parbattanews

বান্দরবানে সড়ক নির্মাণে বালির পরিবর্তে পাহাড়ের মাটি ব্যবহার

বান্দরবানের লামা উপজেলায় সরই ইউনিয়নের ডিগ্রী খোলা থেকে কম্পোনিয়া-পূর্ব চাম্বী সড়ক নির্মাণ কাজে বালুর পরিবর্তে পাহাড়ের লাল মাটি ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সড়কে এমন নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করায় সড়কের স্থায়িত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে স্থানীয় জনসাধারণের মাঝে।

অভিযোগ আছে, সড়ক উন্নয়নের কাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করাতে গতবছরে কাজ বন্ধ করে দেন উপজেলা প্রকৌশলী। চলতি বছরে পুনরায় সড়কের কাজ শুরু হলেও একইভাবে নিম্নসামগ্রী দিয়ে কাজ শুরু করেছেন। যার ফলে স্থানীয় বাসিন্দাদের মাঝে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।

এলজিইডি সূত্রে জানা যায়, স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী (এলজিইডি) অর্থায়নের ২০২২-২৩ অর্থ সালের ৪ কোটি ৩৯ লাখ টাকার ব্যয়ের চার কিলোমিটার ইউনি ব্লকের সড়ক নির্মাণের কাজটি বাস্তবায়ন করছে ঠিকাদার আব্দুর রহিম। চলতি বছরের জুন মাসে কাজটি সম্পন্ন হওয়ার কথা রয়েছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সরই ইউনিয়নের ডিগ্রী খোলা থেকে প্রায় চার কিলোমিটার সড়ক বয়ে গেছে কম্পোনিয়া-পূর্ব চাম্বী পর্যন্ত। সড়কের কাজ প্রায় অর্ধেক শেষ। পূর্বচাম্বী ডিগ্রী খোলা থেকে সড়কের দু’পাশে বক্স করে ইউনিব্লক বসানো কাজ চলমান। কিন্তু সড়কের কাজে বালির পরিবর্তে ব্যবহার করা হচ্ছে পাহাড়ের মাটি। শুধু তাই নয়, সড়ক নির্মাণের বিভিন্ন কাজের ব্যবহার করা হচ্ছে নিম্নমানের ইট। এ ছাড়াও পিলার তৈরী ও গাইড ওয়ালে কাজে মসল্লায় ৪/১ দেওয়ার কথা থাকলেও বালু ছাড়া সিমেন্টের কোন অস্তিত্ব দেখা মেলেনি। সিডিউলের কোন শর্ত না মেনে সড়ক নির্মাণ কাজ চালিয়ে যাচ্ছে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানটি। তাছাড়া কাজের শুরু থেকেই নিম্নমানের ইট ও বালুর পরিবর্তে পাহাড়ের বালু ব্যবহার করে কাজ করে আসছিল ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। স্থানীয়দের আপত্তির মুখে সাময়িক কাজ বন্ধ করলেও বর্তমানে ইচ্ছেমতো নির্মাণ কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।

ডিগ্রীখোলা এলাকার বাসিন্দা মোজর মিঞা বলেন, বালির পরিবর্তে পাহাড়ের মাটি ব্যবহার করায় এর আগেও একবার কাজটি বন্ধ করে দিয়েছিল। এখন আবার শুরু করেছে রাস্তার কাজ। কিন্তু অফিসের লোকজন না থাকায় সে সুবাধে আবারো পাহাড়ের মাটি ও ঝিরি-ঝর্ণার বালু ব্যবহার করছে সড়ক নির্মাণ কাজে। এভাবে চলতে থাকলে এত টাকা দিয়ে নির্মিত সড়ক এক বছরও টিকবে কিনা তা সন্দেহ রয়ে যায়।

পুইট্টা ঝিড়ি এলাকার বাসিন্দা আমিনুক ইসলাম বলেন, দেখলেও বলার কিছু নেই, দিন দুপুরেই এভাবে নিম্নমাণের নির্মাণ সামগ্রী দিয়ে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। যদি অফিস থেকে তদারকি করা হতো তাহলে এভাবে কাজ করার সুযোগ পেতো না। কাজের গুণগত মান রক্ষার্থে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের তদারকি বৃদ্ধি করার দাবি জানান তিনি।

সড়ক নির্মাণ কাজে দেখাশোনা করছেন সাইড ম্যানেজার নুরুল কবির। কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ঠিকাদার যেভাবে কাজ করতে বলেছে সেভাবে করা হচ্ছে। তাছাড়া কাজের মান খুবই নিম্নমানের। আপনারা এই ব্যাপারে ঠিকাদার সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।

অনিয়মের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে ঠিকাদার আব্দুর রহিম বলেন, আমার কাজে কোন অনিয়ম হচ্ছে না। শুধুমাত্র পাহাড়ের বিভিন্ন বাহিনীর চাঁদার কারণে কাজটি সাময়িক সময়ের জন্য বন্ধ ছিল। পরবর্তীতে যথা সময়ে কাজ আবারো চালু করা হয়। তাছাড়া আমার কাজে কোন অনিয়ম হয়নি। সড়কের নির্মাণের কাজ শতভাগ হচ্ছে বলে দাবি করেন এই ঠিকাদার।

অনিয়মের কারণে কাজ বন্ধ করে দেয়ার বিষয়টি স্বীকার করে লামা স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী অধিদপ্তরের (এলজিডি) সহকারী প্রকৌশলী আবু হানিফ বলেন, স্থানীয়দের অভিযোগের ভিত্তিতে পরিদর্শন করি এবং সড়ক নির্মাণ কাজে বালুর পরিবর্তে পাহাড়ের মাটি ব্যবহারের সত্যতা পাই। পরবর্তীতে সম্পূর্ণ পাহাড়ের মাটি অপসারণ করে পুনরায় কাজ চালু করার জন্য ঠিকাদারকে নির্দেশ দেয়া হয়।

তিনি আরও বলেন, যদি আবারো বালুর পরিবর্তে পাহাড়ের মাটি ব্যবহার করে থাকলে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Exit mobile version