বান্দরবান: করোনা যুদ্ধে তিন নারী কর্মকর্তা

fec-image

বান্দরবানে করোনা যুদ্ধে তিন নারী প্রশংসনীয় ভূমিকা রাখছেন। বিশেষ করে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ এড়াতে পুলিশ ও মাঠ পর্যায়ের প্রশাসনে এসব নারীর চমকপ্রদ উদ্যোগগুলো আলোচনায় রয়েছে। সাধুবাদ জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও সাড়া ফেলেছে তাঁদের কাজগুলো। আগামীতে নারী কর্মকর্তাদের যোগ্যতা ও বিচক্ষণতার কাজগুলো এলাকায় উজ্জল দৃষ্ঠান্ত হয়ে থাকবে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।

বান্দরবান জেলা পুলিশ সুপার জেরিন আখতার। এছাড়া নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাদিয়া আফরিন কচি ও লামা উপজেলা নির্বাহী অফিসার নূর-এ জান্নাত রুমি তিনজনই নারী।

এসব কর্মকর্তাদের স্ব স্ব প্রতিষ্ঠান ও এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তাঁরা বর্তমান কর্মস্থলে যোগদানের পর থেকে প্রতিষ্ঠানগুলোতে আগের তুলনায় কাজের গতি ফিরেছে। সেবাপ্রার্থীরাও তাদের কর্মকাণ্ডে সন্তুষ্ট। এছাড়া পুরুষের তুলনায় এসব নারী কর্মকর্তারা ঘুষ-দূর্নীতি মুক্ত প্রশাসন চালাচ্ছেন। বিশেষ করে বর্তমানে সারাবিশ্বের মতো বাংলাদেশেও করোনাভাইরাস প্রতিরোধে নানামুখী উদ্যোগ নিয়ে সরকার তথা প্রশাসন কাজ করে যাচ্ছে। এই অবস্থায় আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ ও মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের উপর পড়েছে গুরু দায়িত্ব।

মানুষকে ঘরে থাকার জন্য উদ্বুদ্ধ, বিদেশফেরত মানুষকে কোয়ারান্টাইমে রাখা, অসুস্থ্য রোগীদের পরামর্শ ও চিকিৎসা, বাজার নিয়ন্ত্রণ, সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত, আইন শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণসহ ঘরবন্দি উপোষ মানুষের খাবারের ব্যবস্থা পর্যন্ত করতে হচ্ছে এসব কর্মকর্তাদের। এছাড়াও রয়েছে স্ব স্ব প্রতিষ্ঠান পরিচালনার গুরুত্বপূর্ণ কাজও।

এরই মধ্যে ভিন্নধর্মী উদ্যোগ গ্রহণ করে বান্দরবান জেলা পুলিশ প্রশাসনের সাড়া ফেলেছেন জেলা পুলিশ সুপার জেরিন আখতার। দেশের চলমান পরিস্থিতিতে যাদের ঘরে খাবার নেই, লোকলজ্জা বা ছবিতে ফ্রেমবন্দি হওয়ার ভয়ে সামনে আসছেন না তাদের জন্য সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন তিনি। এই জন্য পুলিশ কন্টোলরুমসহ জেলার সাত থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের নাম্বার দিয়ে যোগাযোগের উদ্যোগ নিয়েছেন। পাশাপাশি ঘরে থাকার জন্য অনুরোধ করেছেন।

এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে নিম্নশ্রেণীর পাশাপাশি মধ্যশ্রেণীর মানুষগুলোর আয় রোজগারের কথা বিবেচনা করে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কারণ মধ্যমশ্রেণীর মানুষগুলো সাহায্যের জন্য হাত বাড়াতে সংকোচবোধ করেন।

এদিকে পাশের উপজেলায় করোনা আক্রান্ত রোগী পাওয়ার পর থেকে নাইক্ষ্যংছড়ি, লামা ও আলীকদম উপজেলা লকডাউন করা হয়েছে। বিশেষ কোন কারণ ও প্রয়োজন ছাড়া এসব উপজেলা থেকে কাউকে প্রবেশ ও বের হতে দেওয়া হচ্ছে না।

এই অবস্থায় সীমান্তবর্তী উপজেলা নাইক্ষ্যংছড়িতে খেটে খাওয়া মানুষ দুর্ভোগে পড়েছে। এই উপজেলার প্রশাসনের অভিভাবকও একজন নারী। তিনি উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাদিয়া আফরিন কচি। তিনি যোগদানের পর থেকে প্রশাসনিক উন্নয়ন ও মাঠ পর্যায়ে মানুষের সেবার মাধ্যমে আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছেন। চলমান করোনা পরিস্থিতিতে উপজেলার মানুষকে ঘরে থাকার পরামর্শ দিয়ে প্রতিদিনই তিনি পাঁচ উপজেলার আনাচে কানাচে পাঠাচ্ছেন সরকারি ত্রাণ সহায়তা। এরপরও লকডাউনের কারণে কারো বাসা-বাড়িতে খাবার সংকট থাকলে বা অসহায় যারা ত্রাণ পাননি তাদের বিষয়ে তিনি নিজেই তদারকি করছেন। যেকোন ধরনের সহযোগিতার জন্য তিনি নিজের মুঠোফোন সার্বক্ষনিক খোলা রেখেছেন সবার জন্য।

এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কর্মহীন, কর্মজীবী এবং অসহায় দুস্থ্য মানুষের পাশাপাশি মধ্যশ্রেণীর মানুষ যাতে ত্রাণ পায় সেই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। প্রত্যেক উপজেলা প্রশাসন, বিজিবি ও পুলিশ প্রশাসনসহ জনপ্রতিধিদের মাধ্যমে মানুষকে ঘরে থাকার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

অন্যদিকে লামা উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসেবে দুই বছর দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন নূর-এ জান্নাত রুমি। তিনিও যোগদানের পর থেকে উপজেলার অপরাধীদের কাছে দাপুটে ও আতঙ্ক কর্মকর্তা হিসেবে পরিচিতি পান। বর্তমান অবস্থায় করোনা সম্পর্কিত কোন তথ্য পেলে তিনি নিজেই ছুটে যাচ্ছেন ঘটনাস্থলে। উপজেলায় লকডাউনের পর থেকে অসহায় হতদরিদ্রদের কাছে ত্রাণ সহায়তা পৌঁছে দিচ্ছেন তিনি নিজেই। পাশাপাশি সমাজিক দূরত্ব বজায় রেখে করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য দিনরাত উপজেলা চষে বেড়াচ্ছেন এই নারী কর্মকর্তা।

সচেতন মহল জানান, এই তিন নারী কর্মকর্তা দায়িত্বপালনে যেখানেই যাচ্ছেন অসহায়, দরিদ্রসহ সব শ্রেণীর নারীরা তাদের সানিধ্যে যেতে পারছেন। নিজেদের অভাব ও লুকিয়ে রাখা মনের কথা খুলে বলতে পারছেন। তাদের মতে পুরষের চেয়ে নারীদের সততারগুণ বেশি। যার কারণে এসব নারীদের কর্মক্ষেত্রগুলো দুর্নীতিমুক্ত থাকছে। পাশাপাশি বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে তাদের প্রশংসনীয় কাজগুলো আগামীর জন্য ইতিহাস হয়ে থাকবে।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: তিন নারী কর্মকর্তা, বান্দরবান
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন