parbattanews

বাঘাইছড়ি হত্যাকাণ্ডে নিহত ৫ পরিবারে নেই ঈদের আনন্দ

রাঙামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলার গত ১৮ মার্চে পঞ্চম উপজেলা পরিষদ ভোট গ্রহণ শেষে নির্বাচনী সরঞ্জাম নিয়ে ফেরার পথে নয় কিলো নামক স্থানে সন্ত্রাসীদের ব্রাশ ফায়ারে নিহত হয় আট জন। আহতদের মধ্য ফুলকুমারী চাকমা ঢাকা সিএমএসে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে। তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ নিতে হবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা সিএমএস কর্তৃপক্ষ।

ঈদকে সামনে রেখে ধনী-গরীর সবাই যার যার সার্মত্য অনুযায়ী কেনা কাটা নিয়ে ব্যস্ত। সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায় বাঘাইছড়িতে নিহত পরিবারগুলোর মধ্য রয়েছে এখনো শোকের ছায়া। রমজান উপলক্ষে ধর্মীয় রীতি-নীতি অনুসারে খতমে কোরআন পাঠ, তজবিহ, তাহলিলসহ নিহতের রুহের মাগফেরাত কামনা করছেন পরিবারগুলো।

নিহত আনসার ভিডিপি বিলকিস আক্তারের দুই মেয়ে। বড় মেয়ে জান্নাতুল নুর (১৭), ছোট মেয়ে জান্নাতুল মাওয়া (৪)। গত তিন বছর আগে তাদের রেখে চলে যায় তার বাবা। ঈদের জামা কাপড় কেনাকাটা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে অঝোরে চোখের পানি পড়তে থাকে দু’বোনের। কোন উত্তর দেয়নি। তারা শুধু বলে, তারা মায়ের জন্য তারা নামাজ পড়ে দোয়া করছেন।

নিহত আবু তৈয়ব। তিনি নিউলাল্যঘোনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ছিলেন। তারও দুই মেয়ে নুসরাত তৈয়ব তুবা (১), ইসরাত তৈয়ব ইকরা (৪)। তার স্ত্রী খালেদা আক্তার রুমির সাথে আলাপচারিতায়  তিনি কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।

তিনি বলেন, আমার মেয়ে দু’টি নিয়ে কিভাবে বাঁচবো? মেয়ে দুটি বাবা বাবা বলে কান্নাকাটি করে ছবি নিয়ে দৌড়াদোড়ি করে। তার বাবা বেঁচে থাকলে তাদের নিয়ে ঈদের কেনাকাটা করতো। তাদের অভাবটুকু আমিতো কখনো পূরণ করতে পারবো না।

নিহত জাহানারা বেগম আনসার ভিডিপি সদস্য। তার দুই ছেলে, দুই মেয়ে। বড় ছেলে মো. রুবেল (২৫), তাসলিমা আক্তার (২০), রোজিনা আক্তার (১৮) ও মো. মোশারফ (১৬)। তাদের বাড়িতে গিয়ে কথা হয় ছোট ছেলে মোশারফের সাথে।

তিনি বলেন, আমার মায়ের জন্য সবাই নামাজ পড়ে দোয়া করছি। ঈদের জামা কাপড় কেনা হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখনো কেনা হয়নি বাবার সাথে গিয়ে কিনবো। আমার মা নেই, আমরা মাকে ছাড়া কিভাবে ঈদ করবো? আমার মায়ের হত্যাকারিদের বিচার চাই।

নিহত মো. আমির হোসেন। তিনি কিশালয় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক। তার এক ছেলে দুই মেয়ে। বড় ছেলে রবিউল হাসান (১৯), আসমাওল হুসনা (১৩), আবিরা হুসনা (৪ মাস)। তার স্ত্রী শিউলি আক্তার। তাদের বাড়িতে গিয়ে কথা হয় তাদের সাথে। তারা এখনো শোকসন্তপ্ত। আবিরাকে জিজ্ঞাসা করা হয় ঈদের জামা কাপড় নিয়েছে কিনা? উত্তরে বলে, না। আমার বাবা নাই, আমার বাবা বেঁচে থাকলে অনেক আগে জামা-কাপড় কিনতাম। আমার বাবার জন্য রোজা থেকে নামাজ পড়ে দোয়া করছি বলতে বলতে তার সবাই কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।

নিহত আনসার ভিডিপি আল আমিনের বাবা মো. সেলিম ও তার মা কুলছুমা বেগম। কথা হয় তাদের সাথে। তারা বলেন, আমার ছেলেকে ছাড়া কিভাবে ঈদ করবো আমরা? আমার ছেলের স্বপ্নটা পূরণ হলো না। বলতে বলতে তারা বিলাপ করতে থাকেন। তারা তার ছেলে হত্যার বিচার চায়।

নিহত পরিবারগুলোতে ঘুরে দেখা যায় ঈদের জামা-কাপড় কেনাকাটা করেনি। তারা কেউ মাকে হারিয়েছে, আবার কেউ বাবাকে হারিয়েছে, কেউ হারিয়েছে ভাইকে! পরিবারগুলোতে নেমে এসেছে যেন কালো অধ্যায়।

Exit mobile version