parbattanews

বান্দরবানে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে অবৈধ পাথর পাচার

লামা প্রতিনিধি:

জেলার আলীকদম ও লামা উপজেলায় প্রভাবশালী সিন্ডিকেটের মাধ্যমে অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন ও পাচার অব্যাহত রয়েছে। সারা বছর জুড়েই পাহাড় কেটে এবং ঝিরি ও ঝর্ণা খুঁড়ে লক্ষ লক্ষ ঘনফুট পাথর পাচার করা হচ্ছে। পাচারকারীদের পক্ষে প্রশাসনিক ও ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক সমর্থন থাকায় নিরাপদে জেলার বিভিন্ন সড়ক দিয়ে দিনরাত পাথর পাচার করার অভিযোগ উঠেছে।

আলীকদম উপজেলার মাতামুহুরী রিজার্ভের তুলাতলী, বুজি ও ধুমচি খাল, চৈক্ষ্যং এর বাঘের ঝিরি, আলীকদম থানচি সড়কের আশেপাশের ঝিরি, পাহাড় ও ঝর্ণা খুড়ে লক্ষ লক্ষ ঘনফুট পাথর পাচারের জন্য স্তুপ করে রাখা হয়েছে। লামা উপজেলার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়ন ও ফাইতং ইউনিয়নের প্রায় সকল মৌজার ঝিরি এবং পাহাড় খুঁড়ে পাথর উত্তোলন অব্যাহত রয়েছে। অবৈধ পাথর পরিবহন করতে গিয়ে সরকারের কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সড়ক, ব্রিজ ও কালভার্ট নষ্ট হয়ে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। একইভাবে জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি, থানচি, রুমা, রোয়াংছড়ি থেকে পাথর পাচার অব্যাহত রয়েছে। পরিবেশের বিরূপ প্রতিক্রিয়ায় পাহাড় ধস ও ভূমি ধস বেড়ে গেছে। শুষ্ক মৌসুমে ঝিরি ও ছড়াতে পানি শুকিয়ে যায়।

আলীকদম উপজেলা পান বাজার এলাকার উদয় মনি তংচঙ্গ্যা জানান, প্রশাসন মোবাইল কোর্টের মাধ্যমের মাঝে মধ্যে পাথর জব্দ করলেও অবৈধ পাচারকারীরা নিজেরা জব্দকৃত পাথর নিলামে ডেকে নেন। জব্দকৃত পাথরের নিলামের কাগজ দেখিয়ে পরবর্তীতে লক্ষ লক্ষ ঘনফুট পাথর অবৈধভাবে পাচারের জন্য প্রশাসনিক সুযোগ গ্রহণ করে। কুরুপ পাতা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ক্রাতপুং ম্রো বলেন, মাতামুহুরী রিজার্ভ এলাকা থেকে কতিপয় ব্যক্তি অবৈধভাবে পাথর আহরণের ফলে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হতে চলেছে।

সম্প্রতি আলীকদম থানচি সড়কের বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে ৪৬ হাজার ঘনফুট পাথর জব্দ করে নিলাম দেওয়া হয়। অভিযোগ উঠেছে জব্দকৃত এ সকল পাথর পরিবহনের জন্য ৬ মাস সময় দেওয়া হয়েছে। পাথর নিলামের এই কাগজ দেখিয়ে আলীকদম থেকে দিনরাত পাথর পাচার অব্যাহত রয়েছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের জনৈক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, অবৈধ পাথর উত্তোলন ও পাচারকারীদের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলার মাধ্যমে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ না করে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে পাচারকারীদের এক প্রকার বৈধতা প্রদান করা হচ্ছে।

পাচারকারীরা অবৈধভাবে পাথর স্তুপ করে প্রশাসনের সহযোগিতায় জব্দ দেখিয়ে আবার নিজেরা নিলাম ডেকে পাথর পাচারের বৈধতার কাগজ সৃষ্টি করছেন। স্থানীয় পরিবেশ সচেতন মহল উদ্বেগ প্রকাশ করে জানিয়েছেন, মূলত অবৈধ পাথর পাচারকারী সিন্ডিকেটের সাথে গোপন আতাত করে নিলামের মাধ্যমে পাথর পাচারের জন্য কাগজ সৃষ্টি করা হয়। আলীকদম সদর ইউপি চেয়ারম্যান জামাল উদ্দিন জানিয়েছেন, তিনি ৪৬ হাজার জব্দকৃত অবৈধ পাথর নিলামে ক্রয় করেছেন।

বান্দরবান জেলা প্রশাসক দিলীপ কুমার বণিক জানিয়েছেন, আলীকদম ও লামায় পাথর আহরণের কোন অনুমতি নাই। যারা এসব করছে প্রয়োজনে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে।

Exit mobile version