parbattanews

বান্দরবানের জনপ্রিয় সুস্বাদু খাবার বাঁশ কোরল

প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি বান্দরবান । যেখানে প্রকৃতি তার নিজস্ব নিয়মে রূপ ও সৌন্দর্য পরিবর্তন করে ।আর এই বান্দরবানে খুঁজে পাওয়া যায় নানা বৈচিত্র্য। আর এই সৌন্দর্যের মাঝে খুঁজে পাওয়া যাবে নানা বর্ণের মানুষ , তাদের রয়েছে নিজস্ব নানা সংস্কৃতি এবং নানান রকম খাবার।

তার মাঝে পাহাড়ের জনপ্রিয় খাবার বাশ কোরল। যা না হলে মনে হয় প্রতিদিন ভাত খাবারের রুচি আসে না। খুব সুস্বাদু জনপ্রিয় একটি খাবার এই বাঁশ কোরল।

প্রতিদিন দূর-দূরান্তের গভীর জঙ্গল থেকে সংগ্রহ করে বাজারে বিক্রির জন্য নিয়ে আসা হয় এই বাঁশ কোরল।

পাহাড়ে বসবাসরত আদিবাসী ও বাঙালির প্রিয় একটি সবজি বাঁশ কোরল । সবজি হিসেবে খাওয়া হলেও এটি বিভিন্নভাবে রান্না করা হয়। উপজাতীরা বিভিন্নভাবে এটি সবজি হিসেবে রান্না করে খেয়ে থাকে।

স্বাদে অতুলনীয় এই সবজিটি শুধু উপজাতীদের জন্য নয় দেশের সব মানুষের এখন প্রিয় খাবার। বান্দরবান থেকে বর্তমানে চট্টগ্রাম ঢাকা ও বিভিন্ন জেলায় এই বাশকোরল বিক্রির উদ্দেশ্যে কিনে নিয়ে যান খুচরা ও পাইকারী বিক্রেতারা।

মে-জুন-জুলাইয়ে এটি পাওয়া যায়। অন্যান্য সবজির চেয়ে এটি সিদ্ধ হতে সময় নেয়। রান্নার আগে শুধু পানি দিয়ে সিদ্ধ করা হয়। সিদ্ধ হওয়ার পর পানি সেকে রান্না করা হয়।

পার্বত্যাঞ্চলে কয়েক প্রজাতির বাঁশ জন্মায়। এগুলো স্থানীয়ভাবে মলিবাঁশ, ফারুয়া বাশ, ডুলু বাঁশ, মিটিংগ্যা বাঁশ, বাজ্জে বাঁশ, কালিছুরি বাঁশ নামে পরিচিত।

মূলত বাঁশের কচি অংশকে বলা হয় বাঁশ কোরল। চাকমারা একে বলে বাচ্চুরি। মারমারা বলে মহ্ই। ত্রিপুরা বলে মেওয়া। বৈশাখে বৃষ্টির পর যখন মাটি নরম হয়ে উঠে তখন বাঁশ কোরল মাটি ফুড়ে গজিয়ে উঠতে শুরু করে। বাঁশ গজিয়ে উঠার ৫-৬ ইঞ্চি হতেই খাওয়ার উপযোগী হয়ে উঠে। বাঁশের জাত অনুযায়ী বাঁশ কোরলের স্বাদও আলাদা আলাদা হয়।

মলি বাঁশের কোড়ল সবচেয়ে স্বাদে অতুলনীয়। মানুষের কাছে কদর বেশী হওয়ায় বাজারে এটির দামও অন্যদের চেয়ে একটু বেশী থাকে।

বর্ষা শুরু হওয়ার সাথে সাথে বাঁশ কোরল বাজারে আসে। সবার আগে বাজারে পাওয়া যায় মিটিংগ্যা বাঁশের কোরল। বাজারে প্রথম আসায় একচেটিয়া বাজার দখল করে নেয় এই মিটিংগ্যা বাঁশের কোরল।

জুন, জুলাই, আগস্টের বাঁশ কোরলের ভরা মৌসুম, পাওয়া যায় মলি বাঁশের কোরল। এসময় পার্বত্যাঞ্চলে বেড়াতে আসা পর্যটকদের প্রধান আকর্ষণ থাকে বাঁশ কোরল। বাঁশ কোরলবিক্রি করে অনেকে সাবলম্বী হয়। বাজারে ছোট ছোট থুরুং নিয়ে বাঁশ কোরলের পসরা বসায় উপজাতী নারীরা।

এক সময় পাহাড়ে বাঁশ কোরলের মৌসুমে এটির ভরপুর থাকলেও ৫-৬ বছর আগে পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রাকৃতিক ভাবে বাঁশের মোড়ক ধরায় কমে এসেছে বাঁশবন। ফলে বাঁশ কোড়লও চাহিদা মত বাজারে আসছে না। এখন বাঁশ ।উৎপাদনের স্বার্থে জুন-জুলাই- আগষ্ট মাসে বাঁশ আহরণ বন্ধ রাখতে হচ্ছে বন বিভাগ। তবে ব্যাক্তি মালিকানাধীন বাঁশ বাগান এর আওতার বাইরে রাখা হয় ।

তবে মিতৃকা গবেষকরা চিন্তা করছেন বাশের উৎপাদন বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে বর্ষা মৌসুমে দুই থেকে তিন মাস এই বাশকোরল উত্তোলন বন্ধ রাখা প্রয়োজন। কারণ তা বাশের উৎপাদন বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে।

Exit mobile version