parbattanews

বান্দরবানের লামায় পাহাড়িদের উচ্ছেদের চেষ্টা রাবার কোম্পানির

সম্প্রতি পুড়িয়ে দেওয়া হয় লামার তিন পাড়ার মানুষের জুমের জমি । ফাইল ছবি

বান্দরবানের লামা উপজেলার ম্রোদের জুমের বাগান পুড়িয়ে দেওয়া ও নানাভাবে হয়রানি করে উচ্ছেদ তৎপরতায় উদ্বেগ জানিয়েছেন দেশের ৩৬ নাগরিক। গত এপ্রিলে লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের বিরুদ্ধে লামার লাংকম ম্রো পাড়ায় জুমের বাগান পুড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। তখন কোম্পানিটির বিরুদ্ধে পাহাড়িদের পানীয় জলের ঝিরিতে বিষ দেওয়া এবং মারধরের অভিযোগ উঠেছিল।

সর্বশেষ বিবৃতিতে গত (২৪ সেপ্টেম্বর) বিবৃতিতে বলা হয়ে লামায় ম্রোদের রোপন করা ৩০০ কলাগাছ কেটে ফেলা হয়। এছাড়া বেশ কয়েকটি মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে বলেও বলা হয়।

বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, গত (২৭ এপ্রিল) লামা উপজেলার লাংকম পাড়া, জয় চন্দ্র কারবারি পাড়া ও রেংয়েন কারবারি পাড়ায় প্রায় ১শ একর জুমের ধান, বাঁশ, আম, কলা, আনারসসহ বিভিন্ন গাছ পুড়িয়ে দেওয়া হয়। ক্ষতিগ্রস্তদের অভিযোগ, জমি দখলের জন্য লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড পরিকল্পিতভাবে আগুন লাগিয়েছে। এছাড়াও গত (৬ সেপ্টেম্বর) পাহাড়িদের পানির একমাত্র উৎস পাহাড়ি ঝিরিতে বিষ মেশানো হয়। সেখান থেকে আর পানীয় জল সংগ্রহ করা যাচ্ছে না। এ ব্যাপারে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হলেও এখন পর্যন্ত প্রশাসন
অপরাধীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়নি।

বিবৃতিতে আরো উল্লেখ হয়, গত ১ সেপ্টেম্বর রাবার কোম্পানির লোকেরা লাংকম ম্রোসহ ৪ জন ম্রোর চাষ করা খেত থেকে ২৫ মণের বেশি মিষ্টি কুমড়া লুট করে নিয়ে যায় এবং সর্বশেষ ২৪ সেপ্টেম্বর রেং ইয়ুং ম্রোর বাগানে রোপণ করা ৩০০ কলাগাছ কেটে দেয়। আগের ঘটনাগুলোতে পুলিশ বা প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় তারা এখন অভিযোগ জানাতেও ভয় পাচ্ছেন। অথচ কোম্পানির মিথ্যা মামলায় অভিযুক্তদের গ্রেফতার করতে পুলিশ বেশ তৎপরতা ছিল। প্রশাসনের পক্ষ থেকেও জমি দখলমুক্ত করার কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি; বরং পরিবার প্রতি মাত্র ৫ একর জায়গা নিয়ে বাকি জায়গা রাবার কোম্পানিকে ছেড়ে দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। সঙ্গত কারণেই পাহাড়িরা এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে।

বিবৃতিতে উল্লেখ হয়, রাবার কোম্পানিটি তাদের নামে ১৬শ একর সম্পত্তি লিজ থাকার কথা দাবি করলেও বাস্তবে তারা অনেক বেশি জমি দখলে রেখেছে।

আইন লঙ্ঘন করে ৬৪ জন অংশীদার মিলে রাবার কোম্পানিটি প্রতিষ্ঠা করেছে উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, লিজ নেওয়া জমিতে ২৫ বছরেও রাবার গাছ রোপণ করা হয়নি। বান্দরবন জেলা পরিষদের গঠিত কমিটির প্রতিবেদনে এটা উঠে এসেছে। তারা লিজ বাতিলের সুপারিশ করলেও তা প্রতিপালন করা হয়নি।

রাবার কোম্পানির ৬৪ জন শেয়ার হোল্ডারদের মধ্যে বেশ কয়েকজন বান্দরবানের জেলা প্রশাসকসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ছিলেন। ফলে লিজ পাওয়ার ক্ষেত্রে স্বার্থের দ্বন্দ্বের বিষয়টি স্পষ্ট। শুধু তাই নয়, এদের মধ্যে কয়েকজনের পরিবারের একাধিক সদস্য ১৯৯১ সাল থেকে ১৯৯৬ সালের মধ্যে ২৫ একর করে ভূমি লিজ পেয়েছেন।

বিবৃতি দাতারা বলেন, ম্রো এবং ত্রিপুরাদের ভূমিসহ সকল আইনি ও প্রথাগত অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। তাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। প্রতারণামূলকভাবে ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে নেওয়া লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রির লিজ বাতিল করতে হবে। এ লিজ প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িতদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। রাবার কোম্পানিটি যেসব অপরাধ করেছে তার বিচার বিভাগীয় তদন্ত করে অপরাধের সাথে সংশ্লিষ্ট সকলকে বিচারের আওতায় এনে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন সুলতানা কামাল, সালেহ উদ্দিন আহমেদ, পারভীন হাসান, খুশী কবির, আনু মুহাম্মদ, জেড আই খান পান্না, ইফতেখারুজ্জামান, রানা দাশগুপ্ত, সুব্রত চৌধুরী, কাজল দেবনাথ, তবারক হোসেইন, আবুল বারকাত, শামসুল হুদা, মেঘনা গুহঠাকুরতা, স্বপন আদনান, শহিদুল আলম, রাহনুমা আহমেদ, সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, জাকির হোসেন, শাহনাজ হুদা, সঞ্জীব দ্রং, মোহাম্মদ তানজিম উদ্দিন খান, সুমাইয়া খায়ের, সামিনা লুৎফা, মো. নুর খান, রেজাউল করিম চৌধুরী, খাইরুল ইসলাম চৌধুরী, পারভেজ হাসিম, জোবাইদা নাসরীন, জ্যোতির্ময় বড়ুয়া, তাসনীম সিরাজ মাহবুব, ফারাহ তানজীন, দীপায়ন খীসা, লেলুং খুমি, হানা শামস্ আহমেদ ও মাহমুদ রহমান।

Exit mobile version