বান্দরবানে ধান সংগ্রহ অভিযান : দূর্গম এলাকার পরিবহণ খরচ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বাধা

fec-image

কৃষকদের উৎপাদিত ধানের ন্যায্য মূল্য দেওয়ার লক্ষ্যে সরকারি ধান সংগ্রহ অভিযান সারাদেশে চললেও বান্দরবানে শুরু হয়েছে অন্তত ২০ দিন পরে। ব্যাপক প্রচার প্রচারণা না হওয়ায় এই অভিযান কৃষকদের মাঝে তেমন সাড়া পড়েনি। দূর্গম এলাকার কৃষকরা জানেই-না সরকার ধান কিনছে। এই কারণে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হবে কিনা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। যদিওবা খাদ্য বিভাগ বলছে নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই অর্জিত হবে লক্ষ্যমাত্রা।

জানা গেছে, এ বছর বান্দরবান জেলায় ১৪শ ২৯ মে: টন ধান সংগ্রহ করার লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে সরকারের খাদ্য বিভাগ। এই জন্য কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সম্প্রতি জেলার ১১ হাজার ৯৭৪ জন কৃষকের নামের তালিকা তৈরি করেছে। এ সব কৃষক রোপা-আমনসহ বিভিন্ন প্রকার সবজি চাষ করে থাকে। তাদের মধ্য থেকে লটারীর মাধ্যমে ১ হাজার ৩৬১ জন কৃষককের নাম চূড়ান্ত করা হয়েছে। কিন্তু এ সব কৃষকের মধ্যে অনেকে পরিবহণ খরচের জন্য সরকারি খাদ্য গুদামে ধান সরবরাহ করতে অনীহা প্রকাশ করেছেন।

এ বিষয়ে জেলা শহরের রেইচা গোয়ালিয়া খোলা গ্রামের কৃষক আবুল বশর এই প্রতিবেদককে জানান- খাদ্য গুদামে না নিয়ে যদি স্থানীয়ভাবে ধান ক্রয় করা হয় কৃষকরা উপকৃত হবে। ১৪ কি:মি দূর থেকে জেলা শহরে ধান নিয়ে যাওয়ার পরিবহণ খরচ অনেক বেশি।

জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বাইশারী ইউনিয়নের কৃষক আব্দুস সাত্তার বলেন- সরকার ২৬ হাজার টাকায় ধান কিনছে এটি অবশ্যই ভালো দিক। কারণ খোলা বাজারে ধান বিক্রি করলে কৃষক পায় এর অর্ধেক মূল্য। তাই ধান সংগ্রহ অভিযান মাইকে প্রচার করলে কৃষকরা আরো বেশি উদ্বুদ্ধ হতো।

বাইশারী ইউনিয়নের আরেক কৃষক আবদুস সালাম বলেন- খোলা বাজারের চেয়ে সরকারকে ধান বিক্রি করলে আমরা উপকৃত হবো ঠিকই কিন্তু এসব ধান আজিজ নগর খাদ্য গুদামে নিয়ে যেতে হবে। আর এই পরিবহণ খরচ কে বহন করবে? এ সময় তিনি বাইশারী খাদ্য গুদামটি পুনরায় চালু করার দাবি জানান।

জেলা খাদ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সাত উপজেলার মধ্যে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় ৪২৭, আলীকদম ১৬২, বান্দরবান সদর ৩২০, লামা ৩৯১, রোয়াংছড়ি ৫২, থানচি ৫ ও রুমা উপজেলা থেকে ৪জন কৃষকের নাম নির্বাচিত করা হয়েছে।

কৃষকদের অভিযোগের বিষয়ে বান্দরবান জেলা খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ কামরুল হাসান বলেছেন- সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে লটারীর মাধ্যমে কৃষকের নামের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। বান্দরবান পাহাড়ি এলাকা হওয়ায় সঠিক সময়ে ধান গুদামে আসেনি।

মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) থেকে ধান সরবরাহ করা হচ্ছে। প্রচার প্রচারণার বিষয়ে তিনি আরো বলেন- গত বছরের চেয়ে বরাদ্দ বাড়ানোর জন্য একটু দেরিতে ধান সংগ্রহ অভিযান শুরু হয়েছে। দূর্গম এলাকায় পর্যাপ্ত কৃষক থাকলে প্রয়োজনে গাড়ি পাঠিয়ে ধান সরবরাহ করা হবে বলে জানান তিনি।

বান্দরবান জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. এ কে এম নাজমুল হক বলেছেন- বড় আমন চাষীদের কাছ থেকে পার্সেন্ট, মাঝারী কৃষকের কাছ থেকে ৩০ পার্সেন্ট এবং ক্ষুদ্র প্রান্তিক চাষীদের কাছ থেকে ১৫ পার্সেন্ট ধান ক্রয় করা হবে। তিনি আরো বলেন- বান্দরবান পাহাড়ি এলাকা হওয়ায় দূর্গম এলাকা থেকে ধান আনতে কৃষকের পরিবহণ খরচ একটু বেশি হয়। তবে এই বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও বিভিন্ন সেমিনারে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে।

জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক নয়ন জ্যোতি চাকমা জানান- কৃষি দপ্তর কর্তৃক সরবরাহকৃত তালিকার মধ্য থেকে লটারীর মাধ্যমে ধান সরবরাহ করা হবে। অত্যান্ত স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ১ হাজার ৩৬১ জনকে নির্বাচিত করা হয়েছে। সংগ্রহ সময় সীমার মধ্যে সম্পূর্ণভাবে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা যাবে বলে মনে করেন এই কর্মকর্তা।

এদিকে সচেতন মহলের মতে, কৃষকদের নায্য মূল্য দেওয়ার স্বার্থে আগামীতে ব্যাপক প্রচার প্রচারণার পর কৃষকদের নামের তালিকা তৈরি করার অনুরোধ জানান। বান্দরবানে ইউনিয়ন এবং বিশেষ ক্ষেত্রে দূর্গম এলাকা থেকেও ধান সরবরাহ করার পাশাপাশি পরিবহণ খরচ নিশ্চিত করলে সরবরাহ অভিযান সফল হবে পাশাপাশি উপকৃত হবে প্রান্তিক চাষীরা।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: কৃষক, খাদ্য বিভাগ
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন