বাজারফান্ড জমির রেজিস্ট্রেশন চালু না হলে রাঙামাটিতে হরতাল ডাকার হুমকি


বাজারফান্ডের অধীন বন্দোবস্তকৃত জমির হস্তান্তর ও বন্ধকী দলিল রেজিস্ট্রেশন অফিসার কর্তৃক রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে চালু করার ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে রাঙামাটি বাজারফান্ড জায়গার মালিকরা অস্তিত্ব রক্ষার স্বার্থে মানববন্ধন, শাট ডাউন, হরতালসহ কঠোর হতে কঠোরতর কর্মসূচী পালনের হুঁশিয়ারী দিয়েছে প্রশাসনের কাছে। শনিবার (১৫ নভেম্বর) সকালে ব্যক্তিমালিকানাথীন রেঁস্তোরায় রাঙামাটি বাজারফান্ড ভূমি অধিকার সংরক্ষণ কমিটির আয়োজনে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এ দাবি জানানো হয়।
সম্মেলনে বক্তারা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসনবিধি ১৯০০ খ্রিস্টাব্দের আইন-১ এর ১২ ও ১২(এ) ধারাতে বলা আছে বন্ধকী দলিলের রেজিস্ট্রেশন বাধ্যবাধকতা রয়েছে এবং এ ক্ষমতা জেলা প্রশাসকের উপর ন্যস্ত। কিন্তু ২০১৯ সাল হতে রাঙামাটির বাজারফান্ডের আওতাভুক্ত জমি রেজিস্ট্রেশন অফিসার তথা জেলা প্রশাসক কর্তৃক বাজারফান্ডভুক্ত এলাকার যে কোনো ধরণের জমির দলিল রেজিস্ট্রেশন করছেন না। ফলে জমি বন্ধকী কার্যক্রম কিংবা হস্তান্তর স্থবির হয়ে পড়েছে। যে কারণে এর প্রভাব পড়ছে বাজারফান্ডভুক্ত এলাকার ব্যবসায়ী,আবাসিক জায়গার মালিকগণের উপর।
তারা দীর্ঘদিন যাবত তাদের নিজস্ব বন্দোবস্ত, খরিদ, দানকৃত মূলে প্রাপ্ত জমি বন্ধক রেখে ব্যাংক ঋণ গ্রহণ করতে পারছেন না। এটি সংবিধানের ৪২ অনুচ্ছেদের গুরুতর লঙ্ঘন। যেখানে প্রত্যেক নাগরিকের সম্পত্তি অর্জন, ধারণ, হস্তান্তরর এবং বিলোপের অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। অর্থাৎ রাঙ্গামাটির বাজারফাডের আওতাভূক্ত নাগরিকগণ মৌলিক অধিকার ভোগ করা থেকে চূড়ান্ত ভাবে বঞ্চিত হচ্ছেন। অর্থনৈতিক কর্মকান্ডেও এর মারাত্মক বিরূপ প্রভাব পড়ছে।
অথচ ১৯৭২ সনের বোর্ড অব রেভিনিউ বাংলাদেশ এর মেমো নং-২৪৪-বি.আর, ভি-আই-১-১০/৭১ সিএইচটি অব ১৯.০৮.৭২মুলে পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসনবিধি ১৯০০ এর অধীনে প্রণীত এর ৩৪ ধারার (আই), (জে), (এন) এবং বিধি-১২০৩ অনুযায়ী বাজার ফান্ডের ক্ষেত্রেও প্রয়োজনের জন্য অর্পিত ক্ষমতাবলে বাজারফান্ড প্রশাসক বাজারফান্ড এলাকার জমি বন্দোবস্ত প্রদানের এখতিয়ারসম্পন্ন। এ ক্ষমতাবলেই জেলা প্রশাসকগণ ১৯৭২ সাল হতে বিভিন্ন সময় বাজারফান্ড প্রশাসক হিসেবে বাজারফান্ড এলাকার জমি বন্দোবস্ত প্রদান, জমা ভাগ, বন্ধকী অনুমতি পদান ও তৌজিভুক্তকরণ ইত্যাদি কার্যাদি সম্পাদন করে এসেছেন।
বক্তারা আরও বলেন, ১৯৮৯ সালে সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ি প্রশাসক হিসেবে জেলা প্রশাসকের পরিবর্তে রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান দায়িত্ব পালন করছেন। কাজেই প্রশাসক পরিবর্তনের কারণে কার্যক্রম স্থগিত থাকার যৌক্তিকতা নেই। বিগত ৫ মাস যাবত জেলা প্রশাসকসহ জেলা প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণ, রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ, ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিব মহোদয় এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবরে বিষয়টি সমাধানের আবেদন করা হয়েছে। আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে প্রশাসনক কর্তৃক ইতিবাচক সিদ্ধান্ত না এলে মানব বন্ধন, শাট ডাউন, হরতালসহ কঠোর কর্মসূচি পালন করবে বাজারফান্ডবাসী।
সংবাদ সম্মেলনে রাঙামাটি বাজারফান্ড ভূমি অধিকার সংরক্ষণ কমিটির আহবায়ক এ্যাড. সাইফুল ইসলাম পনির, যুগ্ম আহবায়ক আব্দুল কুদ্দুস, মুজিবুল হকসহ সংগঠনটির অন্যান্য নেতৃবৃন্দরা উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ, তিন জেলা প্রশাসনের সাথে কথা বলে জানা যায়, ১৯০০ সালের পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসন বিধির ১২ধারা (২) মোতাবেক ব্যাংকের সাথে ঋণ গ্রহীতার চুক্তিনামা রেজিস্ট্রেশন করার এখতিয়ার পার্বত্য জেলাসমূহে জেলা প্রশাসকগণের উপর ন্যাস্ত রয়েছে। তবে চুক্তি রেজিস্ট্রেশন করার আগেই বাজারফান্ড প্রশাসনের অনুমতি লাগবে। অবশিষ্ট ৬১ জেলায় ব্যাংক ঋণের জন্য সাব রেজিষ্টারের অনাপত্তিই যথেষ্ট।
রাঙামাটির তৎকালীন জেলা প্রশাসক মানজারুল মান্নান ২০১৭ সালে এই প্রক্রিয়ার উপর প্রশ্ন উত্থাপন করে ঋণ চুক্তি রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেন। পরবর্তীতে যদিও নানা দেন দরবারের পর তা খুলে দেওয়া হয়।
বাজারফান্ডের জায়গা নিয়ে মূল জটিলতা সৃষ্টি করে খাগড়াছড়ির তৎকালীন জেলা প্রশাসক প্রতাপ চন্দ্র আশ্বাস । তিনি ২০১৯ সালের অক্টোবরে বাজারফান্ড এলাকায় বন্দোবস্তি দেওয়া জমিকে খাস জমি উল্লেখ করে ওইসব জমির বিপরীতে ঋণ প্রদানের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেন এবং পার্বত্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা চেয়ে পত্র প্রেরণ করেন।
খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসকের অনুসরনে ২০১৯সালে রাঙামাটিতে আবারও ঋণ চুক্তি রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায়। খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি জেলা প্রশাসকের দেখাদেখি বান্দরবান জেলা প্রাশসকও ঋণ চুক্তি রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেয়।

















