বান্দরবানে উৎপাদিত বিটি-২ চা বাজারে: পাল্টে দিতে পারে পার্বত্যাঞ্চলের অর্থনীতি

Bandarban Tee 13.7.2013

জমির উদ্দিন:

বান্দরবানে চা চাষীরা বিটি-২ জাতের চা উৎপাদন শুরু করেছে। দির্ঘদিন যাবৎ চা উৎপাদন শুরু হলেও শ্রমিক ও পরিবহন খরচের কারণে লাভের মুখ দেখছে না চা চাষীরা। অন্যদিকে ব্যাংক ঋণ শোধ করতে না পারায় দিনদিন সুদ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বান্দরবান চা চাষী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মংক্যচিং চৌধুরী জানান, জেলার চা চাষীরা চা বাগান থেকে বিটি-২ (উন্নত মানের চা) উৎপাদন শুরু করেছে। চাষীরা সপ্তাহে প্রতিটি বাগান থেকে ২/৩’শ কেজি চা উৎপাদন করছে। প্রতিমাসে একজন চাষী প্রায় ৯/১২’শ কেজি চা বাজারজাত করে থাকে।

তিনি জানান, জেলার বাগানগুলো নতুন তাই চা উৎপাদন কম। আগামী দু’য়েক বছরের মধ্যে এসব বাগান থেকে আরো দ্বিগুন চা উৎপাদন করা সম্ভব হবে। তিনি আরো জানান, বান্দরবানে এখনো দক্ষ শ্রমিক গড়ে উঠেনি। তাই বাগান সৃজন ও পাতা উত্তোলনে দক্ষ শ্রমিক না পাওয়ায় খরচের পরিমান বেশী হচ্ছে। তাই চাষীরা লাভের মুখ দেখছেনা। তাছাড়া বান্দরবানে কারখানা না থাকায় পরিবহণ খরচও বেশি তাই  চাষীরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

সদর উপজেলার লাইলুনপি পাড়ার চা চাষী মিং ময় বম জানান, তিনি বাগান থেকে প্রতি সপ্তাহ প্রায় এক থেকে ২’শ কেজি চা উত্তোলন করে থাকেন। কিন্তু শ্রমিক ও পরিবহণ খরচ বেশি পড়ায় তিনি চা পাতা বিক্রি করে লাভ করতে পাচ্ছেন না।
বান্দরবান চা অফিস সূত্রে জানা গেছে, বান্দরবানে বর্তমানে ১৩০জন চা চাষী রয়েছেন। প্রতিজন চাষী গড়ে ৫ একর করে ৩২৫ হেক্টর পাহাড়ী জমিতে চা বাগান করেছেন। ইতিমধ্যে ৭০জন চাষী ১৬৫হেক্টর বাগান থেকে চা পাতা উৎপাদন করছে। এসব উৎপাদিত চা পাতা বিক্রি করে প্রতিজন চাষী সপ্তাহে ৩/৪ হাজার এবং মোট প্রতিমাসে ১৫/১৬ হাজার টাকা আয় করছেন।

সূত্র জানায়, বান্দরবানে চা বাগান সৃজন হওয়ায় পাহাড়ী-বাঙ্গালী প্রায় ৩’শ পরিবারের কর্মসংস্থান হয়েছে। এছাড়াও আগামী দু’য়েক বছর মধ্যে বাদবাকি প্রায় ৯০-৯৫ জন চাষী ২৯৫ হেক্টর জমি থেকে চা উৎপাদন শুরু করার সম্ভবনা রয়েছে। সূত্র আরো জানায়, চা উৎপাদন ভালো হওয়ায় প্রতিদিন স্থানীয় উপজাতী-বাঙ্গালী চাষীরা চা বাগান সৃজনে আগ্রহী হয়ে উঠছে। গড়ে প্রতিদিন ২/৩টি করে আবেদন আসছে। বর্তমানে চা অফিসে প্রায় ৭০টি’রও বেশি আবেদন জমা রয়েছে। সরকার নতুন বাগান সৃজনে প্রতি হেক্টরে ১ লাখ ৩৯ হাজার টাকা করে চাষীদের ঋণ দিচ্ছে। এরমধ্যে চা বোর্ড  প্রতি হেক্টরে চাষীদের ২০ হাজার টাকা এবং সরকার প্রতি গাছে ১টাকা করে ভর্তুকি দিচ্ছেন।
এদিকে চাষীরা জানান, সরকার হেক্টর প্রতি ১ লাখ ৩৯ হাজার টাকা ঋণ দিলেও চা বাগান সৃজনে চাষীদের খরচ হচ্ছে প্রায় ৩ লাখ থেকে সাড়ে ৩ লাখ টাকা। তারা ঋণ আরো বৃদ্ধি করার দাবী জানিয়েছেন। প্রকল্প তথ্য সুত্রে জানা গেছে, দেশে চায়ের উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষ্যে ২০০২ সালে বাংলাদেশ চা বোর্ড ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের আর্থিক সহায়তায় সারাদেশে চা চাষের উপযোগী জমি খুঁজে বের করতে জরিপ চালায়। এ জরিপের কাজ শেষে হওয়ার পর তিন পার্বত্যাঞ্চলে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যে ২০০৩ সালে তৎকালীন সরকার তিন পার্বত্যাঞ্চলে ক্ষুদ্র আয়তনে ‘চা চাষ প্রকল্প’ নামে প্রকল্প গ্রহণ করে।

প্রাথমিক পর্যায়ে এ জরিপে পার্বত্য চট্রগামে ৪৬,৮৭৫ হেক্টর জমিতে ক্ষুদ্রায়তনে চা চাষ করার সম্ভাবনার কথা জানানো হয়। এরমধ্যে বান্দরবানে ২৫.২২০ হেক্টর, খাগড়াছড়িতে ১৪,৯৩৪ হেক্টর ও রাঙ্গামাটিতে ৬,৭২৫ হেক্টর জমিতে চা চাষের সম্ভাবনা রয়েছে বলে জরিপে বলা হয়। জরিপের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ চা বোর্ড ২০০৩সালে পার্বত্য চট্রগ্রামে ক্ষুদ্রায়তনে চা চাষের প্রকল্প হাতে নেয়। ঐ সময় থেকে চা চাষ প্রকল্পটি পার্বত্যাঞ্চলে বসবাসরত বিভিন্ন সম্প্রদায়ের লোকজনের মাঝে সাড়া ফেলে।

এদিকে প্রকল্পটি শুরু দিকে বান্দরবান জেলা সদরের ১০০হেক্টর জমিতে চা চাষ করা হয়। এর সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রকল্পের সমীক্ষায় বলা হয়েছে, চা চাষ করা হলে পার্বত্য তিন জেলায় দারিদ্র বিমোচন, মানবসম্পদ উন্নয়ন, আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, অবোকাঠামো উন্নয়ন, ব্যবসায়িক যোগাযোগ এবং সর্বক্ষেত্রে দেশ অর্থনৈতিক ভাবে সাফল্য অর্জন করতে সক্ষম হবে। ২০০২ সালে পরিচালিত জরিপের সমীক্ষায় উল্লিখিত জমিতে চা চাষ করা হলে তা থেকে বছরের প্রায় ১৩০মিলিয়ন কেজি চা উৎপাদন সম্ভব হবে। যার বর্তমান বাজার মূল্য এক হাজার ৪শ’ কোটিরও বেশি। প্রকল্পটি পুরোপরি বাস্তবায়ন হলে ১লক্ষ ২হাজারো বেশি পরিবারের অন্তত ৬লক্ষ মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।

ক্যাপশনঃ বান্দরবানে উত্তোলনকৃত চা পাতা বাজারজাত করতে প্রস্তুত করছে চাষীরা। 

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন