parbattanews

বান্দরবানে রং নেই বৈসাবি’র

‘‘ঞি ঞি ঞা ঞা রিকজাই গে পা মে” (এসো মিলি সাংগ্রাই এর মৈত্রী পানি বর্ষণের উৎসবে)। এটি মারমা সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী একটি গান। সাংগ্রাই উৎসবের দিন ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে বান্দরবানে কেন্দ্রীয়ভাবে জলকেলী অনুষ্ঠানে বেজে উঠতো এই গান। আর সেই গানের সুর মূর্ছনায় উদ্বেলিত হয়ে উঠতো পাহাড়ি জনপদের মানুষ। উৎসবে শুধু ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীরা নয়, মেতে ওঠতো বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষ।

কিন্তু এবার পাহাড়ি জনপদ বান্দরবানে পালিত হয়নি আপন উৎসব বৈসুক, সাংগ্রাই কিংবা বিজু। দেশে ছড়িয়ে পড়া মহামারি করোনাভাইরাসের থাবায় এখন প্রাণহীন বান্দরবানের ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠী গ্রামগুলো। তাই চারদিকে বিরাজ করছে সুনশান নিরবতা। শুধু জেলা সদরই নয়, সাত উপজেলার কোথাও বৈসাবির আয়োজন করা হয়নি।

জানা গেছে, প্রতিবছর বান্দরবানে মারমাদের সাংগ্রাই উৎসবকে ঘিরে মঙ্গল শোভাযাত্রা, বয়োজ্যেষ্ঠ পূজা, পবিত্র বুদ্ধ মূর্তি স্মান, জলকেলিসহ নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হতো। বানানো হতো রং বেরঙের পোস্টার, ব্যানার আর মুখোশ।

দেশের চলমান পরিস্থিতিতে এবার ঘরোয়াভাবেই পালন করতে হচ্ছে ধর্মীয় উৎসবটি। মার্কেট ও দোকানপাট বন্ধ থাকায় অনেকে নতুন কাপড় কিনতে পারেনি। যার কারনে সাজ সাজ রব ছিলনা কোথাও।

এদিকে শুধু বৈসাবি নয় বান্দরবানে পালিত হয়নি বাংলা নববর্ষের কোন আয়োজন। নতুন বছরের শুরুর দিনে বান্দরবানে পাহাড়ি-বাঙালিরা সম্প্রীতির মিলবন্ধনে আবদ্ধ হতো। কিন্তু এবার বান্দরবানে বৈশাখের রং ফিকে করেছে মহামারী করোনা ভাইরাস।

এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বৈসাবীকে ঘিরে জেলা সদর ছাড়াও সাত উপজেলার কোথাও আনুষ্ঠানিকভাবে জলকেলী, আনন্দ, আড্ডা, নাচ, গানের কোন আয়োজন হয়নি। তবে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে ঘরোয়াভাবে পানি ছিটিয়ে আনন্দ উল্লাস করেছেন পাহাড়িরা। পানিতে বিজুর ফুল ভাসিয়েছেন অনেকে। নিজ নিজ বাড়িতে খানাপিনার আয়োজনও ছিল স্বল্প পরিসরে।

অন্যদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পুরনো বছরের ছবি টাইমলাইনে এনে অনেকে নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানিয়ে আবার অনেকে ঘরোয়াভাবে পানি ছিটানোর ছবি আপলোড করে আনন্দ ভাগাভাগি করেছেন। পাশাপাশি নতুন বছরের সূর্য মহামারী করোনার ছায়া মুছে দিবে এমনটি প্রত্যাশা করেছেন।

উল্লেখ্য, বান্দরবানে মহামারী করোনাভাইরাস সংকট মোকাবেলায় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠি সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় ও সামাজিক উৎসব বর্ষবরণ বৈসাবি পালন না করার সিদ্ধান্ত নেয় জেলা পরিষদ। গত শুক্রবার বান্দরবান জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্যশৈলা এ তথ্য জানান। মানুষের মঙ্গলের কথা চিন্তা করে বৈসাবি উৎসব স্থগিত করা হয় বলে সাংবাদিক সম্মেলনে জানিয়েছিলেন চেয়ারম্যান।

Exit mobile version