parbattanews

বান্দরবানে অবাধে চলছে পাথর উত্তোলন: মরে যাচ্ছে প্রাকৃতিক ঝিরি

বান্দরবানের বিভিন্ন উপজেলায় প্রাকৃতিক ঝিরি ঝর্ণা থেকে নির্বিচারে পাথর উত্তোলন অব্যাহত রয়েছে। জেলা প্রশাসন পাথর উত্তোলনের কোন প্রকার অনুমতি না দিলেও একশ্রেণির মানুষ প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে এই কার্যক্রম চালাচ্ছে। এতে করে হুমকির মুখে পড়েছে বান্দরবানের পাহাড় প্রকৃতি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বান্দরবানের থানচি উপজেলার রেমাক্রি, নাফাখুম, আমিয়াখুম, সাতভাইখুম, তাজিংডং, রেমাক্রী মুখ, নাক্ষ্যংখুম, ম্রোপাড়া, কাইতংপাড়া ঝিরি, লামা উপজেলার বনপুর, ফাইতং, আজিজনগর, ফাসিয়াখালী, কাঁঠাল ছড়া, গয়ালমারা, ইয়াংছা, বদুরঝিরি, আলীকদম উপজেলার মাতামুহুরী সংরক্ষিত বনাঞ্চলে ফুটের ঝিরি, বড়বেতি, ছোটবেতি শাখা প্রশাখা, পানঝিরি, নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার দোছড়ি, ঘুমধুম, সোনাইছড়িসহ বিভিন্ন স্থান থেকে পাথর উত্তোলন করা হচ্ছে। পরবর্তী এসব পাথর গহীণ অরণ্যে মেসিনে ভেঙ্গে বিক্রি করা হচ্ছে সরকারী বিভিন্ন উন্নয়ন মূলক কাজে।

স্থানীয়রা জানান, বহিরাগতরা ও এলাকার অসাধু ব্যবসায়ী একে অপরের যোগসাজসে পাহাড় কেটে, মাটি খুঁড়ে, ঝিড়ি ঝর্ণা থেকে পাথর আহরণ করছে। এতে করে পাহাড়ে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। তাছাড়া ঝিরি ও পাহাড় খুঁড়ে পাথর উত্তোলনের ফলে এলাকায় দেখা দিয়েছে চরম পানির সংকট।

এ বিষয়ে বান্দরবান পার্বত্য ভূমি বন সংরক্ষণ কমিটির নেতা জুয়ামলিয়ান অ¤øাই জানান, প্রাকৃতিকসম্পদ রক্ষায় সরকারের স্বাদিচ্ছা প্রয়োজন। সংশ্লিষ্ট প্রশাসন ও স্থানীয়রা সচেতন হলে পাথর লুট বন্ধ করা সম্ভব ।

জানা গেছে, সরকারী খনিজ তথ্য কণিকায় লামা উপজেলার ২৮৫নং সাঙ্গু মৌজার কাপঝিরির শাখা প্রশাখা ও ২৮৪নং ইয়াংছা মৌজা সাধারণ পাথর কোয়ারি সমৃদ্ধ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত রয়েছে। কিন্তু পাথরখেকোরা অবৈধভাবে সংরক্ষিত এই খনিজ সম্পদগুলো উত্তোলনের পর নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ২৮৩নং ঈদগড় মৌজার পাহাড়ী পথ পাড়ি দিয়ে গয়ালমারা, সাপেরঘাড়া, হারগাজা, ডুলহাজারা সড়ক দিয়ে বিভিন্ন স্থানে পাচার করা হচ্ছে।

স্থানীয়রা জানান, চকরিয়া দোলহাজারা এলাকার জনৈক এরশাদ, ভুট্টু, কামাল, শাহাবউদ্দিনসহ কয়েকটি সিন্ডিকেট দীর্ঘদিন যাবত এসব পাথর লুট কাজে লিপ্ত রয়েছে।

২৮৫নং সাঙ্গু মৌজা এলাকার বাসিন্দা ও কয়েকজন কাঠুরিয়া জানান, উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন এক ধরণের পাথর উত্তোলন যন্ত্র বোমা মেশিন ব্যবহার করে ২৮৫নং মৌজার বিভিন্ন স্থান থেকে পাথর উত্তোলন করা হয়। মাটির গভীর থেকে এসব পাথর উত্তোলন করে প্রকাশ্য দিবালোকে ট্রাকযোগে পাচার করা হয়। এদিকে আলীকদম-নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা সংযোগ সড়কে এলজিইডির বিভিন্ন উন্নয়ন কাজে ব্যবহার হচ্ছে পাহাড়ী পাথর। বিশেষ করে দোছড়ি ইউনিয়নের কুরিক্ষ্যং, পাইনছড়ি এলাকার স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তি ও ঠিকাদার মিলে প্রাকৃতিক ঝিরি ঝর্ণা ও পাহাড়ী পাথর তুলে নিচ্ছে।

বান্দরবান পরিবেশ অধিদপ্তরের সিনিয়র কেমিস্ট এ.কে.এম. ছামিউল আলম কুরসী বলেন, অবৈধভাবে পাথর উত্তোলনের ফলে প্রাকৃতিক পরিবেশ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে এবং প্রাকৃতিক ঝিড়ি মরে যাচ্ছে। ফলে পাহাড়ে পানির উৎস কমে গেছে।

এই প্রসঙ্গে জানতে যোগাযোগ করা হলে বান্দরবান জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি বলেন, পরিবেশ প্রকৃতি রক্ষা করা আমাদের সবার দায়িত্ব। বান্দরবানে যেহেতু পাথরের কোন পারমিট নেই সেহেতু পাথর নিলাম দেওয়ারও কোন সুযোগ নেই। খুব শীঘ্রই প্রাকৃতিক এসব পাথরের বিষয়ে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Exit mobile version