parbattanews

বাঙালী ছাত্র পরিষদ: সংগঠনের নামে ব্যবসা, চাঁদাবাজি, জামাতিকরণসহ নানা অভিযোগ মামুনের বিরদ্ধে: অস্বীকার ও পাল্টা অভিযোগ মামুনের

banglai satro parisod

মুজিবুর রহমান ভুইয়া, খাগড়াছড়ি থেকে :
পাহাড়ের বঞ্চিত বাঙালীদের অধিকার আদায়ের নামে, আন্দোলন-সংগ্রামের নামে, বাঙালী ছাত্র পরিষদের কতিপয় সাবেক নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে ব্যাপক চাঁদাবাজি এবং ব্যক্তিগত উদ্দ্যেশ্য হাসিলের অভিযোগ করেছেন একই সংগঠনের সাবেক দুই সভাপতি। তারা বলেন, সংগঠনের উপদেষ্টার পদ ব্যবহার করে পার্বত্য নাগরিক পরিষদের নেতৃবৃন্দ বাঙালী ছাত্র পরিষদের নামে আদায়কৃত টাকায় ঢাকা ও  ‍কুমিল্লা শহরে বসে ব্যবসা ও চিহ্নিত একটি রাজনৈতিক দলের উদ্দেশ্য সাধন করে থাকেন থাকেন বলে তারা অভিযোগ করেছেন।

আর এভাবেই পাহাড়ের বাঙালীদের অধিকার আদায়ের নামে ডানপন্থী রাজনীতির খোলস পড়া এক প্রকৌশলীগং দ্বারা নিয়ন্ত্রিত পার্বত্য বাঙ্গালী ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি মো: ইসমাইল নবী শাওনকে অব্যাহতি প্রদান, খাগড়াছড়ি জেলা কমিটির সকল কার্যক্রম স্থগিত করা, সংগঠনের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি ও বাঘাইছড়ি পৌরসভার মেয়র মো: আলমগীর কবীরকে শোকজ করার মধ্য দিয়ে হুমকির মুখে পড়েছে পাহাড়ের জনবিচ্ছিন্ন এই সংগঠনটি।

গত রবিবার প্রকৌশলী আলকাছ-আল-মামুন প্রেরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে মো: ইসমাইল নবী শাওনকে তার পদ থেকে অব্যাহতি এবং আলমগীর কবীরকে কারণ দর্শানোর সিদ্ধান্তের কথা প্রকাশ করার পর থলের বিড়াল বেড়িয়ে আসতে শুরু করেছে। উল্টো মামুনের বিরুদ্ধেই অভিযোগের আঙ্গুলি প্রদর্শণ করেছেন সংগঠনের সাবেক দুই সভাপতি মো: আলমগীর কবীর ও  মো: ইসমাইল নবী শাওন। জানা গেছে, সভায় সংগঠনের নীতি আদর্শ নিয়ে আলোচনায় বিএনপি, আওয়ামীলীগ ও জামায়াত শিবির এই দুইভাগে নেতাকর্মীরা বিভক্ত হয়ে যায়। বিতের্কের এক পর্যায়ে আলকাস আল মামুন ও আলমগীর কবিরের মধ্যে হাতাহাতি পর্যন্ত ঘটে। সিদ্ধান্ত ছাড়াই সভা শেষ হলেও পরে সংবাদ মাধ্যমে অব্যাহতির বিজ্ঞপ্তি পাঠানো হয় যা অনেকেই জানতো না বলে জানায়।

প্রকৌশলী মো: আলকাছ আল মামুন সংগঠনের সাবেক সভাপতি ও বাঘাইছড়ি পৌর সভার মেয়র মো: আলমগীর কবীরের বিরুদ্ধে সংগঠনের মধ্যে গ্রুপিং উস্কে দেয়াসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ করলে এর জবাবে মো: আলমগীর কবীর বলেন, ‘তিনি (আলকাছ আল মামুন) বছরের পর বছর সংগঠনটিকে ব্যবহার করে নিরবে চাঁদাবাজি করে চলেছেন। তিনি বাঙ্গালীদের অধিকার আদায়ের নামে বাঙ্গালী ছাত্র পরিষদের ব্যানারে শিবিরকে সংগঠিত করছেন। পাহাড়ের নির্যাতিত বাঙ্গালীদের অধিকার আদায়ের আন্দোলনে তিনি কোন ভুমিকা রাখতে পারেননি। তিনি বাঙ্গালী ছাত্র পরিষদকে জামায়াত-শিবিরের সহযোগী প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছেন। ব্যাপক বাঙ্গালী জনগোষ্ঠির সমর্থন আদায়ে সংগঠনটি পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে’।  

সংগঠনের সদ্য অব্যাহতি পাওয়া সভাপতি মো: ইসমাইল নবী শাওন বলেন, ‘সংগঠনটির ব্যানার নিজের স্বার্থে ব্যবহার করা হচ্ছে। সংগঠনটিকে দীর্ঘদিন ধরে নিজেদের প্রয়োজনে ব্যাবহার করার বিষয়টি আমি মানতে পারিনি। এখানে কাজ করার কোন স্বাধীনতা ছিল না। সংগঠনে জামায়াত-শিবিরের বাইরের কোন লোকের তেমন কোন মতামতকে প্রাধান্য দেয়া হয় না’। তিনি বলেন, এ সংগঠন পাহাড়ের মানুষের জনপ্রত্যাশা পুরণ করতে পারেনি। কেন জানতে চাইলে শাওন বলেন, ‘রাজার রাজ্যে রাজা-ই প্রধান রাজা-ই সর্বেস্বর্বা আর প্রজারা কিছুইনা’ বাঙ্গালী ছাত্র পরিষদ সেরকম একটা সংগঠন। এ সংগঠনে আলকাছ আল মামুনই সব। প্রকৃত অর্থে বাঙ্গালী ছাত্র পরিষদকে কোন সংগঠন বলা যাবে না’।

সাম্প্রতিক তাইন্দং সহিংসতা প্রসঙ্গে ইসমাইল নবী শাওন বলেন, সহিংসতার এক মাস পেরুলেও সেখানে আলকাছ আল মামুনের নেতৃত্বাধীন পার্বত্য নাগরিক পরিষদ কোন প্রতিনিধি দল পাঠাতে ব্যর্থ হয়েছে। এটা তার ব্যর্থতার চরম বহির্প্রকাশ বলেও মন্তব্য করেন তিনি। তাইন্দংয়ের ছেলে হয়েও ঘটনার একমাস পার হলেও তিনি (আলকাছ আল মামুন) কেন তাইন্দংয়ের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় যাননি এমন প্রশ্নও করেন শাওন।

এ সকল অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে পার্বত্য বাঙালী ছাত্র পরিষদের প্রধান উপদেষ্টা ও নাগরিক পরিষদের সভাপতি ইঞ্জিয়ার আলকাস আল মামুন সংগঠনকে নিজের মতো পরিচালনার বিষয়ে বলেন, চালকের আসনে বসলে এরকম অভিযোগ আসতেই পারে। সংগঠনের শৃঙ্খলা ধরে রাখতেই অনেক সময় নিজের মতো করে চালাতে হয়। খাগড়াছড়িতে মেডিক্যাল সেন্টার, রাঙামাটিতে হোটেলসহ তার বিরুদ্ধে চাঁদাবজির অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, সংগঠন চালাতে গিয়ে আমার বিরুদ্ধে চাঁদাবজির প্রমান কেউ দিতে পারবেনা। উল্টো তিনি দৈনিক গিরিদর্পনে আলমগীর কবীরের অনাস্থা সংক্রান্ত সংবাদের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, তার বিষয়ে নেয়া সিদ্ধান্তটা ছিল সময়োপযোগী। তার দুর্নীতি ও আত্মসাতের অভিযোগে ১২ কাউন্সিলর অনাস্থা দিয়েছেন। তাইন্দং সহিংসতায় ক্ষতিগ্রস্থ এলাকায় না যাওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমি সেখানে একটা টিম নিয়ে যাওয়ার চেষ্ঠা করছি। তাইন্দং সহিংসতায় যারা মামলার ভয়ে এলাকা ছাড়া তাদের সবকিছু দেখাশুনা ছাড়াও আমি জামিনের চেষ্টা করছি। অন্যদিকে পার্বত্য বাঙ্গালী ছাত্র পরিষদকে জামায়াতীকরনের অভিযোগটি কৌশলে এড়িয়ে যান পার্বত্য বাঙ্গালী ছাত্র পরিষদের এ কর্ণধার।

Exit mobile version