বান্দরবানের ফুলঝাড়ুর চাহিদা বাড়ছে সারাদেশে

1543479_661105933926201_1155953398_n

নিজস্ব প্রতিবেদক:

সারাদেশে ফুলঝাড়ুর চাহিদা বেড়েছে ব্যাপকহারে। সমতল ও পাহাড়ের জনগোষ্ঠীর চাহিদা মেটাতে ফুলঝাড়ুর যোগান দিচ্ছে তিন পার্বত্য জেলা। পাহাড়ের ফুলঝাড়ুর চাহিদা বাড়ছে দিনদিন। পাহাড়ের ফুলঝাড়ু দেখতে যেমন সুন্দর তেমনি টেকসই। তাই পার্বত্য চট্টগ্রামের ফুলঝাড়ু বিক্রি করে স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছেন অনেকে।

চৈত্র থেকে বৈশাখ মাস হলো ফুলঝাড়ু তোলার মৌসুম। এ সময়ে জুম চাষের জন্য পাহাড় পোড়ানো শুরু হয়। জুমে আগুন দেয়ার আগে আগেই ফুলঝাড়ু কেটে নেওয়া হয়। তারপর রোদে শুকিয়ে ও আঁটি বানিয়ে ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করেন স্থানীয়রা। ঝাড়ু সংগ্রহের পেশায় নিয়োজিতরা জেলার রোয়াংছড়ি, রুমা, থানচি, লামা, আলীকদম, মাঝেরপাড়া, রেইছা, সাতকমল পাড়া, ডলুপাড়াসহ বিভিন্ন স্থান থেকে ফুলঝাড়ু সংগ্রহ করেন।

পাহাড়ী পরিবারগুলোও জুমচাষ শেষে ফেরার পথে ফুলঝাড়ু সংগ্রহ করে ব্যাপারীদের কাছে বিক্রি করে থাকে। এছাড়া ফুলঝাড়ু সংগ্রহের সঙ্গে জড়িত এ অঞ্চলের অনেক নারী। যা তাদের বাড়তি উপাজর্নের পথ বাতলে দিয়েছে। এভাবে ফুলঝাড়ু সংগ্রহ এবং রোদে শুকিয়ে ব্যবহারের উপযোগী করার পেশায় জড়িত রয়েছেন কয়েকহাজার নারী-পুরুষ। যা তাদের আর্থিক সংকট নিরসনে ভূমিকা রাখছে।

মাসুমা আক্তার, সালমা খাতুনসহ কয়েকজন ঝাড়ু সংগহকারী জানান, দীর্ঘদিন ধরে তারা পাহাড় থেকে ফুলঝাড়ু সংগ্রহ করে এবং রোদে শুকিয়ে আঁটি তৈরি করে ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করছেন। প্রতিদিন তারা ৩০০থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত আয় করেন। এ টাকা দিয়ে তাদের সংসার মোটামুটি চলে। তারা মনে করেন একে পূর্ণাঙ্গ ব্যবসা আকারে নিতে প্রাতিষ্ঠানিক সহযোগিতার দরকার রয়েছে। এছাড়া ফুলঝাড়ু পাইকারি দামে কিনে রোদে শুকিয়ে আঁটি বানিয়ে ঢাকা-চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের বাজারে সরবরাহ করছেন কয়েকজন ব্যবসায়ী। বাজারে প্রতি হাজার ঝাড়ুর কঞ্চি ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকায় বিক্রি হয়।

এছাড়া প্রতিদিন একজন লোক ১০০০ থেকে ১৫০০ ফুলঝাড়ুর কঞ্চির বিনিময়ে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা আয় করতে পারছেন। বর্তমানে স্থানীয় বাজারগুলোতে প্রতিটি ফুলঝাড়ুর আঁটি বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ২৫ টাকায়। অন্যদিকে চট্টগ্রাম ও ঢাকার বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৬০ টাকায়। ফুলঝাড়ু ব্যবসায়ী মোহাম্মদ মাহাবুব বলেন, ১৫ বছর ধরে পাইকারি দামে ফুলঝাড়ু কিনে ট্রাকে করে ঢাকা-চট্টগ্রামে নিয়ে বিক্রি করি। ১৯৯৮ সালে এ ব্যবসা শুরু করি। স্থানীয়দের কাছ থেকে ৭/৮ টাকায় প্রতিটি ফুলঝাড়ুর আঁটি কিনে ঢাকা-চট্টগ্রামে ১৫ থেকে ২০ টাকায় বিক্রি করি। খরচ বাদ দিয়ে প্রতি হাজারে ৩০০০ থেকে ৪০০০ টাকা লাভ হয়। বর্তমানে তার অধীনে দুই শতাধিক নারী-পুরুষ ঝাড়ু রোদে শুকানো এবং মোছা বানানোর কাজে নিয়োজিত রয়েছেন।

তিনি মনে করেন সরকারি ঋণ সুবিধা পেলে ফুলঝাড়ু ব্যবসা বান্দরবানে আরও বেশি প্রসার লাভ করবে। পাহাড়ে আরও অনেক নারী শ্রমিকের কর্মসংস্থানও হবে। বনবিভাগের আলীকদম রেঞ্জ কর্মকর্তা মমিনুল করীম জানান, পাহাড়ের উলফুল- এটি ফুলঝাড়ু হিসেবে এখন দেশের বিভিন্ন স্থানে যাচ্ছে। যা পাহাড়ে কুটির শিল্পের ভুমিকা রাখছে। ফুলঝাড়ু রপ্তানী হওয়ায় সরকার রাজস্ব পাচ্ছে এবং পাহাড় থেকে ফুলঝাড়ু সংগ্রহ করে ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে স্থানীয় পাহাড়ী-বাঙ্গালীরা আয় করছে। ফুলঝাড়ু লাগাতে হয় না। এটি প্রাকৃতিকভাবেই হয়ে থাকে।

সাধারণত জুমচাষের আগে আগেই ফুলঝাড়ু কাটা হয়। এরপর পাহাড় পুড়িয়ে দেওয়া হয়। মাটির গভীরে এর বীজ লুকিয়ে থাকে। পরে বৃষ্টির পানি পেয়ে সেখান আবার জম্মায়। কিন্তু শিল্প আকারে এর বিকাশ ও উপযোগিতা নিয়ে এখনো কোনো কাজ হয়নি। এমনকি জুমচাষ বা অন্য কোনো কারণে এটি ঝুঁকির মুখে পড়ছে কিনা তাই জানা যায় না। তাই ফলঝাড়ুর ব্যবসাকে পরিপূর্ণ রূপ দিতে আরও তথ্য ও গবেষণা দরকার।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন