parbattanews

বান্দরবানে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক, বান্দরবান:

বান্দরবান সদর, লাম ও আলীকদম উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। নিম্নাঞ্চল থেকে পানি নামলেও লোকজন এখনো বাড়ি ঘরে ফিরতে পারেননি। তবে বানবাসীরা নিজেদের ঘর বাড়িতে বন্যার পানিতে ঢুকে যাওয়া ময়লা আবর্জনা পরিস্কারের কাজ শুরু করেছে।

জেলা সদরে ৬টি আশ্রয় কেন্দ্রে ২শ’র বেশি পরিবার অবস্থান করছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেতে দুর্গতদের মাঝে ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হয়েছে। মাত্র ২০ দিনের ব্যবধানে লামায় প্রায় ৮০ ঘন্টা বন্যার পানিতে ডুবে থাকা নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় জনদুর্ভোগ দেখা দিয়েছে। দুর্গত এলাকায় বিশুদ্ধ পানির ও খাবার সঙ্কট দেখা দিয়েছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।

আশ্রয় কেন্দ্র গুলোতেও সাধারণ মানুষ কষ্টে দিন পার করছেন। এখনো কিছু শুকনো খাবার ও খিচুড়ি ছাড়া দুর্গতদের মাঝে প্রয়োজনীয় ত্রাণ দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন দুর্গতরা।

বুধবার লামা পৌরসভায় বন্যা কবলিত মানুষের মাঝে ত্রাণ ও খিচুড়ি বিতরণ করেছেন জেলা প্রশাসক দিলীপ কুমার বণিক। ত্রাণ বিতরণের পর তিনি আশ্রয় কেন্দ্রগুলো ঘুরে দেখেন এবং পরামর্শমূলক দিকনির্দেশনা প্রদান করেন।

এ সময় উপজেলা নির্বাহী অফিসার খিনওয়ান নু, পৌরসভার মেয়র জহিরুল ইসলাম, জেলা পরিষদ সদস্য মোস্তাফা জামাল ও ফাতেমা পারুল, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আনোয়ার হোসেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বাথোয়াইচিং মারমা, পৌরসভার প্যানেল মেয়র মোহাম্মদ হোসেন বাদশা উপস্থিত ছিলেন।

গত রোববার থেকে তিন দিনের ভারী বর্ষণে পাহাড় ধ্বসে বান্দরবানের লামায় অর্ধশত বাড়ি-ঘর মাটির নিচে চাপা পড়ে বিধ্বস্ত হয়েছে। এতে কেউ হতাহত হয়নি। পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যায় ডুবে যায় লামা পৌর এলাকাসহ ৭টি ইউনিয়ন। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়ে প্রায় অর্ধ লক্ষাধিক মানুষ। ঘর-বাড়ি ছেড়ে আশ্রয় নেয় পাশ্ববর্তী বিভিন্ন স্কুল ও মাদ্রাসায়।

বন্যাকবলিত সাধারণ লোকজনের সাথে আলাপ কালে আক্ষেপ করে বলেন, খাবার ও বিশুদ্ধ পানি অভাবে কাটছে দুর্বিষহ জীবন।

লামা বাজার ব্যবসায়ী কমিটির সাধারণ সম্পাদক জাপান বড়ুয়া জানান, বন্যার পানিতে মালামাল ভিজে ব্যবসায়ীরা লোকসানে পড়েছে। ফিরে দাঁড়ানো খুব কঠিন হয়ে যাবে। অনেক ব্যবসায়ীর দোকানের মালামাল নষ্ট হয়ে যাওয়ায় পুঁজি হারিয়ে পথে বসেছেন তিনি জানান।

লামা উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল সূত্র জানায়, লামা পৌরসভা ও উপজেলার ৭টি ইউনিয়নে প্রায় ২ হাজার রিংওয়েল বন্যার পানিতে ডুবে ছিল। এসব রিংওয়েলে বন্যার পানি প্রবেশ করা পানি পান ও ব্যবহার করা যাবে না।

লামা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. শফিউর রহমান মজুমদার বলেন, বন্যার পানি কমে যাওয়ার সাথে সাথে ডায়েরিয়া দেখা দেওয়ার সম্ভবনা রয়েছে এ জন্য পানি পান ও পানি ব্যবহারে সতর্ক থাকতে হবে। এছাড়া চর্মরোগ, এলার্জি, জন্ডিসসহ পানি বাহিত বিভিন্ন রোগ ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কষ্ট করে হলেও বিশুদ্ধ পানি সংগ্রহ করে পান করার পরামর্শ দেন তিনি।

পৌর মেয়র জহিরুল ইসলাম জানান, এক মাসের ব্যবধানে দুবার বন্যা হওয়ায় দুর্গত মানুষ চরম দুর্ভোগের মধ্যে রয়েছে। বাজারের বেশির ভাগ দোকানপাট ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানে পানি উঠায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্যা দুর্গতদের পৌর সভার পক্ষ থেকে খিচুরি বিতরন করা হয়েছে।

লামা উপজেলা নির্বাহী অফিসার খিন ওয়ান নু জানান, বন্যায় বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আশ্রয় নেওয়া লোকজনকে শুকনা খাবার চিড়া, মুড়ি, বিস্কুট ও খাবার পানি সরবরাহ করা হয়েছে। বন্যার পানি নেমে যাওয়ায় এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক। তবে বন্যা ও ঢলে অভ্যন্তরিন সড়ক ব্যাবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে।

এদিকে, পাহাড় ধ্বসের কারণে বান্দরবানের সঙ্গে রুমা উপজেলার সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। এছাড়া বান্দরবান-রাঙামাটি ও বান্দরবান-রোয়াংছড়ি সড়কের কয়েকটি স্থানে পানি উঠায় সড়কে যানচলাচল বন্ধ রয়েছে। বান্দরবান শহরের ওয়াপদা ব্রিজ, ইসলামপুর, আর্মি পাড়া এলাকা থেকে পানি নামতে শুরু করেছে।

জেলা প্রশাসক দিলীপ কুমার বণিক জানান, দুর্গত পরিস্থিতিতে ত্রাণ বিভাগ থেকে তাৎক্ষণিক ২৩ মে. টন খাদ্য বরাদ্ধ দেওয়া হয়েছে।

লামায় বন্যাকবলিত মানুষের পাশে জেলা প্রশাসক বান্দরবানের লামা উপজেলায় বন্যা কবলিত মানুষের মাঝে ত্রাণ ও খিচুড়ি বিতরণ করেছেন জেলা প্রশাসক দিলীপ কুমার বণিক। বুধবার দুপুরে লামা পৌরসভা এলাকায় বন্যাকবলিত মানুষের মাঝে তিনি এ ত্রাণ বিতরণ করেন। ত্রাণ বিতরণের পর তিনি আশ্রয় কেন্দ্রগুলো ঘুরে দেখেন এবং পরামর্শমূলক দিকনির্দেশনা প্রদান করেন।

এ সময় উপজেলা নির্বাহী অফিসার খিনওয়ান নু, পৌরসভার মেয়র জহিরুল ইসলাম, জেলা পরিষদ সদস্য মোস্তফা জামাল ও ফাতেমা পারুল, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আনোয়ার হোসেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বাথোয়াইচিং মারমা, পৌরসভার প্যানেল মেয়র মোহাম্মদ হোসেন বাদশা উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য, তিনদিনের ভারী বর্ষণে লামা পৌরসভাসহ উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের নিচু এলাকা প্লাবিত হয়। এতে পৌরসভার এলাকার পাঁচ শতাধিক ঘরবাড়িসহ প্রায় ১ হাজার ঘরবাড়ি প্লাবিত ও পাহাড় ধ্বসে শতাধিক ঘরবাড়ি বিধস্ত হয়। বন্যা কবলিত মানুষগুলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতালসহ বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নেয়। বুধবার সকাল থেকে বন্যা পরিস্থিতি উন্নতি হয়। তবে দুপুরের পর থেকে আবারও ভারি বর্ষণ শুরু হওয়ায় ঢলের পানি পুণরায় বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানিয়েছেন।

Exit mobile version