বান্দরবানে সড়ক জুড়ে ছেয়ে আছে কৃষ্ণচূড়ার ফুল

fec-image

‘কৃষ্ণচূড়া কৃষ্ণচূড়ার রাঙা মঞ্জুরি কর্ণে-আমি ভুবন ভুলাতে আসি গন্ধে ও বর্ণে’ জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের এই মনোমুগ্ধকর গান আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় কৃষ্ণচূড়ার তাৎপর্য। তার মোহনীয় সৌন্দর্য নিয়ে আবারও হাজির হয়েছে প্রকৃতিতে। চোখ ধাঁধানো সৌন্দর্য যেন হার মানায় ঋতুরাজকেও। তাইতো কৃষ্ণচূড়ায় দিয়েছে অন্য এক সৌন্দর্য।

সারাদেশের মতো প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি পার্বত্য জেলা বান্দরবানে দেখা মিলছে লালচে ঘেরা কৃষ্ণচূড়া ফুলের। প্রকৃতিতে এখন কৃষ্ণচূড়ার বর্ণিল হাওয়া দোলা দিচ্ছে। সুবাতাস ছুঁয়ে যাচ্ছে ফুল ও প্রকৃতিপ্রেমী মানুষের হৃদয়। পাখির ডানায়, হাওয়ায়-হাওয়ায় উড়ছে তার লাবণ্য। এ যেন রোদ্দুরকে সহনীয় করতে কৃষ্ণচূড়ার বর্ণিল রূপে সেজে উঠেছে প্রকৃতি। দেখলেই মনে হয় কৃষ্ণচূড়ার রঙের আগুন জ্বলছে শাখায় শাখায়। গাছে গাছে রক্তিম আভা নিয়ে জেগে থাকা কৃষ্ণচূড়া দৃষ্টি কাড়ছে সেসব ফুলপ্রেমী মানুষদের, যারা শত ব্যস্ততার মধ্যেও ফুলের জন্য অপেক্ষা করেন। আর কৃষ্ণচূড়ার সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রহর গোনেন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, বান্দরবান-কেরানীহাট সড়কের দু’পাশ জুড়ে কোথাও না কোথাও দেখা মিলছে কৃষ্ণচূড়ার। পার্বত্য জেলা পরিষদ, মেঘলা পর্যটন কেন্দ্র, নীলাচল সড়ক, হলুদিয়া ছাড়াও চিম্বুক সড়কেও দেখা মিলছে কৃষ্ণচূড়া ফুল। সড়কের দু’পাশ জুড়ে ফুলটি সগর্বে জেগে রয়েছে। ঘুরতে আসা স্থানীয় পর্যটকরাও সৌন্দর্য দেখে ছবি তুলছেন। তাই ফুল উৎসবের ঋতু বলা যায় গ্রীষ্মকালকেই। এ মৌসুমে কৃষ্ণচূড়ার লাল রঙের যে উম্মাদনা, তা এতই আবেদনময়ী যে চোখ ফেরানো অসম্ভব।

জানা গেছে, রঙে, রূপে, উজ্জ্বলতা ও কমনীয়তায় কোনো কিছুই যেন কৃষ্ণচূড়ার সমকক্ষ নয়। কৃষ্ণচূড়ার সৌন্দর্যে একবারের জন্য হলেও দৃষ্টি আটকে যায় না কিংবা থমকে দাঁড়ায় না। কৃষ্ণচূড়ার বৈজ্ঞানিক নাম “ডেলোনিখ রেজিয়া”। এটি ফাবাসিয়ি পরিবারের অন্তর্গত একটি বৃক্ষ যার গুলমোহর নামেও পরিচিতি রয়েছে।
বসন্তের শেষ দিকে সাধারণত কৃষ্ণচূড়ার পাতা ঝরে পড়তে শুরু করে। ধীরে ধীরে পত্রহীন বাঁকানো ডালগুলোতে দেখা যায় কলির আভাস। অন্যান্য ফুল গাছে যখন নতুন পাতা আসে কিন্তু ফুল আসে না, ঠিক তখনই কৃষ্ণচূড়ার সব পাতা ঝরে গিয়ে ফুলের কলি দেখা দেয়। আর গ্রীষ্মের শুরুতেই দেখা যায় লালের আভাস। তারপর লালে লালে উজ্জ্বল হয়ে প্রতৃতিতে যেন আগুন লাগিয়ে দেয় কৃষ্ণচুড়া।

ফুলপ্রেমী ও প্রকৃতিপ্রেমী মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যারা ফুলপ্রেমী মানুষ, তাদের কাছে কৃষ্ণচূড়া একটি জনপ্রিয় ফুল। তাছাড়া সড়কের দু’পাশ জুড়ে এই কৃষ্ণ ফুলের সৌন্দর্য দেখতে পেয়ে আনন্দে যেনো মাতোয়ারা। নানা বৈশিষ্ট্যে দৃষ্টিনন্দন এ ফুলের কদর রয়েছে সব মহলেই। বিশেষ করে বাংলা কাব্য, সাহিত্য, সংগীত ও বিভিন্ন উপমায় কৃষ্ণচূড়া ফুলের কথা ব্যাপকভাবে উঠে এসেছে। ফুলটির রং এত তীব্র যে অনেক দূর থেকেই চোখে পড়ে। হঠাৎ দূর থেকে দেখলে মনে হবে, কৃষ্ণচুড়া গাছে যেন রঙের আগুন লেগেছে।

ঘুরতে আসা পর্যটক রাকিবসহ বেশ কয়েকজন জানান, যখন কৃষ্ণচূড়া ফুটে তখন গাছে গাছে লাল-সবুজ রঙে যেন ভরে উঠে। আর এ সময়টা খুবই ভালো লাগে। সেটা এক অন্যরকম ভালোবাসা। সড়কের দু’পাশ জুড়ে যে ফুলে সৌন্দর্যের প্লাবিত তা দেখে খুবই মুগ্ধ।

চান্দের গাড়ি চালক সাদ্দাম হোসেন বলেন, বান্দরবান শহর থেকে শুরু করে সড়কের দু’পাশে কৃষ্ণচূড়া ফুল। আর এটা দেখে অনেক পর্যটক নেমে ছবি তুলছেন। আর দেখতে বেশ মনোমুগ্ধকর। সড়কের পাশে বেশি করে কৃষ্ণচূড়া ফুলের গাছ লাগিয়ে দিলে আরো সৌন্দর্য ফুটে উঠবে।

বান্দরবান বন বিভাগের সদর রেঞ্জ কর্মকর্তা সুলতান মাহমুদ বলেন, সড়কের পাশে উন্নয়নমূলক কাজ করতে কিছু গাছ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেসব গাছগুলোকে তুলে আবার সড়কজুড়ে গাছ লাগানো হবে। বন বিভাগ থেকে খুব শীগ্রই গাছের চারা রোপণ কর্মসূচি হাতে নেয়া হবে।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: কৃষ্ণচূড়া ফুল, বান্দরবান, সড়ক
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন