parbattanews

বান্দরবানে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মাতৃভাষার বই পৌঁছায়নি

bandarban-pic-1-1-2017

নিজস্ব প্রতিবেদক
সারাদেশে সব শিক্ষার্থীর হাতে বছরের প্রথম দিনে বিনা মূল্যের নতুন বই তুলে দেবার সরকারি সিদ্ধান্ত থাকা স্বত্ত্বেও দায়িত্বরত প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাদের উদাসীনতায় ১ জানুয়ারি পর্যন্ত ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জন্যে মুদ্রিত বইয়ের একটিও বান্দরবানে পৌঁছেনি। সে কারণে প্রাক প্রাথমিকের বই শিশুদের হাতে তুলে দেয়া যায়নি।

বিষয়টি জানতে পেরে ক্ষুব্ধ হন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর এমপি। তিনি অবিলম্বে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মাতৃভাষার বই নিয়ে আসার জন্যে শিক্ষা কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন।

বান্দরবান ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইন্সটিটিউট অডিটোরিয়ামে বই নিতে এসে বঞ্চিত হওয়া শিশুদের সাথে কথা বলতে চাইলে তারা অনুযোগ করে- সবার বই আসছে। সবাই বই পাচ্ছে। তাহলে আমাদের বই আসবে না কেন?

বছরের প্রথম দিন মায়ের হাত ধরে নতুন বই হাতে পাবার জন্যে ছুটে এসেছিল এনু চিং মারমা, শিপ্রা ত্রিপুরা এবং চিনু চাকমাসহ আরো অনেক শিশু। তারা এসেছিল প্রতিমন্ত্রীর হাত থেকে বই নিতে। কিন্তু বই এসে পৌঁছায়নি জেলা সদরে। তাই বই না পেয়ে খালি হাতেই ফিরে গেছে কোমল মতি শিশুরা।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বান্দরবান জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আনন্দ কিশোর সাহা জানান, প্রাক প্রাথমিক শ্রেণির জন্যে মোট ১১ হাজার ৩১০ সেট বইয়ের চাহিদা পত্র পাঠানো হয়েছে। শনিবার ৩১ ডিসেম্বর রাতে শিক্ষকদের জন্যে কয়েকটি ‘পাঠ সহায়ক বই’ এসেছে। তবে মারমা, চাকমা, ত্রিপুরা,চাকমা মাতৃভাষায় পাঠ দানের কোন বই রবিবার পর্যন্ত না পৌঁছার কারণে প্রাক প্রাথমিক শ্রেণির শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেয়া যায়নি।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের চাহিদা অনুযায়ী মারমা ভাষায় ৪২৩৫ সেট, ত্রিপুরা ভাষাভাষিদের জন্যে ৮৬৫ সেট, চাকমা শিশুদের জন্যে ২০৮ সেট, গারো/তঞ্চঙ্গ্যা শিশুদের জন্যে ৭৩ সেট এবং অন্যান্যদের জন্যে ৬৯২৯ সেট বইয়ের চাহিদা পাঠানো হয়েছে।

অভিযোগ উঠেছে, প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণিতে মারমা, ত্রিপুরা, চাকমা বা গারো শিশু ভর্তি হবার সম্ভাবনা যথাযথ কোন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে না নিয়ে বা এ বিষয়ে কোন জরিপ ছাড়াই দায় এড়াতে তড়িঘড়ি আন্দাজের উপর ভিত্তি করে একটি কল্পিত চাহিদা পত্র পাঠানো হয়েছে। এ কারণে বই বিতরণের নির্ধারিত দিনের আগে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মাতৃভাষায় রচিত প্রাইমারি বই না পৌঁছলেও জেলা বা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারগণ সংশ্লিষ্ট উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবহিত করেনি।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের একটি সূত্র জানায়, বর্তমানে বান্দরবান জেলায় ৩৪৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে ৩ দফায় ২১৯টি পুরাতন স্কুলে প্রাক প্রাথমিক শ্রেণির জন্যে শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। অবশিষ্ট ১২৪টি বিদ্যালয়ে শিক্ষক না থাকায় এসব বিদ্যালয়ে প্রাক প্রাথমিক শ্রেণী চালু করা যায়নি।

সূত্র জানায়, ইউএনডিপি পরিচালিত ৮৩টি বেসরকারি বিদ্যালয়কে সরকারিকরণের প্রক্রিয়া এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।

এদিকে বই বিতরণ অনুষ্ঠানে বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ক্য শৈ হ্লা, জেলা প্রশাসক দিলীপ কুমার বণিক, পুলিশ সুপার সঞ্জিত কুমার রায় এবং জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আনন্দ কিশোর সাহা বক্তব্য দেন। তারা সরকারের কালজয়ী পদক্ষেপের প্রশংসা করে বলেন, এতে শিক্ষার হার বেড়ে যাবে এবং কমে যাবে ঝরে পড়ার হার।

Exit mobile version