parbattanews

বান্দরবানের দুর্গম এলাকায় আরাকান আর্মির সদস্য সংগ্রহের চিঠি: নেপথ্যে কি?


নিজস্ব প্রতিবেদক, বান্দরবান:
বান্দরবানের থানচি ও আলীকদমের দুর্গম পাহাড়ী এলাকার মিয়ানমার সীমান্তবর্তী বিভিন্ন পাড়ায় বার্মিজ ভাষায় চিঠিকে কেন্দ্র করে এলাকায় আতংক দেখা দিয়েছে। চিঠিটি মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদী দল আরাকান আর্মির (এএ) দাবী করেছে স্থানীয়রা।

এ নিয়ে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আয়োজিত বৈঠকে থানচি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলমের সভাপতিত্বে আলীকদমের সেনা জোনের অধিনায়ক লে. কর্নেল মাহাবুবুর রহমান, বলিপাড়া বিজিবি ব্যাটালিয়নের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক মেজর রুহুল আমিন, বান্দরবান রিজিয়নের কর্মকর্তা মেজর মাহাফুজুল হক, থানচি উপজেলা চেয়ারম্যান ক্যহ্লাচিং মারমা তিন্দু ও রেমাক্রী ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান ও স্থানীয় মেম্বার এবং সীমান্তের আতংকিত লোকজন উপস্থিত ছিলেন।

মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদী দল আরাকান আর্মির (এএ) নতুন সদস্য সংগ্রহের জন্য বিভিন্ন পাড়ায় চিঠি দেয়া হয়েছে এবং চিঠিতে পুরনো সদস্যদের আগামী ৩১ মার্চ প্রশিক্ষণে অংশ নেয়ার জন্য বলা হয়েছে। বৈঠকে স্থানীয় প্রশাসন ও নিরাপত্তা বাহিনীর কর্মকর্তারা বিষয়টি স্বীকার করে আতংকিত লোকজনকে ভয় না পাওয়ার এবং সংগঠনটিতে যোগ না দেয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন। সীমান্ত এলাকায় বিজিবি সতর্ক রয়েছে বলে জানিয়েছেন বিজিবি কর্মকর্তা।

তবে প্রশ্ন উঠেছে, মিয়ানমারের একটি সশস্ত্র স্বাধীনতাকামী গেরিলা সংগঠন বাংলাদেশ সীমান্তে সদস্য সংগ্রহের জন্য পাড়ায় পাড়ায় চিঠি হঠাৎ করে কি উদ্দেশ্যে চিঠি দিলো? এছাড়া চিঠিতে কোন স্বাক্ষর বা সিল ছিলনা। সীমান্তের পাহাড়ী যুবকরা স্থানীয় প্রশাসন থেকে বাড়তি সুবিধা নেয়ার জন্য এ চিঠি প্রকাশ করে গুজব ছড়াচ্ছে কিনা- এ বিষয়টিও খতিয়ে দেখছে স্থানীয় নিরাপত্তা সংশ্লিষ্টরা।

স্থানীয় সূত্র দাবী করেছে, সীমান্তের বিভিন্ন এলাকা থেকে এ পর্যন্ত ১০০ জন বাংলাদেশী পাহাড়ী যুবককে বিচ্ছিন্নতাবাদী দল আরাকান আর্মিতে (এএ) যোগদান করেছে। তাদের সদস্য সংগ্রহ ও নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সংগ্রহের কাজে থানছি ও আলীকদমের পাহাড়ী স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কেউ কেউ জড়িত রয়েছে বলে একধিক সূত্র দাবী করেছে।

গোয়েন্দা সূত্র জানায়, বিচ্ছিন্নতাবাদী আরাকান আর্মির (এএ) সাথে দীর্ঘ ধরে সখ্যতা গড়ে তোলার চেষ্ঠা করছে পার্বত্য চট্টগ্রামের একটি আঞ্চলিক সন্ত্রাসী সংগঠন।

ইতোপূর্বে বাংলাদেশে গ্রেফতার হওয়া আরাকান আর্মির অন্যতম শীর্ষ নেতা রেনিন সোয়ে’র সাথে এই সংগঠনের শীর্ষ নেতার বৈঠক ও সম্পর্কের কথা ও ছবি বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। রেনিন সোয়ে’র আটককৃত ল্যাপটপ থেকে উদ্ধারকৃত বিভিন্ন চিঠি ও বিভিন্ন তথ্যে দেখা গেছে, সংগঠনটি আরাকান আর্মির মাধ্যমে মিয়ানমার থেকে প্রশিক্ষণ, অর্থ ও অস্ত্র সহায়তা পাওয়ার চেষ্টা করেছে। রেনিন সোয়ে সেসময় বাংলাদেশ হয়ে আরাকান আর্মির জন্য বেশ কিছু ঘোড়া ও রসদ সরবরাহের চেষ্টা করেছিল। সে কাজে স্থানীয় ঐ সংগঠনটির নেতৃবন্দ সহায়তা করেছিল। এ ঘটনায় বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনীর সাথে আরাকান আর্মির খন্ড যুদ্ধও হয়েছিল সেসময়। প্রশ্ন উঠেছে, এই সংগঠনটিই কি ভিন্ন কোনো উদ্দেশ্য নিয়ে এ বিষয়টিকে সামনে নিয়ে এসেছে কিনা?

স্থানীয় কতিপয় নেতা মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদী দল আরাকান আর্মির (এএ) কে দীর্ঘ দিন অর্থের বিনিময়ে সাহায্য সহযোগিতা করার স্থানীয়দের অভিযোগ রয়েছে।

সূত্র জানায়, জাপারাং পাড়া হতে যোহন ত্রিপুরাসহ ৬জন, তংক্ষং পাড়া হতে আথুইমং মারমা ছেলেসহ ১জন, বকুলি মারমা ভাইস চেয়ারম্যান পাড়া হতে ১০ জন, মংথোয়াইম্যা মারমা রনি’র শশুর পাড়া হতে ৩জন, ছোট মদক সাখয় পাড়া হতে ৩জন, প্রুসাঅং পাড়া হতে ৬জন, পনেডং পাড়া অর্থাৎ বর্তমান হ্লাথোয়াই প্রু মেম্বার পাড়া হতে ১০জন,খ্যাইসাপ্রু পাড়া হতে ৩জন এবং ২০১৬ সালে রনি ভাটিজা উবানু মারমার নেতৃত্বে বান্দরবানের খানসামা পাড়া হতে ৩জনকে এ বাহিনীতে পাঠানো হয়েছে বলে জানা গেছে।

বর্তমানে প্রায় শতাধিক পাহাড়ী যুবক আরাকান আর্মিতে রয়েছে বলে স্থানীয় সূত্র দাবী করে। তারা মূলত আরাকান আর্মির সাথে স্থানীয় সশস্ত্র সংগঠনের যোগসূত্র পালন করে এবং তাদের সাপ্লাই কাজে সহায়তা করে। একই সাথে তারা স্থানীয় পাহাড়ী সন্ত্রাসী সংগঠনের নাম দিয়ে চাঁদা আদায় ও সন্ত্রাসী কার্যকলাপ চালিয়ে থাকে।

Exit mobile version