parbattanews

বাঙালিদের গুচ্ছগ্রাম থেকে সরিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের অন্যত্র পুনর্বাসন করতে হবে- কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা এমপি

কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা এমপি

খাগড়াছড়ির সংসদ সদস্য, পার্বত্য চট্টগ্রামের ভারত প্রত্যাগত শরণার্থি ও অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্ত প্রত্যাবাসন বিষয়ক টাস্কফোর্সের চেয়ারম্যান কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা এমপি বলেছেন, বাঙালিদের আর কতকাল গুচ্ছগ্রামে বন্দী হয়ে থাকতে হবে। তাদেরকে নিজ ভূমিতে ফিরিয়ে আনতে হবে। যদি সে ভূমি কোনোভাবে বেদখল হয়ে থাকে তবে পাহাড়ের অন্যত্র তাদের পুনর্বাসন করতে হবে। গত ২৬ মে রাঙামাটিতে এপিবিএন আঞ্চলিক কার্যালয় উদ্বোধনকালে তিনি একথা বলেন।

এ সময় তিনি আরো বলেন, আমাদের প্রথাগত প্রতিষ্ঠানের যে নেতৃবৃন্দ আছেন, বিশেষ করে গ্রামের হেডম্যান, কারবারী, তিন সার্কেল চিপ আছেন । এছাড়াও হেডম্যান, কারবারী যারা আছেন, তারা কিন্তু সমাজের এক একটা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করতে পারে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে, গ্রামে থেকে এইসব মানুষের কল্যাণ করবার জন্যে, দেশের উন্নয়নের জন্য, শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য, তারা নিজের মন থেকে এমন কিছুই করতে পারে, কিন্তু এ পর্যন্ত আমি তেমন কিছু দেখতে পাই না। কোন না কোনভাবে সন্ত্রাসীদের হাতে তারাও জিম্মি। তারা তাদের মনের কথা বলতে পারে না। তারা তাদের গ্রামের মানুষের মনের কথা বলতে পারে না।

কারণ সন্ত্রাসী তো সন্ত্রাসী! সে যেই জাত বা গোষ্ঠীর হোক না কেনো। সন্ত্রাসের কারণেই তাদের মুখ বন্ধ। তারা কোন কিছুতেই প্রতিবাদ করতে পারে না। যেই কারণে সন্ত্রাসী চাঁদাবাজ, দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং  আরো বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে।

সুতরাং আজকে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে, পার্বত্য চট্টগ্রামে আমরা ১৬ লক্ষ মানুষ আছি, পাহাড়ি-বাঙ্গালি সকলে মিলে। এই ১৬ লক্ষ মানুষের ৩২ লক্ষ হাতকে যদি আমরা একত্রিত করতে পারি, ৩২ লক্ষ হাতকে যদি একত্রিত করে আমরা এই সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে পারি নিশ্চয়ই সন্ত্রাস আমরা নির্মূল করতে পারবো এখান থেকে।

এখানে এপিবিএন হবে, আরো সেনাবাহিনীর ক্যাম্প হবে। আরো বেশি বেশি হবে যদি, আমরা আমাদের নিরাপত্তার জন্য, আমাদের উন্নয়নের জন্য আমরা যদি কাজ না করি, তাহলে এপিবিএন দিয়ে কোন কাজ হবে না। বরঞ্চ সেটা হিতে বিপরীত হবে, নানানভাবে নানান কথা এখানে উত্থাপিত হবে, দেশে বিদেশে কলঙ্কের ভাগীদার হবারও একটা সম্ভাবনাও থাকে। তখন মানবাধিকার লঙ্ঘিত হবে।

তিনি বলেন, সেই জন্য আমি আজকে পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে অনেক কথা আমরা অতীত থেকেই বলে আসছি যে, নিজের ভাগ্য পরিবর্তন করার জন্যে একটা মাত্র উপায়, তা হলো আমাদের ঐক্যবদ্ধ থেকে কাজ করা। এক হয়ে কাজ করতে পারলে নিশ্চয়ই সন্ত্রাস আমরা নির্মূল করতে পারব। যেমনিভাবে ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধে আমরা দেখিয়েছি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে এই বাংলার সাড়ে সাত কোটি মানুষ তারা মাঠে নেমেছে ঐক্যবদ্ধ হয়ে। পাকিস্তানের মতো শক্তিশালী সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে ৯ মাসের মধ্যে দেশ স্বাধীন হয়েছে।

এখানে জিওসি সাহেব একটা কথা বলেছেন, জাতির পিতার ভাষণ নিয়ে, এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম।

এই ভাষণের উপর ভিত্তি করে, সাহস সঞ্চার করে আমরা মুক্তিযুদ্ধ করে জয়লাভ করতে সক্ষম হয়েছি। কাজেই পার্বত্য চট্টগ্রামের উন্নয়নের জন্য আমরা ১৬ লক্ষ মানুষের ৩২ লক্ষ হাতকে যদি একত্রিত করতে পারি নিশ্চয়ই আমরা শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে পারব। এবং বাংলাদেশের উন্নয়নের মূল স্রোতধারার সাথে পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষকে আমরা নিয়ে যেতে সক্ষম হবো।

তবে আমাদের দায়িত্ব পালন করতে হবে। আমার দায়িত্ব আমাকে পালন করতে হবে। আপনার দায়িত্ব আপনাকে পালন করতে হবে। যার যার দায়িত্ব যদি আমরা সেভাবে পালন করতে পারি নিশ্চয়ই আমাদের অভিষ্ঠ লক্ষ্যে পৌঁছা অসম্ভব বলতে কিছু থাকবে না। আমরা নিশ্চয় সম্ভবপর, সেই জায়গায় আমরা পৌঁছাতে পারব।

এখানে অনেক কথা আছে। শান্তি-অশান্তি নিয়ে আরো অনেক কথা আছে পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি-বাঙ্গালির। আমরা সবাই বাংলাদেশের মানুষ। ১ দশমাংশ মানুষ পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের। এখানে পাহাড়ি এবং বাঙ্গালি সকলে বসবাস করবে শান্তিপূর্ণভাবে, শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের মধ্য দিয়ে। আমরা এ এলাকার উন্নয়ন সাধন করব। এটিই তো হওয়ার উচিত ছিল। কিন্তু তার মধ্যে নানান কিছু মানুষের বিড়ম্বনার সৃষ্টি হওয়ার মতো আমরা অনেকসময করে ফেলি। পাহাড়ি-বাঙ্গালির বিরুদ্ধে, বাঙ্গালি-পাহাড়ির বিরুদ্ধে! এ বিরোধিতা কেন হবে? এ বিরোধ কেন হবে?

আমাদের স্বীকার করতে হবে, কষ্টার্জিত বাংলাদেশ এটাকে ধরে রাখার জন্যে একসাথে, যেমনি আমরা ১৯৭১ সালে যুদ্ধ করেছি, তেমনি পার্বত্য চট্টগ্রামের সাথে আরো একটা যুদ্ধ করতে হবে, পাহাড়ি-বাঙ্গালি সবাই মিলে।

কুজেন্দ্রলাল ত্রিপুরা বলেন, বাঙ্গালিরা যাবে কোথায়? আমি চাই আজকে মাননীয় মন্ত্রীর মাধ্যমে, এখানে ২ জন মন্ত্রী আছেন আমাদের, তাদের মাধ্যমে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার কাছে আমি আবেদন রাখতে চাই, সেটি হচ্ছে, এখানে যে বাঙ্গালিরা আছে তারা যাবে কোথায়? তাদেরকে অন্তত শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করতে পারে এমনভাবে তাদের পুনর্বাসনের স্থায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে। গুচ্ছগ্রামের চ্যালেঞ্জে আর কতদিন থাকবে ওরা?

সুতরাং পাহাড়ে এখনো জায়গার কোন অভাব নাই আমার মতে, পাহাড়ে অনেক জায়গা রয়েছে। যদি তাদের জায়গার মধ্যেই মন্দির বা প্রতিষ্ঠান হয়ে থাকে, আর বাঙ্গালি ভাই যদি বঞ্চিত হয়ে থাকেন, তাহলে অন্যত্র একটা জায়গায় তাদের আমরা পুনর্বাসন করতে পারি।

আমাদের দরকার হচ্ছে মন, আমাদের দরকার প্রেম-ভালোবাসা, যে প্রেম-ভালোবাসা দিয়ে দেশ স্বাধীনে হয়েছে, বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়েছে, তেমনি সকলের অন্তত দরকার। আমরা মানুষ, আমাদের হুঁশ আছে, আমাদের হুঁশকে কাজে লাগাব । যদি আমরা আমাদের হুঁশকে কাজে লাগাতে পারি নিশ্চয়ই পাহাড়ি-বাঙ্গালির একটা শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের জায়গা হবে পার্বত্য চট্টগ্রাম। সকলেই বলে অপার সম্ভাবনার, আসলেই অপার সম্ভাবনাময় পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চল। এ পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের মাছ, লেকের মাছ, মাছের চাষ করে, ফলদ বনাঞ্চল, পর্যটকদের আকর্ষণ করার মধ্য দিয়ে আমরা অর্থ উপার্জন করতে পারি।

Exit mobile version