বান্দরবানে বৈসাবি উৎসব পালনের প্রস্তুতি

fec-image

পাহাড়ি সম্প্রদায়ের অন্যতম প্রধান সামাজিক উৎসব ‘বৈসাবি’। চৈত্র সংক্রান্তিতে বাংলা পুরাতন বছরকে বিদায় ও নতুন বছরকে বরণ করে নিতে এই উৎসব পালন করা হয়। এই সময়ে বৈসাবির আমেজে পাহাড়ি জনপদে, পাড়ায় পাড়ায়, ঘরে ঘরে পাহাড় মুখরিত হয়ে থাকে। তাই পাহাড়ের বাসিন্দারা প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে বৈসাবি উৎসব পালন করতে।

তবে প্রাণঘাতি করোনার প্রাদুর্ভাবে লকডাউনের কারণে গত দুই বছর অনুষ্ঠিত হয়নি মারমা সম্প্রদায়ের প্রধান উৎসব মাহাঃ সাংগ্রাই পোয়ে (মৈত্রী পানি বর্ষণ)। এ বছরের ১৩ এপ্রিল শুরুতে হতে যাচ্ছে সেই উৎসব। উৎসব ঘিরে শুরু হয়েছে বান্দরবানের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মানুষের সবচেয়ে বড় সামাজিক উৎসব। সাংগ্রাইং, বিজু, বৈসু ঘিরে উৎসবের নানান রঙে সাজতে শুরু করেছে পুরো পাহাড়ি এলাকা।

এ বিষয়ে বান্দরবানের সাংগ্রাইং উৎসব উদযাপন কমিটি সাধারণ সম্পাদক শৈটিং ওয়াই মারমা জানান, সকল ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। ১৩ তারিখ সকাল ৮টায় মঙ্গল শোভাযাত্রার মাধ্যমে এর সূচনা করা হবে। ধর্মীয় অনুষ্ঠান ছোয়াং দান, বুদ্ধ স্নান, শীলগ্রহণ ইত্যাদি আর সামাজিক অনুষ্ঠান মৈত্রী পানি বর্ষণ, আলোকচিত্র প্রদর্শনী, মিনি ম্যারাথন দৌড় এবং পাহাড়ীদের ঐতিহ্যবাহী খেলাধুলাসহ নানা আয়োজনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বান্দরবান সদর উপজেলার অন্তর্গত সুয়ালক মাঝের পাড়া, রেইছা থলি পাড়া, জামছড়ি, বাঘমারা, বালাঘাটা, ডুলুপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকাজুড়ে চলছে নৌকা বানানোর প্রস্তুতি। পাড়ার যুবক-যুবতিরা তিনদিনের আয়োজন আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন।

বৈসাবি উৎসবকে সামনে রেখে জেলার হাট-বাজারে কেনা-কাটা বেড়েছে। বিপনী বিতানগুলোতে এখন পাহাড়িদের পাশাপাশি বাঙ্গালী তরুণীদেরও উপচে পড়া ভিড়। পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা চাকুরীজীবি ও স্কুল,কলেজ ও ইউনির্ভাসিটি ছাত্র/ছাত্রীরা নিজ গ্রামে মা-বাবা,আত্মীয়-স্বজনদের সাথে উৎসবের আনন্দ ভাগাভাগী করতে ছুটে আসছে।

বান্দরবান সরকারী কলেজে দ্বাদশ শ্রেনীতে অধ্যয়নরত মাথিনশৈ মারমা জানান, বিগত দুই বছর করোনার কারনে ভালোভাবে মারমাদের সাংগ্রাইং উৎসব পালন করতে পারিনি। তবে এবছর অনেক মজা,আনন্দ ও উল্লাসে মেতে উঠবো। সকল পাপাচার ও গ্লানি ধুয়ে মুছে শান্তি-সম্প্রীতি ও ঐক্য আরো সু-দৃঢ় হোক এই প্রত্যাশা করছি।

উৎসবকে ঘিরে জেলা সংবাদকর্মী কিকিউ মারমা জানান, দীর্ঘ দুই বছর পর প্রাণঘাতি মহামারি করোনার ধাক্কা কাটিয়ে উচ্ছ্বাস-উদ্দীপনায় আবারো পাহাড়ে শুরু হতে যাচ্ছে মারমাদের সাংগ্রাই উৎসব (পোয়েহ্)। এ বছরে সবধরনের অনুষ্ঠান হতে চলেছে জেনে অতি আগ্রহে দিনটির জন্য প্রহর গুনচ্ছি। পাশাপাশি পৃথিবীতে অশুভ শক্তি, রোগ ও আরোগ্য মুক্ত হোক আর দেশের শান্তির মঙ্গল বয়ে আনুন ভগবানে কাছে এটাই প্রার্থনা করবো।

এবিষয়ে বান্দরবান জেলা পুলিশ সুপার জেরিন আখতার বলেন, সাংগ্রাইং, বিজু, বৈসু বাংলা নববর্ষ যেহেতু একটার পর আরেকটা অনুষ্ঠান তাই সেভাবেই আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী সার্বিক প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। যাতে সবাই নির্বিঘ্নে উৎসব অনুষ্ঠান উপভোগ করতে সে ব্যবস্থাই করা হয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন