parbattanews

বান্দরবানে জুমের পাকা ধান কাটার মহোৎসব

চারিদিকে ছড়িয়ে আছে সবুজের ভরা জুমের ধান। এই ধান-ই বলে দিচ্ছে নবান্নের উৎসবের আগমন ঘটতে চলেছে। প্রতিটি পাহাড়ে এখন পাকা ধানের সুবাস। পাহাড়ি জনগোষ্ঠীরদের প্রধান উৎস জুম চাষ। জুম চাষ পাহাড়িদের আদি পেশা। জুমের পাকা ধানের চাল দিয়ে চলে সারা বছরের খাদ্য। ধান ছাড়াও জুমে বাহারি সবজির চাষ হলুদ, মারফা, মরিচ ,ভুট্টা ও তিলসহ প্রায় ৪০ জাতের সবজির চাষাবাদ করা হয়।

ইতোমধ্যে পাহাড়ের জুমের ধান পেকেছে। উপযুক্ত হয়েছে বিভিন্ন রকমারি ফসল। তাইতো প্রতিটি পাহাড়ের ধুম পড়েছে জুমের ধান কাটার মহোৎসব। দেখা মিলছে পাকাধান কাটতে নারী-পুরুষ উভয় জুমচাষীদের। এ দৃশ্যটি পুরো পার্বত্য জেলার এ সময়ের চিত্রও বটে।

জানা গেছে, বান্দরবানের মোট ৭টি উপজেলায় বসবাসকারী পাহাড়ি পরিবারগুলো প্রায় সকলেই জুম চাষ করে। মারমা, চাকমা, তঞ্চঙ্গ্যা, ম্রো, খুমি, লুসাই, পাংখো, বম, চাকসহ ১১টি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সম্প্রদায়ের অধিকাংশই জুম চাষের ওপর নির্ভরশীল। জুমের উৎপাদিত ধান থেকে বছরের ১২ মাসের অন্তত ৮ মাসের খাদ্যের যোগান মজুদ করে নেয় তারা। এসব কৃষিপণ্য জুমক্ষেত থেকে আহরণ করে জুমের ধান ঘরে তুলতে শুরু করেছেন জুমিয়ারা। তবে পাহাড়ের ভারী বর্ষনের কারণের ধসে গেছে জুমের পাহাড়। যার ফলে ধান ভালো হলেও ফলন নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছে জুমিয়ারা।

জুম চাষিরা জানিয়েছেন, এবারে জেলা ভারী বৃষ্টিতে হয়েছে। যার ফলে কিছু পাহাড়ের জুমের ধান পাহাড়ের পানির ঢলে ভেসে গেছে। অনেক স্থানে চাষ করা জুম পাহাড় ধসে পড়ে গেছে। ভিজা মাটি ভিতরে বিভিন্ন বীজ গুলো পচেঁ গেছে। এখনো জুমের ধান মাটিতে শুয়ে গেছে। সেসব ধান মাটি সাথে মিশে নষ্ট হয়ে গেছে। জুমের ধান ভালো হলেও ফলন নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছে জুমিয়ারা।

বান্দরবান কৃষি বিভাগ তথ্য মতে, ২০২২-২৩ অর্থ বছরে ৮হাজার ৩শত ৭৮ হেক্টর জমিতে জুমের ধান আবাদ হয়েছিল ২০ হাজার ২শত মেট্রিকটন। চলতি ২৩-২৪ বছরে ৭ হাজার ৯শত ৩৩ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে ১৯ হাজার ৮৭ মেট্রিকটন। যা গত বছরে তুলনায় এবার ২ মেট্রিকটন ফলন কম হয়েছে। তাছাড়া জেলায় ভারী বৃষ্টিপাতের কারনে কিছু কিছু স্থানে জুম পাহাড় ধসার ফলে ফলন কম হয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষি বিভাগ।

রুমা বটতলী পাড়া জুম চাষি হ্লাথোয়াচিং মারমা বলেন, জুমের এবার দুই আড়ি ধান লাগানো হয়েছে। এখন পেকে তা কাটতে শুরু করেছি। ভারী বৃষ্টি কারনের জুমের সব ধান মাটিতে পড়ে গেছে। ধান ভালো হলেও ফলন নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়ে গেছি।

একই এলাকার জুম চাষি মংনাৎ মারমা বলেন, সকাল থেকে নারী-পুরুষ মিলে ধান কাটার শুরু হয়েছে। গতবছরে তুলনায় এই বছর ভালো ফলন হয়েছে। কিন্তু কয়েকটি স্থানে ধান নষ্ট হয়ে গেছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, সকাল থেকে নারী-পুরুষ দলবেধে জুমে ধান কাটছে জুমিয়ারা। আবার কেউ জুম ঘরে সেই ধানকে মাড়াই করছেন পা দিয়ে। সেসব ধানকে আবার পাখা সাহায্যে ধান উপযোগী করা হচ্ছে। তবে কয়েকটি জুমে ভারী বৃষ্টির পানিতে জুমে ধান পড়ে গেছে আবার কোথাও কয়েকটি স্থানেও পচে গেছে। শুধু ধান নয় ভুট্টা, মারফা, তিলসহ এবারে তেমন ভালো ফলন হয়নি। তবুও সব কিছু মিলে ভালো ফলন আশা করছেন জুমিয়ারা।

বান্দরবান কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর উপ-পরিচালক এম,এম শাহনেওয়াজ বলেন, এপ্রিল মাসে শুরু দিকে জুমিয়ারা যেসব জুমে বীজ বপন করতে পেরেছে সেসব ধান ভালো হয়েছে। এপ্রিল শেষের দিকে যারা বীজ বপন করেছে সেসব জুমের ধান কিছু বিলম্ব হতে পারে। কারণ ভারী বর্ষণের কারণে কয়েকটি জুমের ধান ভেঙ্গে গেছে নয়ত নষ্ট হয়ে গেছে।

এম এম শাহনেওয়াজ বলেন, প্রতিটি পাহাড়ের এখন জুমের ধান কাটার শুরু হয়েছে। ৮০শতাংশ স্থানীয় জাতের আবাদ করা ধানগুলো অনেক স্থানে কর্তন শুরু করেছে। তাছাড়া ফলন তেমন খারাপ হয় নাই। যেহেতু জুমের ফসল নিমজ্জিত হয় নাই। তাই জুমের ফলন মোটামুটি ঠিক রয়েছে।

Exit mobile version