ম্রো ছাত্রাবাস নির্মাণ

বান্দরবানে মুক্তিযোদ্ধার পরিবারকে উচ্ছেদ করে ম্রো ছাত্রাবাস নির্মাণ চেষ্টার অভিযোগ

fec-image

বান্দরবানের লামা পৌর মেয়র ও উপজেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. জহিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা সার্জেন্ট এম আলতাফ উদ্দীনের পরিবারকে পৌরসভার বরাদ্দ দেয়া বাড়ি থেকে অন্যায় ও অবৈধভাবে উচ্ছেদ করে ম্রো ছাত্রাবাস নির্মাণ চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় উচ্ছেদ আতঙ্কসহ জীবনের নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের স্বজনরা।

সরেজমিনে পরিদর্শন করে জানা যায়, বীর মুক্তিযোদ্ধা সার্জেন্ট এম আলতাফ উদ্দীন ১৯৭১ সালে মহান মুুক্তিযোদ্ধের সময় কুমিল্লায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সাথে সম্মুখ যুদ্ধে শহীদ হন। তখন থেকে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা এম আলতাফ উদ্দীনের স্ত্রী নুরের নাহার বেগম ২ ছেলে ও ২ মেয়েকে নিয়ে বান্দরবানের লামা উপজেলার চম্পাতলী এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় বসবাস করে আসছিলেন। ঘর ও ভূমিহীন হিসাবে লামা চম্পাতলীর গজালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের পরিত্যক্ত ভবনটি নিজ খরচে সংস্কার পূর্বক ব্যবহারের অনুমতি চেয়ে ২০০৯ সালে মেয়র বরাবর আবেদন করেন শহীদ মুক্তিযোদ্ধা এম আলতাফ উদ্দীনের ছেলে আকতার উদ্দীন তপন। তৎকালীন লামা পৌর মেয়র তাজুল ইসলাম উক্ত আবেদন মঞ্জুর করে পরিত্যক্ত ভবনটি বাৎসরিক চব্বিশ শত টাকা সাব্যস্থ করে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের কাছে ভাড়া দেয়।

পরর্বতীতে ২০১৪ সালে এক আবেদনের প্রেক্ষিতে তৎকালীন পৌর মেয়র আমীর হোসেন উক্ত ভবনটি শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের অনুকূলে বাৎসরিক চব্বিশ শত টাকা ভাড়া ধার্য্য করে দীর্ঘ মেয়াদী লিজ প্রদান করেন। কিন্তু ২০২১ সালে বর্তমান লামা পৌর মেয়র মো. জহিরুল ইসলাম সাবেক দুই মেয়রের সম্পাদিত ভাড়া ও লিজ চুক্তিপত্র অস্বীকার করে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা সার্জেন্ট এম আলতাফ উদ্দীনের ছেলে আকতার উদ্দীন তপনকে ভবনটি ছেড়ে দেয়ার জন্য নৌটিশ প্রদান করে। এর পরেও ভবনটি ছেড়ে না দেয়ায় লামা পৌর মেয়র মো. জহিরুল ইসলাম শহীদ মুক্তিযোদ্ধা এম আলতাফ উদ্দীনের পরিবারকে উচ্ছেদ করার নানান ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে।

শহীদ মুক্তিযোদ্ধা সার্জেন্ট এম আলতাফ উদ্দীনের ছেলে আকতার উদ্দীন তপন জানান, ১৯৭১ সালে মুক্তিযোদ্ধ চলাকালীন সময়ে তারা হাতিয়া জেলার মেঘনা নদী তীরবর্তী এলাকায় বসবাস করতেন। যুদ্ধের সময় তার পিতা সেনা সার্জেন্ট এম আলতাফ উদ্দীন কুমিল্লা ময়নামতি ক্যান্টনমেন্টে কর্মরত অবস্থায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সাথে সম্মুখ যুদ্ধে শহীদ হন। যুদ্ধের পরবর্তী সময়ে মেঘনা নদীর করাল গ্রাসে তাদের বসত ভিটা বিলীন হয়ে গেলে অসহায় অবস্থায় তারা স্বপরিবারে বান্দরবানের লামা চম্পাতলী এলাকায় ভাড়া বাসায় বসবাস শুরু করেন। ২০০৮ সালে আ.লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের সকল জেলা ও উপজেলায় সরকারি পরিত্যক্ত ভবন শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের অনুকূলে বরাদ্দ দেওয়ার জন্য গেজেট প্রকাশ করে। উক্ত নির্দেশনা অনুযায়ী পৌরসভার নিয়ন্ত্রনাধীন গজালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের পরিত্যক্ত ভবনটি শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবার হিসাবে আমাদের বরাবরে বরাদ্দ চেয়ে আমি প্রধানমন্ত্রী বরাবর আবেদন করি। উক্ত আবেদনে আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি, স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারসহ জনপ্রতিনিধিরা সুপারিশ করেন।

তিনি আরো জানান, গজালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের পরিত্যক্ত ভবনটি নিজ খরচে সংস্কার পূর্বক ব্যবহারের অনুমতি চেয়ে ২০০৯ সালে আমি লামা পৌর মেয়র বরাবর আবেদন করলে তৎকালীন লামা পৌর মেয়র তাজুল ইসলাম উক্ত আবেদন মঞ্জুর করে পরিত্যক্ত ভবনটি মাসে দুইশত টাকা ভাড়া নির্ধারণ করে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবার হিসাবে আমাদের কাছে ভাড়া দেয়। পরর্বতীতে ২০১৪ সালে আমার আরেকটি আবেদনের প্রেক্ষিতে তৎকালীন পৌর মেয়র আমীর হোসেন উক্ত ভবনটি শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের অনুকূলে বাৎসরিক চব্বিশ শত টাকা ভাড়া ধার্য্য করে দীর্ঘ মেয়াদী লিজ প্রদান করেন। উক্ত ভাড়া চুক্তিপত্রে বর্তমান মেয়র মো. জহিরুল ইসলাম একজন স্বাক্ষী ছিলেন।

আকতার উদ্দীন তপন জানান, পৌরসভার নিয়ন্ত্রণাধীন গজালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের পরিত্যক্ত ভবনটিসহ মোট জমির আয়তন ৯৪ শতক। পরিত্যক্ত ভবনটি শুধু মাত্র ৭ শতক জমির উপর অবস্থিত। পৌর কর্তৃপক্ষ ম্রো আবাসিক নির্মাণ করুক বা যাহাই করুক না কেন আমাদের বরাদ্দ দেয়া ঘর ঠিক রেখে করলে আমার কোন আপত্তি নেই। ম্রো ছাত্রাবাস নির্মাণ করার মত আরো ৮৭ শতক জমি রয়েছে। কিন্তু পৌর মেয়র এসব জমি খালি রেখে ম্রো ছাত্রাবাস নির্মাণের নামে আমাদের উচ্ছেদ করতে চায়।

শহীদ মুক্তিযোদ্ধার এই সন্তান আরো জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টানা তিন বারে প্রায় চৌদ্দ বছর ক্ষমতায় থেকে মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযোদ্ধা পরিবারকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে সর্বোচ্চ সুযোগ সুবিধা দিয়েছেন। আ.লীগ সরকার মুক্তিযোদ্ধ চেতনার সরকার। আ.লীগ সরকার ভূমিহীন গরীব ও অসহায় মানুষের সরকার। এই সরকার লাখ লাখ ভূমিহীন পরিবারকে ভূমিসহ ঘর নির্মাণ করে দিয়েছেন। সুতরাং এই সরকার আমলেই মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যরা সব চেয়ে নিরাপদে জীবন যাপন করার কথা। কিন্তু লামা উপজেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র একটি শহীদ সেনা সার্জেন্ট এম আলতাফ উদ্দীনের পরিবারের সাথে যে সব জোর জুলম, অন্যায় অত্যাচার এবং উচ্ছেদের ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে তা দেশের সকল মুক্তিযোদ্ধাদের অপমানের শামিল। বান্দরবানে আমাদের এক ইঞ্চি পরিমান জমি বা সম্পত্তি নেই। পৌর সভার এই পরিত্যক্ত ভবন যদি ছেড়ে দিতে হয় তাহলে থাকার মত আমাদের কোন জায়গা নেই। এ ব্যপারে তিনি প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।

এবিষয়ে লামা পৌর সভার সাবেক মেয়র আমির হোসেন জানান, চম্পাতলী এলাকায় পৌর সভার নিয়ন্ত্রণাধীন গজালিয়া ইউপির পরিত্যক্ত ভবনটি দীর্ঘ মেয়াদী লিজ চেয়ে ২০১৪ সালে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা সেনা সার্জেন্ট এম আলতাফ উদ্দীনের ছেলে আকতার উদ্দীন তপন আমার বরাবরে একটি আবেদন করেন। পৌর বিধি অনুসরণ করে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের প্রতি সম্মান রেখে বাৎসরিক চব্বিশ শত টাকা ধার্য্য করে লিজ দেয়া হয়। সম্পাদিত চুক্তিপত্রে বর্তমান পৌর মেয়র জহিরুল ইসলামও একজন স্বাক্ষী। ২০০৯ সালে এই ভবনটি শহীদ মুক্তিযোদ্ধা সেনা সার্জেন্ট এম আলতাফ উদ্দীনের পরিবারকে ভাড়া দিয়েছিল সাবেক প্রয়াত মেয়র তাজুল ইসলাম। সম্পূর্ণ বৈধভাবে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবার এই পরিত্যক্ত ভবনে বসবাস করছে বলে তিনি জানান।

এব্যপারে লামা পৌর মেয়র ও উপজেলা আ.লীগের সাধারন সম্পাদক মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, পৌর কর্তৃপক্ষ কখনো মুক্তিযোদ্ধা পরিবারকে পরিত্যক্ত ভবন বরাদ্দ দেয়নি। মুক্তিযোদ্ধার সন্তান আকতার উদ্দীন তপন চুক্তিপত্র জাল জালিয়াতির মাধ্যমে কাজটি করেছে। লামা চম্পাতলী এলাকায় গজালি ইউপির পরিত্যক্ত ভবনসহ কিছু জমি আছে। গজালিয়া ইউপি কার্যালয় নিজস্ব জায়গার উপর নির্মাণ করা হলে পুরাতন ভবন ও জমিগুলো পৌর সভাকে হস্তান্তর করে। তবে এখনো পর্যন্ত এই জমি পৌর সভার নামে দলিল রেজিস্টার হয়নি। এখন এই জমির উপর একটি ম্রো ছাত্রাবাস নির্মাণ করা হবে। তাই মুক্তিযোদ্ধা পরিবারকে পরিত্যক্ত ভবনটি ছেড়ে দেয়ার জন্য নোটিশ প্রদান করা হয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: বান্দরবান, মুক্তিযোদ্ধা, ম্রো ছাত্রাবাস
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন