parbattanews

বান্দরবানে শিম চাষে বিপ্লব, যাচ্ছে ‍অন্য জেলায়

শীত মৌসুমের অন্যতম সবজি শিম। প্রতিবছর শীত মৌসুমে বসতবাড়ীর আশেপাশে নদীর পাড় ও পাহাড়ের সমতল জায়গায় শিমের চাষ করে থাকেন চাষিরা। তাইতো চারিদিকে ছেয়ে গেছে শীতকালীন সবজি শিম। কম মূলধন ও স্বল্প পরিশ্রমে অধিক লাভজনক হওয়ায় দিন দিন পাহাড়ে বাড়ছে শিমের আবাদ। পাহাড়ের মাটি ও আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার শিম চাষের ভালো ফলন হয়েছে পার্বত্য জেলা বান্দরবানে। এই শীতকালীন সবজি হিসেবে জনপ্রিয় হওয়ায় বাজারের চাহিদাও রয়েছে ব্যাপক। আর ভাল ফলন ও ন্যায্য মূল্যে দাম পাওয়ায় খুশী চাষিরাও।

বান্দরবানের সবজিভাণ্ডার হিসেবে পরিচিত লামা, সুয়ালক, মাঝেরপাড়া, গোয়ালিখোলা, কদুখোলা, রেইছা,ডলুপাড়া বালাঘাটা। এসব এলাকায় বিভিন্ন স্থানে দু-চোখ যেখানেই পড়ে সেখানেই দেখা মেলে সবুজের সমারোহ। সেখানে বেশি চাষ হয় সীতাকুণ্ড, ঈপ্সা, নলডুবি কার্তিকীসহ বিভিন্ন দেশীয় জাতের শিম। এ এলাকার চাষিরা তামাক চাষ কমিয়ে দিয়ে এখন বিভিন্ন সবজি চাষের দিকে ঝুঁকছে। প্রতিদিন এসব এলাকা থেকে ট্রাক ও পিকআপে করে পাইকাররা শিমসহ বিভিন্ন শীতের সবজি নিয়ে যায় চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়। ভালো ফলন হওয়ার ফলে কৃষকের মুখে ফুটেছে তৃপ্তির হাসি। অনুকূল আবহাওয়ার কারণে এ মৌসুমে পাহাড়ে শিমসহ শীতকালীন সব সবজির ভালো ফলন হয়েছে বলে কৃষি বিভাগ জানিয়েছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, সদর উপজেলার বেশ কয়েকটি এলাকায় মাঠ জুড়ে ছেয়ে গেছে শিমের ক্ষেত। ছড়ায় ছড়ায় ঝুলে আছে শিম। আবার কোথাও কোথাও ফুলে ফুলে ভরে গেছে শিম গাছ। এমন চিত্র দেখা মিলছে সুয়ালক, রেইছাসহ বিভিন্ন স্থানে। প্রত্যেকটি ক্ষেত থেকে নারী-পুরুষ দলবেঁধে শিম সংগ্রহে ব্যস্ততার সময় পাড় করছেন তারা। কেউ ছিঁড়ছেন আবার কেউ বস্তায় ভরে নিয়ে যাচ্ছেন বিক্রি করতে। বাজারের চাহিদা থাকায় প্রতিকেজি শিম বাজারে বিক্রি হয় ৬০ থেকে ৮০ টাকায়। ভালো ফলন ও আশানুরূপ দাম পাওয়ায় খুশী চাষিরাও। তাছাড়া স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে চলে যাচ্ছে পাহাড়ে উৎপাদিত এই শিম।

রেইচা চাষি হ্লামং প্রু মারমা জানিয়েছেন, এবার দুই একর জমি জুড়ে শিমের চাষ করেছেন। সার ও কীটনাশকসহ সবকিছু মিলে খরচ হয়েছে ৬০ হাজারের মতন। প্রথম ধাপে বিক্রি করে পেয়েছেন ৩০ হাজার। শেষ মুহূর্তে পর্যন্ত শিম বিক্রি করে দেড়লাখ টাকা পাওয়ার আশা করছেন তিনি।

কয়েকটি এলাকার ঘুরে কথা হয় আব্দুল্লাহ, হিমেল চাকমা, শৈনাচিং মারমাসহ কয়েকজন চাষীদের সাথে। তারা জানিয়েছেন, শীতকালীন সবজি এই শিমের এবার ভালো ফলন হয়েছে। ক্ষেত থেকে ছিড়ে বিক্রি সময় পাড়া করছেন। এই শিম চাষের অল্প পুঁজিতে লাভবান হওয়ার যায়। শিমের পাশাপাশি বীজের দাম পাওয়া যায় দ্বিগুণ। তাছাড়া ভালো মতন পরিচর্যা করলে প্রায় ৮ থেকে ৯বার বিক্রি করা যায়।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর তথ্যনুযায়ী, গেল বছরের জেলায় ৬শত ৬২ হেক্টর জমিতে শিমের আবাদ হয়েছে। যা উৎপাদিত মাত্রা ছিল ৮টন। চলছি বছরে কমে ৬শত ৫০ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে। উৎপাদিত মাত্রা ধরা হয়েছে ১০ হাজার ৪শত মেট্রিক টন। তবে জেলায় ভয়াবহ বন্যা কবলিত কারণে কৃষি আবাদের পরিমাণ কিছুটা বিঘ্ন ঘটেছে।

বান্দরবানে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর অতিরিক্ত উপপরিচালক কৃষিবিদ হাসান আলী বলেন, এবার জেলার জুড়ে শিমের ফলন ভালো হয়েছে। বর্তমানে বাজারে যা দাম রয়েছে সেসব দামে বিক্রি করছেন চাষিরা। ন্যায্যমূল্য দাম পেয়ে খুশি কৃষকরা। তাছাড়া শিমের ফলন আরো যাতে বাড়ে সেজন্য মাঠে মাঠে গিয়ে কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

Exit mobile version