parbattanews

বানরের অত্যাচারে অতিষ্ঠ মা‌টিরাঙ্গাবাসী

উজাড় হচ্ছে পাহাড়, টিলা ও বনভূমি। এ কারণে সেখানে আশ্রয় নেওয়া বানরগুলো আবাস হারাচ্ছে, পাচ্ছে না খাবার। তাই খাবারের খোঁজে লোকালয়ে প্রায়ই বানরের আনাগোনা দেখা যায়। সড়কের পাশে এমনকি বাসাবাড়িতেও খাবারের সন্ধানে ঢুকে পড়ে বানরের দল। খাগড়াছড়ির মা‌টিরাঙ্গায় বান‌রের যন্ত্রনায় অ‌তিষ্ঠ মা‌ঠের কৃষক থে‌কে শুরু ক‌রে রান্না ঘর পর্যন্ত সক‌লেই।

কা‌লের বিবর্তনে প‌রিক‌ল্পিত বনানয়ন করার না‌মে প্রাকৃতিক বন ধ্বংস, জনসংখ‌্যা বৃদ্ধি ফ‌লে বা‌ড়ি ঘর নির্মাণ, ইটভাটা ও তামাক চু‌ল্লি‌তে জ্বালানি হিসা‌বে কা‌ঠের ব‌্যবহার কর‌তে গি‌য়ে নি‌র্বিচা‌রে বনভূ‌মি নিধন ও পাহাড় কাটার কার‌ণে বনজ প্রা‌ণিকূল এক দি‌কে হারা‌চ্ছে তা‌দের আবাসস্থল, অন‌্য দি‌কে দেখা দি‌য়ে‌ছে চরম খাদ‌্য সংকট। ফ‌লে জীবন বাঁজা‌নোর তা‌গি‌দে জীব‌নের ঝুঁকি নি‌য়ে খা‌দ্যের সন্ধা‌নে লোকাল‌য়ে এ‌সে ক্ষতি সাধন ক‌রে বান‌রের দল। বিশেষ করে ফলদ বাগান ও ক্ষুদ্র সব্জি চাষিরা আছে বিপাকে। দলবেঁধে শত শত বানর খাবারের জন্য বাসাবাড়িতে হামলে পড়তে দেখা যায়। প্রাকৃতিক খাবারের অভাবে কখনো কখনো মানুষের ঘরে প্রবেশ করে রান্না করা খাবারও খেয়ে ফেলে। গ্রামের বেশিরভাগ পরিবার দেশি মুরগী পালন করে কিন্তু সুযোগ পেলেই ডিম খেয়ে ও নষ্ট করে অবর্ণনীয় ক্ষতি করছে বানর।

সরেজমিনে দেখা যায়, বি‌ভিন্ন বাণিজ্যিক ও বাসভবনের ছাদের উপর, আশেপাশে সীমানা দেয়ালে বানর দলবেঁধে লাফালা‌ফি করে। সুযোগ পেলেই প্রবেশ করবে ঘরে, সেড ঘরের উপর, দেয়াল ও এর আশেপাশেও বানরের উৎপাত চোঁখে পড়ার মতো। মানুষের উপ‌স্থি‌তি ‌টের পে‌লে এরা দ্রুত পা‌া‌লি‌য়ে যায়।

অনুসন্ধানে জানা যায়, বিভিন্ন উপজা‌তি সম্প্রদায়ের লোকজন বান‌রের মাংস খায়। ফ‌লে লোকালয়ে আসা বানরগুলো বে‌শিভাগ তাদের হাতে মারা প‌ড়ে। তাই পাহা‌ড়ি পাড়াগু‌লোতে বান‌রের উপদ্রব কম বলে জানা যায়।

এ‌দি‌কে বানরের উপদ্রবের কারণে বাড়ির উঠোনে সবজির মাচা এখন আর চোখে পড়েনা। বাণিজ্যিকভাবে সব্জি চাষ করতেন বানরের উপদ্রবে কোন শাকসবজির অস্তিত্ব নেই। ফলে সব্জিচাষ হতে ধীরে ধীরে চাষিরা মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। এর প্রভাবে বাজারে বেড়ে যাচ্ছে সবজির দাম।

স্থানীয় সব্জি চাষী সাবেক মেম্বার ওয়ালিউল্লা বলেন, আমি সব সময় শাকসবজি, ফলফলাদি চাষাবাদ করি কিন্তু বানরের উপদ্রবে চাষাবাদ বন্ধ করে দিয়েছি। আমার মতো আরো অনেকে চাষাবাদ বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে। বানরের জন্য একটি অভয়ারণ্য করে তাদের জন্য সরকারিভাবে খাদ্যের ব্যবস্থা করা দরকার। কখনো কখনো গ্রামের মানুষ বানর পিটিয়ে মারতে বাধ্য হচ্ছে। কাজেই বানরের সংখ্যা কমার আশঙ্কা করছেন অনেকে। এছাড়া পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় বন্যপ্রাণীর কোন বিকল্প নেই বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

‌মা‌টিরাঙ্গা পৌর এলাকার চেয়ারম‌্যান পাড়ার বা‌সিন্দা আলী হো‌সেন জানান, বানরের জ্বালায় অতিষ্ঠ হয়ে গেছি। কিছুক্ষণ পরপর বানর এসে সকল ফলমূল নষ্ট করে ফেলছে। হাস মুরগী‌কে খাবার দি‌লে তা নি‌য়ে যায়। রান্না ঘরের চালের টিন বানর যাতায়াত করতে সব নষ্ট করে ফেলেছে।

ব‌্যবসায়ী আব্দুর র‌হিম জানান, বানর এলাকাবা‌সীকে অতিষ্ঠ করে তু‌লে‌ছে। সকল ফলমূল সাবাড় করছে। বন্যপ্রাণী বনে না থেকে লোকালয়ে এতে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে।

সং‌শ্লিষ্ট‌্য রেঞ্জ কর্মকর্তা আতাউর রহমান লস্কর জানান, বন্যপ্রাণী হল আমাদের বনজ সম্পদ। আমাদের ঐতিহ্য। এরা বন হতে লোকালয়ে আসছে খাদ্য সংকটের ফলে। বনের মধ্যে পর্যাপ্ত খাবার না থাকার ফলে লোকালয়ে আসছে। তাই বলে বন্যপ্রাণীকে হত্যা করা, অতিষ্ঠ করা বা আহত করা যাবেনা। বন্যপ্রাণী দ্বারা কোন মানুষ হত্যা, আহত হওয়া বা কোন ধরনের ঘর-বাড়ি বিনষ্ট হলে সরকার তা পুষিয়ে দেয়ার বিধান রয়েছে।

Exit mobile version