে নিরাপত্তাবাহিনী হুঁশিয়ারী করে বলেন, এলাকায় কোন সন্ত্রাসী গোষ্ঠী বা স্বার্থান্বেষীমহল সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করার ষড়যন্ত্র করলে তাদের কঠোর হাতে দমন করা হবে।

এবিষয়ে বাঘাইছড়ি থানার অফিসার ইনচার্জ আমির হোসেন বলেন, বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুক ও কিছু অনলাইন ওয়েব পোর্টালে দেখার পর পুলিশ সুপারের নির্দেশে আমি ঘটনাস্থলে যাই। সেখানে গিয়ে ঘটনার কোন সত্যতা পাওয়া যায়নি। ওই এলাকায় নিরাপত্তাবাহিনীর যে ক্যাম্প রয়েছে তাদের নিরাপত্তার জন্য আশেপাশে আগাছা পরিস্কার করেছে। ক্যাম্প এ্যারিয়ার পাশে কামিনি কুমার চাকমার জায়গা রয়েছে, ক্যাম্প সংলগ্ন হওয়ায় ক্যাম্প থেকে কামিনি চাকমাকে কয়েকটি কলাগাছ কাটতেও বলা হয়েছিল। কামিনি চাকমা না কাটায় নিরাপত্তাবাহিনী ৫-৭টি কলাগাছ কেটেছে। সেখানে আমি কামিনি কুমার চাকমার সাথে কথা বলেছি, সে জানায় আমাকে ক্যাম্প থেকে আগে বলেছিল কয়েকটা কলাগাছ কাটতে আমি তাদেরকে বলেছি তাদের প্রয়োজনমত কেটে নিতে। তবে কামিনি কুমার চাকমার জায়গাতে তেমন বেশি কলা বাগান নেই।

এবিষয়ে বাঘাইছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান বড়ঋষি চাকমা বলেন, রাষ্ট্রের প্রয়োজনে কলাগাছ কাটতেই পারে এনিয়ে এতো তোলপার কিসের। আমার মতে নিরাপত্তাবাহিনী আইন প্রয়োগকারী সংস্থা হয়ে অন্যায় করতে পারে না। বিষয়টিকে নিয়ে কিছু স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী অপপ্রচার করে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করার চেষ্টা করছে। বাঘাইছড়িতে যেন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট না হয় এব্যাপারে সকলকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।

উল্লেখ্য স্বার্থান্বেষী মহল তাদের নিজস্ব কয়েক’টি অনলাইন ওয়েব পোর্টালে গত মাসে একই এলাকায় নিরাপত্তাবাহিনী নতুন হ্যালিপেড তৈরি করতে জায়গা নির্বাচন করতে জায়গা খুঁজলে, ষড়যন্ত্র করে লোকজনকে উত্তেজিত করার অপপ্রয়াস চালায়। সম্প্রতি সাজেকের দুর্গম গ্রামে খাদ্যাভাব দেখা দিলে তা নিয়েও কথিত ওয়েব পোর্টাল বিভ্রান্তি মূলক নিউজ প্রকাশ করে। নিউজে শিরোনাম করা হয় “সাজেকে খাদ্যাভাবে ৯ জনের মৃত্যু, ত্রাণ বিতরণে জেলাপ্রশাসনের বাধা”। নিউজ প্রকাশের দুইদিন পর অবশ্য নিউজটি মুছে দেয় ওয়েব পোর্টালটি।

Exit mobile version