parbattanews

বান্দরবানের দুই উপজেলায় বিদ্যুৎ ও সড়ক যোগাযোগ এখনো বিচ্ছিন্ন

টানা ভারী বর্ষণের কারণের পাহাড় ধ্বসে ভেঙ্গে পড়েছে বিদ্যুতের খুঁটি বন্ধ রয়েছে সড়ক যোগাযোগের ব্যবস্থা। চলতি বর্ষার মৌসুমে টানা কয়েকদিন ধরে বৃষ্টিপাতের পাহাড় ধসের ব্যাপক আকারে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সড়ক ও বন্যায় ধসে গেছে জুম, আম বাগান, ধানের জমি, ফসলের চাষ। তাছাড়া বিভিন্ন জাতের কৃষি পণ্যের ন্যায্যমূল্যে না পাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন চাষিরা। যার ফলে নানান ভোগান্তিতে পোহাতে হচ্ছে দুই উপজেলা রুমা ও থানচি কয়েক হাজার মানুষ।

এদিকে বান্দরবানের সাথে রুমা-থানচি সড়ক যোগাযোগ বন্ধ থাকলেও একমাত্র যাতায়াত হিসেবে বেঁচ্ছে নিচ্ছেন নৌ-পথে ইঞ্জিন চালিত বোট। স্বাভাবিক অবস্থায় সামান্য অর্থ দিয়ে যানবাহনে চলাচল ছিল তা এখন কয়েকগুন টাকা দিয়ে চলাচল করেছেন নৌ-পথে। অন্যদিকে দুই উপজেলায় বিদ্যু না পৌছানো কারণে ভুতুড়ে পরিবেশে জীবনযাপন করেছে কয়েকহাজার সাধারণ মানুষ।

দুই উপজেলার স্থানীয়রা জানান, ভয়াবহ এই বন্যাতে ডুবে গেছে পুরো বাজার শেড ও ঘরবাড়ি। বন্যা ও পাহাড় ধসের আশষ্কায় ঝুকিপূর্ণ স্থান হতে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে গেলেও থানচি ও রুমা বাজারে বিভিন্ন দোকান- ঘরবাড়ি পানিতে ডুবে গিয়েছিল। পানি কমে গেলেও চরমভাবে কাঁদা মাটি বসে দোকানে বিভিন্ন অংশের নষ্ট হচ্ছে। এতে ঠিক করতে খরচও অনেক টাকার ব্যয় হয়ে গেছে। তাছাড়া প্রশাসন থেকেও পর্যাপ্ত পরিমাণে ত্রাণও পাননি। বিদ্যুতের খুঁটি বিভিন্ন স্থানে ধসে পড়াতে এখনো বিদ্যুতের আলো পৌছাইনি দুই উপজেলায়। এতে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা ও পরিক্ষা নিয়ে আশঙ্কায় থেকে গেছে। দুই উপজেলায় বিদ্যুৎ না থাকাতেই টাকা দিয়ে জেনারেটর মাধ্যমে দিতে হচ্ছে মোবাইলে চার্জ। এমন ভুতুড়ে পরিবেশ থেকে কখন কাটিয়ে উঠবে সেই চিন্তায় কাটাচ্ছেন কয়েক হাজার মানুষ।

সরেজমিনে দেখা গেছে, থানচি- রুমা দুই উপজেলার সড়কে কয়েক স্থানে ভেঙ্গে গেছে রাস্তা। রুমা সড়কের যামিনি পাড়া,পলিকা পাড়া সহ কয়েকটি এলাকায় পাহাড় ধসে পুরো অংশ দেবে গেছে সড়ক। থানচি সড়কের চিম্বুক পোড়া পাড়া, ডাক বাংলো, নীলগিরি, মিলনছড়ি, জীবন নগর, কালা পাহাড়, শিলা ঝিঁড়ি, বিদ্যামনি পাড়া এলাকাসহ সড়কে বিভিন্ন স্থানে পাহাড় ধসে পড়ে বিশাল গর্তের ঝর্ণার পরিনত হয়েছে। পড়ে আছে বিদ্যুতের খুঁটি। ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে বৈদ্যুতিক তার।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সড়ক যোগাযোগের পথ বন্ধ থাকার কারণে চালু হয়েছে দুই উপজেলা নৌ-পথে ব্যবস্থা। বান্দরবান থেকে রুমা যেতে প্রতিজনের বোট ভাড়া দিতে হয় ৩ শত ৫০ টাকা। যা সময় ব্যয় হয় ৪ থেকে ৫ ঘন্টা। অন্যদিকে বান্দরবান-থানচি নৌ পথে যেতে ভাড়া গুনতে হয় ৯ শত টাকা। যা সময় ব্যয় হয় ৮ থেকে ৯ ঘন্টা।

এদিকে দুই উপজেলায় টানা ৯দিন বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন থাকায় অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে জনজীবন। মোবাইল ও পাওয়ার ব্যাংকে বিদ্যুতের চার্জ দিলে গুনতে হয় নগদ টাকা। প্রতি বাটন মোবাইল চার্জ করতে দিতে হয় ২০ টাকা, স্মার্ট ফোনের ৩০ টাকা ও পাওয়ার ব্যাংকে দিলে গুনতে হয় ৫০ টাকা। এমন অদ্ভুদ পরিস্থিতিতে হতবাক দুই উপজেলা বাসিন্দারা।

রুমা ও থানচি বাসিন্দা অংচোওয়াং ও চিংথোয়াই অং মারমা বলেন, টানা ৯ দিন ধরে রুমায়- থানচিতে বিদ্যুতের দেখা নাই। ভুতুড়ে পরিবেশের জীবনযাপন কাটাচ্ছি আমরা। অন্যদিকে সড়ক যোগাযোগ বিপরীতে নৌপথে যেতে হচ্ছে।যা আমাদের জন্য ব্যয়বহুল। তাই দ্রুত সংস্কারের দাবি জানাচ্ছি।

বান্দরবান বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মাসুম আমির হোসেন জানান, ইতোমধ্যেই আমরা ওয়াই জাংশন পর্যন্ত লাইন চালু করে চিম্বুক ক্যাম্প পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ সচল করে ফেলেছি। বিভিন্ন জায়গায় এখনো আমাদের ৩৩ কেভি ও ১১ কেভি পোল পড়ে আছে। সড়ক ভাঙ্গার ফলে গাড়ি চলাচল করতে না পারায় মালামাল ও সরঞ্জাম নিয়ে যেতে পারছি না। যার ফলে রুমা- থানচি বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ আছে। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি দ্রুত বাস্তবায়ন করা। সবকিছু ঠিকঠাক হয়ে গেলে বিদ্যুৎ সরবরাহ দেওয়া হবে।

Exit mobile version