parbattanews

বান্দরবানে ধর্ম প্রচারের অভাবে বৌদ্ধ ধর্মালম্বীরা খ্রিস্টান ধর্মে দীক্ষিত হচ্ছে

Bandarban pic-13.7.2016
স্টাফ রিপোর্টার
বান্দরবান এক সময় ছিল বৌদ্ধ নগরী। ধর্ম প্রচার ও অর্থনৈতি অবস্থার কারণে দিন দিন বৌদ্ধ ধর্মালম্বীরা খ্রিস্টান ধর্মে দীক্ষিত হচ্ছে। স্বাধীনতা যুদ্ধের পর পর কিছু হিন্দু ধর্মালম্বীরাও খ্রীষ্টান ধর্মে দীক্ষিত হয়েছিল। পরে হিন্দু ধর্ম প্রচার ও নেতাদের বাধার কারণে তা বন্ধ হয়েছে।

বান্দরবান শহরের রাজগুরু কেয়াং ও উজানি পাড়া বৌদ্ধ মন্দিরের মাঝামাঝি এলাকায় স্বাধীনাতা যুদ্ধের আগে গড়ে উঠে ফাতিমা রাণী ক্যাথলিক চার্চ ও মাদার তেরেসা ছাত্রী হোস্টেল। এসব চার্চ বা হোস্টেল প্রতিনিয়ত ধ্বনিত হয় প্রভু যিশুর গুণ কীর্তন। এ হোস্টেলে খ্রিস্টান ছাড়া অন্য ধর্মলম্বীদের ভর্তি হওয়ার সুযোগ কম।

জেলার রুমা, থানছি, লামা, আলীকদম, নাইক্ষংছড়ি ও সদর উপজেলার ত্রিপুরা ও ম্রো পল্লীতে গড়ে তোলা হয়েছে অগনিত গির্জা।

বান্দরবানের চিম্বুক, শৈল প্রপাত এলাকায় বম, ত্রিপুরা, ম্রো ও নাইক্ষংছড়িতে চাকদের খ্রিস্টান বানানো হচ্ছে। অথচ এসব সম্প্রদায়ের জনসাধারণ এক সময় বৌদ্ধ ধর্ম পালন করত।

নানা সূত্রে জানা যায়, দরিদ্র পাহাড়িদের অর্থ-বিত্তের লোভ দেখিয়ে খ্রিস্টান ধর্মে দীক্ষিত করার হার আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে গেছে। গত দুই দশকে পার্বত্য জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে ১৫ হাজারের বেশি পাহাড়ি পরিবারকে খ্রিস্টান বানানো হয়েছে। এসবের জন্য বৌদ্ধ নেতারা বান্দরবান রাজগুরু বৌদ্ধ বিহারের প্রধান ভিক্ষু অধক্ষ্য উ প ঞা জোত থের ( উছহ্লা ভান্তে)কে দায়ী করছেন।

নেতাদের অভিযোগ, রাজগুরু ভান্তে একজন তান্ত্রিক ধর্মগুরু। উনি বাঙালি বৌদ্ধদের মাঝে জাতিগত বিভ্রান্তি, কুসংস্কার, ধনী-গরীবের মধ্য বিভেদ সৃষ্টি করেন।

নেতারা আরও বলেন, জেলা শহরের অন্যতম জনপ্রিয় টুরিস্ট স্পট বুদ্ধ ধাতু জাদী তথা স্বর্ণ জাদী তথা স্বর্ণ মন্দির স্থাপন করে দেশ-বিদেশে সুনাম বৃদ্ধি পাওয়ায় তার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। এরপর তিনি মনোযোগ দেন সাধারণ মানুষের প্রায় ৫০ একর পাহাড় দখল করে হিন্দু ধর্মালম্বীদের আকর্ষণ করতে শহরের বালাঘাটা এলাকায় প্রতিষ্ঠা করেন রাম জাদি বা বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদের তীর্থ স্থান।

বৌদ্ধ নেতাদের অভিযোগ, যেখানে বৌদ্বধর্মালম্বীরা খ্রিস্টান ধর্মে দীক্ষিত হচ্ছে ঐদিকে নজর না দিয়ে এই ধর্মীয় গুরু সাধারণ মানুষের ভূমি দখল করে তীর্থ স্থান নির্মাণ করছেন। এর একটা প্রভাব পড়ে বৌদ্ধধর্মালম্বীদের উপর। আর এসব তীর্থস্থানে মিয়ানমারের গুপ্তচর হিসেবে জেএসএস ও জঙ্গিদের অস্ত্র চালানোর  প্রশিক্ষণও দেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তারা। জঙ্গিদের প্রশিক্ষক আসে মিয়ানমার থেকে। আর দেশের ঢাকা-চট্টগ্রামে ও বিদেশে এসি রুমে ভাষণ প্রদানের চেয়ে রুমা, থানচি, নাইক্ষংছড়ি ও আলিকদমের দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় ধর্ম প্রচার করা বড় জরুরী হয়ে পড়েছে বলেও ধর্মীয় নেতারা জানান।

বান্দরবান সদর পৌর কমিশনার দীলিপ বড়ুয়া জানান, বড়ুয়া সমিতির ২০ একর পাহাড় দখল করে রাম জাদি নির্মাণ করা হয়েছে। এ বিষয়ে আদালতে মামলা চলছে।

নুমংপ্রু জানান, তার কৃষি জমি দখল করছে উ প ঞা জোত থের (উছহ্লা ভান্তে)। তার বাবার জায়গায় দর্শনার্থীর জন্য একটি গণসৌচাগারও তিনি নির্মাণ করেছেন।

বিহারের প্রধান ভিক্ষু অধক্ষ্য উ প ঞা জোত থের (উছহ্লা ভান্তে) মিয়ানমারে থাকায় এসব অভিযোগের বিষয়ে তার মন্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে অভিযোগ অস্বীকার করে রাম জাদির তত্বাবধায়ক শুভনাথ ভান্তে জানান, রাম জাদি কারো ভূমি দখল করে নির্মাণ করা হয়নি। এজায়গা উ প ঞা জোত থের বাবা ও মায়ের জায়গা। অনেকে বড় ভান্তেকে ভূমি দখলবাজ বলে সুনাম নষ্ট করার পায়তারা করা হচ্ছে। ভূমি বিরোধ নিয়ে মামলা চলছে।

স্বর্ণ মন্দির প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পর্যটকরা পবিত্র স্থানে জুতা পয়ে দিয়ে প্রবেশ করে। বুদ্ধ মুর্তিগুলোকে অসম্মান করে। এনিয়ে কিছু বললে পর্যটকরা দায়ীত্বশীলদের সাখে খারাপ ব্যবহার করে। তাই স্বর্ণ মন্দির বন্ধ করা হয়েছে।

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, স্বর্ণ মন্দির প্রশাসনের কঠোর নজর দারীতে রয়েছে। এখানে কোন সন্ত্রাসী বা জঙ্গিীদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয় না।

স্থানীয় সূত্র জানায়, বান্দরবানের শুধু রোয়াংছড়ি উপজেলায় একশ এর বেশি গির্জা আছে। রুমা-থানচি উপজেলার যত গভীরেই যাবেন যেখানে হয়তো মাত্র একটি বাড়ি সেখানেও একটি গির্জা মাথা উচুকরে দাঁড়িয়ে আছে। এসব উপজেলায় পাড়া ভিত্তিক অসংখ্যা গীর্জা রয়েছে যা সরকারীভাবে তালিকাভুক্ত।

বান্দরবানের খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের নেতাদের সূত্র জানান, ১৯১৮ সালে বান্দরবানে প্রথম খ্রিস্টান ধর্ম প্রচার শুরু হয়। পরে ১৯২৮ সালে বম সম্প্রদায় খ্রিস্টান ধর্ম গ্রহণ করে এরপর ত্রিপুরা, ম্রো, খেয়াং, খুমিসহ অন্যান্য সম্প্রদায় খ্রিস্টান ধর্ম গ্রহণ শুরু করে। বর্তমানে বান্দরবান জেলায় ৩০ হাজার ত্রিপুরা এবং ১৫ হাজার বম সম্প্রদায়ের লোক খ্রিস্টান ধর্ম পালন করছেন। এছাড়া মার্মা, ম্রো, খুমি, খেয়াং, পাংখোয়া সম্প্রদায়ের অনেকেই এখন খ্রিস্টান ধর্মে দীাক্ষত হয়েছেন। সব মিলিয়ে ৪০ হাজারেরও বেশি পাহাড়ী খ্রিস্টান ধর্মালম্বী রয়েছে বান্দরবানে।

Exit mobile version