বান্দরবানে বিশেষ প্রকল্পের নামে খাদ্যশস্য হরিলুট

image_47007
নিজস্ব প্রতিবেদক:
বান্দরবানে ২০১৩-১৪ অর্থ বছরে গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ বিশেষ প্রকল্প কর্মসূচির আওতাধীন প্রকল্পের খাদ্যশষ্য হরিলুট চলছে রুমা ও থানছি উপজেলায়। পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে পাওয়া তদারকির অভাবে লুটপাট করছে জনপ্রতিনিধি ও সংলিষ্ট সরকারী কর্মকার্তারা।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বান্দরবানের রুমা উপজেলায় সদর ইউনিয়নের ১০০ মেট্রিক টন ও থানচি উপজেলার রেমাক্রি ইউনিয়নের ৫০ মেট্রিক টন খাদ্য শষ্যের বিপরীতে গৃহীত ২০টি প্রকল্পের কাজ সিকি ভাগও করা হয়নি। প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন না করে প্রকল্পের সভপতি ও স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও সদস্যদের যোগসাজসে খাদ্যশস্য লুটপাটের অভিযোগ পাওয়া গেছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, সরকারি দরে প্রতি কেজি গম ২৯ টাকা। সে হিসাব অনুযায়ী দেড়শ মেট্রিক টনের মূল্য ৪৫ লাখ টাকা। জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট ২০টি প্রকল্প প্রস্তাবিত ও গৃহীত হলেও উপজেলা পরিষদের সংশ্লিষ্ট কর্তাদের সমন্বয়ে ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান ও সদস্যদের মধ্যে এসব প্রকল্পের অর্থ লুটপাট হয়েছে।
আরও জানা গেছে, রুমা সদর ইউনিয়নের ১০ মেট্রিক টন বরাদ্ধে “হোস্টেল পার্শ্বে বাঁধ নির্মাণ” প্রকল্পটি খোদ উপজেলা পরিষদ কর্তৃক সংশোধিত ও প্রস্তাবিত প্রকল্প হলেও এর কোনও অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি। শুধু এটি নয়, এই ধরনের অন্য প্রকল্পগুলোতেও করা হয়েছে লুটপাট।

৩নং ওয়ার্ড সদস্য জৌথানময় বম জানান, প্রকল্প সভাপতি হিসাবে নিজের নাম থাকলেও সদর ইউপি চেয়ারম্যান শৈমং মারমা সব টাকা নিয়ে ২নং ওয়ার্ডের সদস্য পলাশ চৌধুরীকে কাজ করতে দিয়েছেন। বাঁধটি জাইঅন পাড়ার বম হোস্টেল ম্যানেজারের বাসভবনের পাশে নির্মাণের কথা থাকলেও এর কোনও অস্তিত্ব নেই।
বেথেল পাড়ার পাশে বাঁধ নির্মাণ প্রকল্প প্রসঙ্গে প্রকল্পটির সভাপতি যৌথানময় বম বলেন, ১০ মেট্রিক টন বরাদ্দে প্রকল্পে যত টন লেখা থাকুক, এতে ইউপি চেয়ারম্যান তাকে দুই কিস্তিতে ৫০ হাজার টাকা দেন। প্রকল্প সভাপতিদের প্রাপ্য টাকা থেকে বঞ্চিত ও ইউপি চেয়ারম্যান কর্তৃক প্রতারণা শিকার হয়েছেন বলে অনেকে ইউপি সদস্য অভিযোগ করেছেন।

লুংথাউসি পাড়া হতে রুমানা পাড়া পর্যন্ত রাস্তা সংস্কার

এ প্রকল্পের সভাপতি হচ্ছেন ৭নং ওয়ার্ডের সদস্য দৌথিলিয়ার বম। তিনি জানান, বৃষ্টিপাতের কারণে কাজ শুরু করতে পারেননি। মোট ৮০ হাজার টাকা দেওয়ার কথা থাকলেও তিনি পান ৫০ হাজার টাকা।
তবে স্থানীয় লোকজন বলেছেন, এ রাস্তার কাজ বাস্তবায়ন হবে না। কারণ দুর্গম হওয়ায় পিআইও পরিদর্শনে যাবার কোনও সম্ভাবনা নেই, এমনটা মনে করেন পাড়া কারবারি মিননাক বম।
অনিয়ম ও দুর্নীতির ব্যাপারে ইউপি চেয়ারম্যান শৈবং মারমা মুটো ফোনে বলেন, এ ব্যাপারে পরে কথা বলবো।
সূত্র জানায়, খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট উপজেলা পরিষদের পিআইওদের ঘুষ দিতে হয় একটি নির্দিষ্ট অংকে, তাই বরাদ্দে অনেক অর্থই চলে যায় তাদের পকেটে। পরে চেয়ারম্যানরা প্রকল্প বস্তবায়নের জন্য এই অর্থ আরও কমিয়ে ইউপি সদস্যদের প্রদান করলে তা কাজ না করেই আত্মসাত করা হয়।

দুর্গম এলাকা হওয়ার কারণে জেলার সবচেয়ে বেশি লুটপাটের ঘটনা ঘটে থানছির রেমাক্রি ও তিন্দু ইউনিয়নে। দুর্গম ও অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা ওই ইউনিয়নগুলোর প্রকল্প পরিদর্শন করতে না যাওয়ার কারণে প্রতিবছর এখানকার প্রকল্পগুলোর পুরোটাই চেয়ারম্যানদের পকেটে যায় বলে জানান স্থানীয়রা।
প্রকল্প আত্মসাতের ব্যাপারে থানচি উপজেলার রেমাক্রি ইউপি চেয়ারম্যান মালিরাম ত্রিপুরা বলেন, কেউ আমাদের ভাল বলবে, কেউ খারাপ বলতে, এই বিষয়ে কিছুই বলার নেই।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন