parbattanews

বান্দরবানে বিজিবি সেক্টর স্থাপন-মতবিরোধ নিরসনে ক্রাইক্ষং পাড়াবাসীর সাথে জেলা প্রশাসকের নিস্ফল বৈঠক

ZZZ

নিজস্ব প্রতিবেদক:
বান্দরবানের খানসামা এলাকায় বিজিবির সেক্টর স্থাপনে ক্রাইক্ষংপাড়াবাসীর সাথে জেলা প্রশাসকের মত বিনিময় সভা করা হয়েছে। এর আগে শুক্রবার জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে বিজিবির সেক্টর স্থাপনের প্রস্তাবিত ভূমি পরিদর্শন করা হয়। তবে জেলা প্রশাসকের সাথে পাহাড়ীদের বৈঠকে কোনো ইতিবাচক ফলাফল আসেনি।

এদিকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় পার্বত্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর এমপি রোয়াংছড়ি উপজেলা সদর থেকে জেলা সদরে ফেরার সময় পাড়ার লোকজন তার গাড়ি বহর গতিরোধ করে অভিযোগ তুলে ধরে। প্রতিমন্ত্রী পরে জেলা প্রশাসককে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে সমস্যা সমাধানের নির্দেশ দিলে জেলা প্রশাসক সেখানে যান।

এলাকাবাসীর অভিযোগ সূত্র জানায়, বিজিবির সেক্টর স্থাপনের জেলা প্রশাসনের প্রস্তাবিত জায়গা খানসামা এলাকায় ৩৪ একর ভূমিতে ২৫ বছর আগে ক্রাইক্ষং পাড়াবাসীর একটি পুরানো পাড়া ছিল। এবং এছাড়া একই জায়গায় তাদের ১০০ বছরের পুরানো শশ্মান ও দীর্ঘদিন তারা ঐ জীবন জীবিকার জন্য এলাকায় জুম চাষ করে আসছিল। বিজিবি জোরপূর্বক তাদের পাড়ার জায়গায় ক্যাম্প স্থাপন করছে ও তাদের গাছ কেটে নিয়েছে। তাদের জুমের জায়গা ও শশ্মান দখলের কথাও জানান। একই সাথে লুলাইন পুনর্বাসন পাড়ার লোকজনও চাচ্ছে না সেখানে বিজিবির সেক্টর সদর দফতর হোক। এছাড়া কয়েকদিন আগে অনুশৈ মার্মার জমি থেকে বিজিবি গাছ কেটে ফেলে।

এইসব অভিযোগ আমলে নিয়ে গতকাল শুক্রবার জেলা প্রশাসক কে এম তারিকুল ইসলাম, বিজিবির সেক্টর কমান্ডার ওয়ালিউর রহমান, পুলিশ সুপার দেবদাশ ভট্টাচার্য, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ফারুক হোসেন, ইউপি চেয়ারম্যান সাবু খয়, পাড়া কারবারী সাইঙ্গা প্রু, ইউপি সদস্য মংনুসহ পাড়া বাসী বিজিবির সেক্টর স্থাপনের প্রস্তাবিত জায়গা পরিদর্শন করেন।

বৈঠকে ক্রাইক্যং পাড়ার লোকজন জেলা প্রশাসককে জানান ১৯৯৩ সালে মৌজা প্রধান পাড়ার ২৫ পরিবারকে ৩০ শতাংশ করে জায়গা প্রদানের আবেদন করে। এবং তাদের জীবন জীবিকার একমাত্র ভূমি এটি। এ ভূমি তারা হাতছাড়া করবে না। তারা কোন অবস্থানে প্রস্তাবিত জায়গায় বিজিবির সেক্টর স্থাপনে সহযোগিতা করবেনা।

নারী ইউপি সদস্য আপুসিং মার্মা জানান, বাধা দেয়া সত্ত্বেও বিজিবি জোরপূর্বক স্থাপনা নির্মাণ করছে। সেখানে জমি অধিগ্রহণ করা হলে তাদের আর কোথাও যাওয়ার জায়গা থাকবেনা বলে তিনি জানান।

জেলা প্রশাসক তাদের অভিযোগ আমলে নিয়ে বলেন, পাড়ার লোকজন যারাই তাদের জায়গার নথিপত্র উপস্থাপন করবে তাদের ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে। কিন্তু এ পর্যন্ত পাড়ার কেউই তাদের পক্ষে কোন নথিপত্র জমা দেয়নি। শ্মশানের জায়গা বাদ নিয়েই জায়গা অধিগ্রহণ করা হবে। এছাড়া শ্মশানের যাতায়াতের জন্য আগে রাস্তা নির্মাণ ও শশ্মান আগের চেয়ে আরো বড় করার প্রস্তাব দেন। কিন্তু তাতে পাড়াবাসী সন্তষ্ট হয়নি।

অন্যদিকে অনুশৈ মার্মার জমি থেকে বিজিবি কোন গাছ কেটেছে তার অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। তবে উভয় পক্ষের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে সমস্যা সমাধানর চেষ্টা করা হচ্ছে বলে তিনি জানান।

তিনি আরো বলেন, পরিদর্শনে কোন এলাকায় জুম চাষের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। এছাড়া প্রস্তাবিত ভূমিটি ৩৪ একরের অর্ধেক ব্যক্তি মালিকানাধীন ও অর্ধেক খাস জমি। খাস জমির মালিক জেলা প্রশাসন। জেলা প্রশাসক আরো বলেন, আপনারা যদি অন্য এলাকায় পাড়া স্থাপন করতে চান যেখানে যতটুকু সহযোগিতা দরকার তটটুকু সহযোগিতা তিনি করবেন।

বিজিবির বান্দরবানের সেক্টর কমান্ডার কর্নেল ওয়ালিউর রহমান জানান, জোরপূর্বক স্থাপনা নির্মাণ ও জায়গায় গাছ কাটার যে অভিযোগ করা হয়েছে তা ঠিক নয়। এছাড়া পাড়ার শ্মশান কখনো দখল করা হয়নি। শুধুমাত্র কিছুসংখ্যক বিজিবির সদস্যদের নির্ধারিত জায়গায় রাখা হয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক পাড়াবাসী জানিয়েছেন, বিবেচিত জায়গায় বিজিবির সেক্টর নির্মাণ করা হলে এলাকায় চাঁদাবাজদের দৌরাত্ব বন্ধের পাশাপশি এলাকায় উন্নয়ন ও কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে। রাজ পরিবারের সদস্য হ্লাপাক্ষং মৌজার হেডম্যান ও প্রয়াত রাজার ছেলে টমি বাবু পাড়াবাসীদের বিভিন্ন রকমের উস্কানী দিয়ে ক্ষেপিয়ে তুলেছেন। এছাড়া জনসংহতি সমিতির কতিপয় অস্ত্রধারীরা হুমকি দিয়েছেন পাড়াবাসী যদি বিজিবি সেক্টর নির্মানে বিরোধীতা না করে তাদেরকে প্রকশ্য গুলি করে মেরে ফেলা হবে।

Exit mobile version