parbattanews

বান্দরবানে বাঙালিদের প্রতি বৈষম্যহীন নিয়োগের দাবিতে পিসিএনপি’র সংবাদ সম্মেলন

বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের সহকারী শিক্ষক নিয়োগে বাঙালিসহ সকল সম্প্রদায়ের জনসংখ্যার অনুপাতে স্বচ্ছতার ভিত্তিতে বৈষম্যহীন নিয়োগ প্রদানের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছে পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ (পিসিএনপি)।

শুক্রবার (৩ নভেম্বর) সকালে পিসিএনপির বান্দরবান জেলা কার্যালয়ে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির চেয়ারম্যান কাজী মজিবর রহমান। এসময় তিনি লিখিত বক্তব্যে বলেন, খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি ও বান্দরবান জেলা নিয়ে গঠিত পার্বত্য চট্টগ্রাম। শত বছর ধরে শান্তি ও সম্প্রীতির মাধ্যমে এখানে বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ও বাঙালিদের বসবাস। এযেন সম্প্রীতির এক নিবিড় মেলবন্ধন।

তিনি বলেন, অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় এই যে, শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের মাঝে ষড়যন্ত্রের বিষবাষ্প ছড়িয়ে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ও বাঙ্গালীদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে ফায়দা লোটার অপচেষ্টায় লিপ্ত একশ্রেণির স্বার্থান্বেষী মহল। অত্যন্ত দুঃখজনক এই যে, সব ধরনের যোগ্যতা, দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা থাকা সত্ত্বেও এখানে বসবাসরত ৫৪ শতাংশ বাঙ্গালী সম্প্রদায়ের ছেলেমেয়েরা বিভিন্ন সরকারী ও বেসরকারী চাকুরী ও সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে না। এমনকি পার্বত্য জেলা পরিষদের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক ও কর্মচারী নিয়োগের ক্ষেত্রেও চাকুরী থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

কাজী মজিবর রহমান বলেন, পিছিয়ে পড়া অঞ্চল হিসেবে চিহ্নিত পার্বত্য এলাকায় বসবাসকারী পাহাড়ী-বাঙ্গালীদের জন্য দুই ধরনের নীতি চলমান রয়েছে। যেমন, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে বান্দরবান পার্বত্য জেলায় বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের সংখ্যা ৬৯৫। যার মধ্যে ৪৭৯ জন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ও ২১৬ জন বাঙ্গালী শিক্ষার্থীকে বৃত্তি প্রদান করা হয়েছে। যার আনুপাতিক হার হিসেব করলে দেখা যায়, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ৬৮ দশমিক ৯২ শতাংশ ও বাঙ্গালী ৩১ দশমিক ০৮ শতাংশ। শিক্ষা, চাকুরী, সংস্কৃতি, আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক ক্ষেত্রে উপজাতি জনগোষ্ঠীর ছেলে-মেয়েরা শিক্ষাবৃত্তির মাধ্যমে ও উপজাতি কোটার চাকুরী সুবাদে অনেক দূর এগিয়ে রয়েছে। পাহাড়ি ম্রো, খুমী, বম, ত্রিপুরা, তঞ্চঙ্গা, চাক, পাংখোয়া ইত্যাদি ক্ষুদ্র-ক্ষুদ্র সম্প্রদায় বাঙ্গালীদের ন্যায় বৈষম্যের শিকার।

অপরদিকে পার্বত্য অঞ্চলে বসবাসরত দুর্ভাগা বাঙ্গালীরা সমতার ভিত্তিতে পার্বত্য জেলা পরিষদ থেকে কোন ধরনের সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেনা। যার প্রেক্ষিতে এখানকার বাঙ্গালীরা শিক্ষা, চাকুরী, সংস্কৃতি, আর্থ-সামাজিক ও নেতৃত্বের দিক থেকে অনেক পিছিয়ে যাচ্ছে। এই চরম দুঃখ-দুর্দশা ও বৈষম্য পার্বত্য বাঙ্গালীদের যেমনটা অস্তিত্বহীন করেছে তেমনই বিষ্ময়করভাবে সংকটপূর্ণ করে মেরুদণ্ডহীন করেছে। বর্তমানে হতাশায় নিমজ্জিত হয়ে পার্বত্য বাঙ্গালী ছেলেমেয়েরা বেকার অবস্থায় পড়ে আছে। যোগ করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির চেয়ারম্যান কাজী মজিবর রহমান।

এমন অবস্থায়, বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান স্বাক্ষরিত সহকারী শিক্ষক ও অফিস সহায়ক শূন্য পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রদান করা হয়। সহকারী শিক্ষক ও অফিস সহায়ক পদে গত ২৭ অক্টোবর লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় এবং ৩১ অক্টোবর লিখিত পরীক্ষার রেজাল্ট প্রকাশ করা হয়। এই নিয়োগ পরীক্ষায় লোকমুখে যথেষ্ট অনিয়ম ও গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। যেমন: নির্দিষ্ট সময়ের পরও আবেদন গ্রহণ করা, অনৈতিকভাবে প্রার্থীর রোল নম্বর গোপন করা ও মৌখিক পরীক্ষার জন্য নির্বাচন করা, পরীক্ষা কেন্দ্রের বিভিন্ন কক্ষে পরীক্ষার্থী অনুপস্থিত থাকা ইত্যাদি বিভিন্ন অনিয়ম হয়েছে।

এছাড়াও লিখিত পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের পর পরীক্ষায় কৃতকার্য হবে এমন শতভাগ আশাবাদী অনেক পরীক্ষার্থী পরীক্ষার ফলাফল নিয়ে চ্যালেঞ্জ করার জন্য জেলা পরিষদে গেলেও জেলা পরিষদ তাদের কোন অভিযোগ গ্রহণ করেনি এবং এ ব্যাপারে কোন ব্যবস্থাও গ্রহণ করেনি। যা আপনারা ইতিমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিশ্চয়ই দেখেছেন।

বিশেষ করে প্রত্যেক প্রার্থীদের প্রবেশপত্রে দেখা যায় যে, নিয়োগে মোট পরীক্ষার্থীর সংখ্যা রোল নং ১-১৬৬৭ পর্যন্ত অফিসিয়াল ভাবে প্রকাশ করা হয়। কিন্তু লিখিত পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশে দেখা যায় সর্বশেষ পরীক্ষার্থীর রোল নং ১৬৭১। ১৬৬৮-১৬৭১ পর্যন্ত ০৪ (চার) জন পরীক্ষার্থীর রোল নম্বর প্রবেশপত্রে উল্লেখ নাই। যা সম্পূর্ণ বে-আইনী ও নিয়মবহির্ভূত।

উল্লেখ্য যে, গত ৬ অক্টোবর খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদের সহকারী শিক্ষক নিয়োগে অনুরূপ একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, ইলেক্ট্রনিক্স ও প্রিন্ট মিডিয়ায় ব্যাপক নিউজ প্রকাশিত হয়। সুতরাং যেহেতু জেলা পরিষদের নিয়োগ পরীক্ষা ও প্রশ্ন পত্র নিয়ে বার বার বিতর্কের সৃষ্টি হচ্ছে, তাই জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রশ্নপত্র ও নিয়োগ পরীক্ষা গ্রহণ করা হলে স্বচ্ছ হবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।

পার্বত্য চট্টগ্রামে যেসব বাঙ্গালী বসবাস করে তাদের শতকরা ৯৫ শতাংশ রয়েছে দারিদ্রসীমার নীচে। বর্তমানে উপজাতিদের শিক্ষার হার ৭৫ শতাংশ আর বাঙ্গালীদের শিক্ষার হার ২২ শতাংশ। উপজাতীদের একচেটিয়াভাবে চাকুরী ও কর্মসংস্থানের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। উপজাতীয় এলাকাগুলোতে একের পর এক গড়ে উঠছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। সেই সাথে উপজাতি সম্প্রদায়ের ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য বহু ছাত্রাবাস ও আলাদা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, বাঙ্গালী ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য কোন ছাত্রাবাস নেই। বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার অনুপাতে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জনসংখ্যার হার ১ শতাংশ এর কম হলেও শিক্ষার ক্ষেত্রে উপজাতীয়দের জন্য ৫ শতাংশ আসন সংরক্ষিত। কিন্তু বাঙ্গালীদের জন্য এই সুবিধা নেই। যা অত্যন্ত দুঃখজনক।

সংবাদ সম্মেলনে বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ কর্তৃক সহকারী শিক্ষক ও অফিস সহায়ক পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে স্বেচ্ছাচারিতা, অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতির উর্ধ্বে এসে সকল সম্প্রদায়ের জনসংখ্যার অনুপাতে স্বচ্ছতার ভিত্তিতে বৈষম্যহীন নিয়োগদানের জোর দাবি জানানো হয়।

Exit mobile version