parbattanews

বান্দরবানের রুমা সীমান্তে ২ শতাধিক উপজাতীয় শরণার্থীর অনুপ্রবেশ!

নিজস্ব প্রতিনিধি:
বান্দরবানের রুমা উপজেলার রেমাক্রী প্রানসা সীমান্ত দিয়ে মিয়ানমারের বিভিন্ন উপজাতীয় জনগোষ্ঠীর দুই শতাধিক শরণার্থী বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে!

বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত এ নিয়ে সীমান্তের চাইক্ষাংপাড়ায় শরণার্থীর সংখ্যা গিয়ে দাঁড়িয়েছে ২০৩ জনে। এই শরণার্থি দলের সদস্যরা রোহিঙ্গা বা মুসলিম নয়, খুমী ও রাখাইন, ধর্মে খ্রিস্টান ও বৌদ্ধ।

তারা সবাই বর্তমানে সীমান্তের চাইক্ষাংপাড়ায় খোলা জায়গায় ত্রিপল টেনে তাঁবুর মতো করে বসবাস করছে। তীব্র শীতের মধ্যে শরণার্থীদের শিশু ও বৃদ্ধরা চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে।

এদের মধ্যে শিশু রয়েছে ৫০ জনের বেশী। এছাড়াও বম সম্প্রদায়ের প্রায় ১৫টি পরিবার রুমা সীমান্ত দিয়ে ঢুকে নিজ সম্প্রদায়ের বিভিন্ন আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে।

বিজিবি ও স্থানীয়রা জানায়, মিয়ানমারের চীন রাজ্যের প্লাতোয়া জেলায় সম্প্রতি মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদী গ্রুপ আরাকান আর্মির সঙ্গে সে দেশের সেনাবাহিনীর ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সীমান্তের ওপারে খামংওয়া, তরোয়াইন, কান্তালিন, এলাকাগুলোর বিভিন্ন পাড়ায় ব্যাপক গোলাগুলি এবং হেলিকাপ্টার থেকে বোমাবর্ষণ করছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী।

ঘরে ঘরে তল্লাশি করে লোকজনদের ধরে নিয়ে যাচ্ছে সেনারা। আতঙ্কে শরণার্থীরা মিয়ানমার সীমান্তবর্তী বান্দরবানের চাইক্ষাংপাড়া, নেপুপাড়াসহ কয়েকটি পাড়ায় অবস্থানের জন্য অনুপ্রবেশের চেষ্টা চালাচ্ছে।

এদিকে সীমান্তের ওপারে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সাথে আরাকান আর্মির সদস্যদের যুদ্ধ অব্যাহত থাকায় সীমান্তে আরো মিয়ানমারের উপজাতীয় শরণর্থিরা প্রবেশ করতে পারে বলে আশঙ্কা করছে স্থানীয়রা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মিয়ানমারের চীন ও আরাকান প্র্রদেশের বিপুল পরিমাণ উপজাতি সম্প্রদায়ের লোক গৃহহীন হয়ে পড়েছে। তারাও বাংলাদেশ সীমান্তের দিকে আসতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

জেলার মিয়ানমার সীমান্তবর্তী রুমা উপজেলার দুর্গম রেমাক্রী পাংসা ইউনিয়নের চাইক্ষাংপাড়ার অপর প্রান্তে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে আরও মিয়ানমারের শরণার্থী অবস্থান করছে। তারাও বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের জন্য অগ্রসর হচ্ছে। শরণার্থীদের পার্শ্ববর্তী এলাকার পাড়াগুলো থেকে খাদ্য দিয়ে সহায়তা করছে স্থানীয়রা।

এদিকে সীমান্তের শরণার্থীদের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষেণ করতে সেখানে সেনাবাহিনী ও বিজিবির সমন্বয়ে একটি পর্যবেক্ষণ টিম পাঠানো হয়েছে। পর্যবেক্ষণটি টিমটি বুধবার ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে বলে জানা গেছে।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদেরও ঘটনাস্থলে পাঠিয়েছে প্রশাসন। এ ছাড়া নিরাপত্তা বাহিনীর বেশ কয়েকটি টহলদল সীমান্তে নিরাপত্তা জোরদার করেছে। বুধবার হেলিকপ্টারে সদস্যদের মিয়ানমার সীমান্ত এলাকায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

বিজিবির কক্সবাজার রিজিয়নের রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জাহেদুর রহমান জানান, সীমান্ত এলাকায় শরণার্থীদের বর্তমান পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে সেখানে নিরাপত্তা বাহিনীর টিম পাঠানো হয়েছে। শরণার্থীদের মনোভাব জানার পর সরকারের উচ্চপর্যায়ের সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে তাদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

প্রসঙ্গত, গত বছরের ডিসেম্বর থেকে মিয়ানমারের রাখাইন ও চীন রাজ্যে সেখানকার শক্তিশালী বিচ্ছিন্নতাবাদী গ্রুপ আরাকান আর্মি সে দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপি ও সেনাবাহিনীর বেশ কয়েকটি স্থাপনায় হামলা করে। এরপর থেকে সেখানে সেনাবাহিনীর সঙ্গে আরাকান আর্মির ব্যাপক সংঘর্ষ চলছে।

অপরদিকে ২০১৭ সালের আগস্টে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে রোহিঙ্গাদের ব্যাপক সংঘর্ষের পর সেখান থেকে ৭ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসে আশ্রয় নেয়।

Exit mobile version