বাঙালহালিয়া হতে অপহরণের ৬৩ ঘণ্টা পর মুক্তি পেলেন রাউজানের খামারী নুরুল আলম

fec-image

রাঙ্গামাটি জেলাধীন রাজস্থলী উপজেলার বাঙালহালিয়া এলাকাধীন বাংগালহালিয়া ধলিয়া মুসলিম পাড়া " মিম কৃষিজীবী খামার" হতে অপহরণের ৬৩ ঘণ্টা পর খামারী নুরুল আলমকে (৩৬) ছেড়ে দিয়েছে সন্ত্রাসী গোষ্ঠি। সোমবার(১৩ সেপ্টেম্বর) বিকাল সাড়ে চারটার দিকে রাঙ্গুনিয়ার পদুয়া ইউনিয়নের এলাকার গহীন পাহাড়ের অপহরণকারীদের আস্তানা থেকে তাকে মুক্তি দেওয়া হয় বলে জানান চন্দ্রঘোনা থানার ওসি ইকবাল বাহার চৌধুরী।

এরপর নুরুল আলমকে হেফাজতে নেয় চন্দ্রঘোনা থানা পুলিশ। সোমবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে এই রিপোর্ট লেখার সময় ভুক্তভোগী নুরুল আলম চন্দ্রঘোনা থানায় পুলিশ কর্মকর্তাদের কাছে ঘটনার বিবরণ দিচ্ছিলেন বলে থানা সূত্রে জানা যায়। চন্দ্রঘোনা থানা পুলিশের নানামুখী তৎপরতায় নুরুলকে জীবিত উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ভুক্তভোগীর পরিবারের সদস্যরা।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, রাঙ্গুনিয়া থানাধীন পদুয়া এলাকার একটি সন্ত্রাসী গ্রুপ এ ঘটনার মূল হোতা। এই দলে একাধিক পাহাড়ি সন্ত্রাসীও আছে বলে পুলিশ জানান।

চন্দ্রঘোনা থানার ওসি ইকবাল বাহার চৌধুরী বলেন, পুলিশের নানামুখী তৎপরতার কারণে নুরুলকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছে ওই সন্ত্রাসী গোষ্ঠি। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে আমরা পাশের রাঙ্গুনিয়া থানাধীন পদুয়া এলাকার একজন দাগী সন্ত্রাসীকে এ ঘটনার নেপথ্য নায়ক বলে সন্দেহ করি। তাকে আমরা গত দুইদিন পর্যবেক্ষণ করি।

‘এরপর পদুয়ায় তার বিভিন্ন আস্তানায় অভিযান চালায় পুলিশ। বাদিপক্ষের লোকজনও শুরু থেকে ওই সন্ত্রাসীকে সন্দেহ করে আসছিল। মামলার এজাহারেও তার নাম উল্লেখ আছে। নুরুলকে ছেড়ে দিতে ওই সন্ত্রাসী পরিবারের সদস্যদের নানাভাবে চাপ দিতে থাকে বাদিপক্ষ। একপর্যায়ে নুরুল আলমকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয় অপহরণকারী এই দাগী সন্ত্রাসীর সহযোগীরা।’ বলেন ওসি ইকবাল।

ভুক্তভোগীর ভাগিনা আব্দুল আজিজ বলেন, নানা কৌশলে আমার মামাকে অপহরণকারীদের কাছ থেকে মুক্ত করেছে পুলিশ।

এর আগে গত শুক্রবার (১০ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাত ১টার দিকে ১০ থেকে ১২ জন সশস্ত্র সন্ত্রাসী চন্দ্রঘোনা থানার বাঙ্গালহালি ধলিয়া মুসলিম পাড়ার ‘মিম কৃষিজীবী খামারে’ ঢুকে নুরুল আলমকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। এদিকে নুরুল আলমকে দ্রুত উদ্ধারের সহায়তা চাইতে সোমবার সকাল দশটার দিকে তারা র‌্যাব-৭ এর হাটহাজারী কার্যালয়ে যান ভিকটিমের পরিবারের সদস্যরা।

জানা যায় , গত রোববার সন্ধ্যা ৭টার দিকে নুরুল আলমের মুঠোফোন থেকে পরিবারের সদস্যদের কল করে ১ কোটি টাকা মুক্তিপণ দাবি করে সন্ত্রাসীরা। সোমবার ভোর পাঁচটার দিকেও অজ্ঞাত স্থান থেকে ভিকটিমের মুঠোফোন থেকে তার পরিবারের কাছে ফোন করে মুক্তিপণ দাবি করে অজ্ঞাত সন্ত্রাসীরা। মুক্তিপণ না দিলে নুরুল আলমকে হত্যা করা হবে বলেও হুমকি দিয়েছিল তারা।

অপহরণের শিকার মো. নুরুল আলমের গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার বাগোয়ান ইউনিয়নের পাঁচখাইন গ্রামে। তার বাবার নাম মৃত ফয়েজ আহমদ। তারা তিন ভাই, তিন বোন। নুরুল আলমের সংসারে আছে স্ত্রী, দুই কন্যা এবং এক পুত্র সন্তান।

অপহরণের ঘটনায় নুরুল আলমের ভাই মো. কুতুব উদ্দিন সোমবার দিবাগত রাত ১টার দিকে অজ্ঞাতনামা ১০ থেকে ১২জন সন্ত্রাসীকে আসামি করে চন্দ্রঘোনা থানায় মামলা দায়ের করেছেন।

এজাহারে বলা হয়, অপহৃত নুরুল আলম (৩৬) রাজস্থলী উপজেলার বাঙ্গালহালিয়া ইউনিয়নের ধলিয়া মুসলিম পাড়া গ্রামে ‘মিম কৃষিজীবী খামারে বেতনভুক্ত কর্মচারী হিসেবে দেখাশুনা করেন। গত ১০ সেপ্টেম্বর বেলা ২টা থেকে খামারে অবস্থান করছিলেন। গত ১১ সেপ্টেম্বর দিবাগত রাত ১টার দিকে অজ্ঞাতনামা ১০/১২ জন সশস্ত্র সন্ত্রাসী খামারে ঢুকে নুরুল আলমকে অপহরণ করে নিয়ে যায়।

ঘটনাটি ১২ সেপ্টেম্বর ভোর পাঁচটার দিকে বাদীকে জানান ভুক্তভোগীর সাথে থাকা খামারের কেয়ারটেকার সাইফুল ও নুরুল আলমের ভাগিনা আবদুল আওয়াল। ১২ সেপ্টেম্বর ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে ভুক্তভোগীর মুঠোফোন থেকে বাদীর বড়ভাই কাতার প্রবাসী মো. নুর মোহাম্মদের মুঠোফোনে কল করা হয়। এসময় নুরুল আলম তার বড়ভাইকে জানান যে, তাকে সন্ত্রাসীরা অপহরণ করে অজ্ঞাতস্থানে নিয়ে এসেছে। সন্ত্রাসীরা তার কাছে মুক্তিপণ দাবি করছে। মুক্তিপণ না দিলে তাকে জবাই করে হত্যা করবে।

তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্বস্ত সূত্র নিশ্চিত করেছে মুক্তিপণের বিনিময়ে সন্ত্রাসীরা খামারি নুরুল আলমকে মুক্তি দিয়েছেন। যদিও এই বিষয়ে ভুক্তভোগীর পরিবারের সদস্যরা মুখ খুলতে রাজী না।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন