বান্দরবানে পার্বত্য মন্ত্রণালয়ের ৯কোটি টাকার খাদ্যশস্য আত্মসাতের অভিযোগ

courruption-220x118

জমির উদ্দিন :

পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দকৃত বান্দরবানের জনপ্রতিনিধি ও প্রভাবশালী আওয়ামীলীগ নেতার সহযোগীতায় প্রায় ৯ কোটি টাকা খাদ্যশস্য আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। টাকা আত্মসাতের কারণে জেলার উপজেলা চেয়ারম্যান ও ইউপি চেয়ারম্যানদের প্রস্তাবিত ২০১২-১৩ অর্থ সালের উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন না হওয়ায় স্ব-স্ব এলাকায় জনগনের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে। খাদ্যশস্য আত্মসাতের সঙ্গে পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী ও তার সহচর বান্দরবানে প্রভাবশালী আওয়ামীলীগ নেতা সরসারি জড়িত বলে অভিযোগ করেছেন চেয়ারম্যানরা।  

জানাগেছে, পার্বত্য জেলা পরিষদ ও জেলা আ’লীগকে না জানিয়েছে পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী দীপংকর তালুকদার গোপনে তার ঘনিষ্ঠ সহচর হিসেবে পরিচিত বান্দরবান জেলা আ’লীগের সহ-সভাপতি কে এম জাহাঙ্গীর মাধ্যমে উপজেলা ও ইউপি জনপ্রতিনিধিদের কাছ থেকে ভয়ভীতি দেখিয়ে নয়-ছয় করে ডিও লেটারে স্বাক্ষর করে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
পার্বত্য শন্তি চুক্তির শর্ত অনুযায়ী পার্বত্য এলাকার অবেহেলিতত জনগোষ্ঠির আর্থ-সামাজিক, গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন ও দারিদ্র্য বিমোচন নিরসনে বান্দরবানে চেয়ারম্যানদের প্রকল্পের অনুকূলে ২০১২-১৩অর্থ সালে প্রায় ৪ হাজার মেট্রিকটন খাদ্যশস্য বিশেষ বরাদ্দ দেয় পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়। কিন্তু কে এম জাহাঙ্গীর জন প্রতিনিধিদের ভয়ভীতি ও জিম্মি করে অধিকাংশ খাদ্যশস্যে ডিও লেটারে স্বাক্ষর নিয়ে সামান্য টাকা দেওয়ার অভিযোগ করেছেন জন প্রতিনিধিরা। খাদ্যশস্যর প্রাপ্য টাকা চাইলে ওই নেতা ভয়ভীতি দেখারও অভিযোগ করেছে জনপ্রতিনিধিরা। জনপ্রতিনিধিরা জানান, বাজার দরে খাদ্য শষ্যের টাকা না পাওয়ায় গৃহিত প্রকল্পের একটি কাজও বাস্তবায়ন করতে পারছেননা জনপ্রতিনিধিরা।
এবিষয়ে ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সামশুল আলমের সাথে আলাপকালে তিনি জানান, ৪’শ টন খাদ্যশস্য ডিও ৬৫লাখ টাকা দিয়ে জাহাঙ্গীর সাহেবের কাছ থেকে ক্রয় করেন তিনি। তবে তিনি পার্বত্য মন্ত্রনালয় থেকে ৪হাজার মেট্রিকটন খাদ্যশস্য  এনছেন বলে শুনেছেন।

মোবাইল ফোনে আলাপকালে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ড. মাহে আলম জানান, গতঅর্থ বছরের পার্বত্য মন্ত্রণালয় থেকে সদর উপজেলায় ১২০০টন খাদ্যশস্য জাহাঙ্গীর সাহেব তদবির করে আনার কথা তিনি শুনেছেন। এসব খাদ্যশস্য বিভিন্ন ইউপি চেয়ারম্যান ও প্রকল্প কমিটির আহবায়ক ও সদস্যদের কাছ থেকে ডিও লেটারে স্বাক্ষর নিয়েছে জাহাঙ্গীর সাহেব। পরে কমিটির লোকজন খাদ্যশষ্যর টাকা জাহাঙ্গীরের কাছ থেকে গ্রহণ করে।

রুমা উপজেলা আ’লীগ নেতা সদর ইউপি চেয়ারম্যান শৈবং মারমা অভিযোগ করেন, ২০১২-১৩অর্থ সালের তিনি প্রায় ১৫টি উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য কে এম জাহাঙ্গীরের কথামত পার্বত্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন করলে ১০০টন খাদ্যশস্য বরাদ্দ দেয়। ওই নেতা জিম্মি করে খাদ্যশস্যের ডিও’র কাগজকে স্বাক্ষর নিয়ে মাত্র ৬লাখ টাকা দেয় বাকি টাকা চাইলে ভয়ভীতি দেখায়। শৈবং মারমা আরও জানান, জাহাঙ্গীরের কথামত অন্যান্য উপজেলা ও ইউপি চেয়ারম্যানরাও আবেদন করে। এতে মন্ত্রণালয় থেকে চেয়ারম্যানদের প্রকল্পের অধীনে প্রায় ৪হাজার টন খাদ্যশস্য বরাদ্দ দেয়। প্রতিমন্ত্রীর সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকার কারণে সকল জনপ্রতিনিধিদের জিম্মি করে খাদ্যশস্য টাকা আত্মসাৎ করে জাহাঙ্গীর।

থানছি উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান অলসেন ত্রিপুরা জানান, জাহাঙ্গীর তার ১’শ টনের ডিও’র কাগজে স্বাক্ষর নিয়ে যায়। পরে ২৪ লাখ টাকার খাদ্যশস্যের বিপরিতে কয়েক দফায় মাত্র ৬লাখ টাকা দেন। এতে তিনি প্রকল্পগুলো পুরোপুরি বাস্তবায়ন করতে পারেনি। থানছি রেমাক্রী ইউপি চেয়ারম্যান মালিরাম ত্রিপুরা এ প্রতিবেদকে জানান, জাহাঙ্গীরের কথামত তার গৃহিত ১৫টি প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য পার্বত্য মন্ত্রণালয় আবেদন করলে ১০০টন বরাদ্দ দেয়। কিন্তু১৯ লক্ষ টাকার মধ্যে মাত্র সাড়ে ৫লা দেয়। বাদবাকী খাদ্যশস্যর টাকা আত্মসাৎ করে জাহাঙ্গীর। একই অভিযোগ অন্যান্য জনপ্রতিনিধিদের। তারা বলেন, এবিষয়ে ব্যবস্থা নিতে তারা প্রধানমন্ত্রী, পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী, সচিবকে লিখিত অভিযোগ জানাবেন।

গত ১১জুন প্রধানমন্ত্রীর জনপ্রশাসন উপদেষ্টা এইচটি ইমাম বান্দরবান সফরকালে সার্কিট হাউজে মতবিনিময় সভায় জেলা আ’লীগ সাধারন সম্পাদক ও জেলা পরিষদ সদস্য কাজী মোঃ মজিবর রহমান বলেন, পার্বত্য প্রতিমন্ত্রীর নিয়ম বর্হিভুতভাবে পাবর্ত্য জেলা পরিষদকে না জানিয়ে সরাসরি জনপ্রতিনিধিদের খাদ্যশষ্য বরাদ্দ দেয়। খাদ্য শষ্যর বরাদ্দে বিপরিতে প্রকল্প গুলো দেখভাল করার কেউ নেই। এসব খাদ্য শষ্য হরিলুটেরও অভিযোগ করেন তিনি। এছাড়া সরাসরি জনপ্রতিনিধিদের খাদ্য শষ্য বরাদ্দ দেওয়ার ফলে বীর বাহাদুর এমপির নির্বাচনী অঙ্গিকার বাস্তবায়নে বাধাগ্রস্ত করছে, আগামী নির্বাচনে এর প্রভাব পড়বে বলেও তিনি অভিযোগ করেন। এসময় তিনি আরও বলেন, দীপংকর তালুকদার পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হওয়ার পর অনেকবার বান্দরবান সফরে আসেন। তিনি কখনো আওয়ামীলীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা কর্মীদের সাথে বৈঠক করেননি।

অভিযুক্ত বান্দরবান জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি একে.এম জাহাঙ্গীর অভিযোগের বিষয়টি সরাসরি  অস্বীকার করে জানান, এসব খাদ্যশস্য পার্বত্য মন্ত্রণালয় উপজেলা ইউএনওদের মাধ্যমে উপজেলা চেয়ারম্যান ও ইউপি চেয়ারম্যানদের বরাদ্দ দিয়েছেন। এ ব্যপারে তিনি কিছুই জানেন না।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন