parbattanews

বান্দরবান পৌরসভায় ড্রেন নির্মাণ: বৈদ্যুতিক খুটি, পানির লাইন ও কাদামাটি রেখে চলছে কাজ

বর্ষা মৌসুমে স্বাভাবিক বৃষ্টি হলে পানিতে তলিয়ে যায় বান্দরবান শহরের আর্মি পাড়া-ওয়াপদাব্রিজ এলাকা। দীর্ঘদিনের এই দুর্ভোগ নিরসনে ওই এলাকার কিছু অংশে আরসিসি ড্রেন নির্মাণে পৌরসভা উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নিলেও তাতে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে উঠেছে অনিয়মের অভিযোগ। নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার ও দরপত্রের শর্ত মোতাবেক কাজ না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা।

সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, নগর পরিচালন ও অবকাঠামো উন্নতিকরণ প্রকল্প (ইউজিআইএপি) এর আওতায় বান্দরবান পৌরসভায় বিভিন্ন উন্নয়নের কাজ চলমান রয়েছে। প্রায় ৩০ কোটি ৪৭ লক্ষ টাকার কাজ পৌর এলাকার নয়টি ওয়ার্ডে হচ্ছে। ওই প্রকল্পের একটি অংশে শহরের আর্মি পাড়ায় সরু রাস্তার পাশে আরসিসি ড্রেন নির্মাণ কাজ করছে ইউটিমং নামে একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। ২০২০-২১ অর্থ বছরে টেন্ডার প্রক্রিয়ার পর মূল ঠিকাদার থেকে কাজটি কিনে নিয়েছেন ঠিকাদার সুমন পাল, স্বয়ন চৌধুরী শাওন।

পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ডের আর্মিপাড়া কুদ্দুসভিলার সামনের রাস্তা থেকে শুরু করে ওয়াব্দাব্রিজ পর্যন্ত ১শ মিটার দৈর্ঘ্যের আরসিসি ড্রেন নির্মাণ কাজ শুরু থেকে নানা অনিয়মের মাধ্যমে চলছে বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন। সড়কের একপাশে চলমান কাজটির প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছে ২২লক্ষ টাকা।

আর্মিপাড়া এলাকার বাসিন্দা আব্দুল হক, মোল্লা উকিল, ইউনুছ, হানিফ মোল্লা ও ওয়াব্দাব্রিজ এলাকার বাসিন্দা মো. শাহীন, মহসিন, ইউছুপ হোসেন জানান, কাজের শুরু থেকে ড্রেন নির্মাণে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করা হচ্ছে। ময়লাযুক্ত পাহাড়ী পাথর, রড়, বালি, সিমেন্ট সিডিউল অনুযায়ী ব্যবহার করা হয়নি।

সরেজমিনে দেখা যায়, বৈদ্যুতিক খুটি, পানির পাইপ লাইন ড্রেনের ভিতরে রেখে কাদামাটির মধ্যেই হয়েছে ঢালাই কাজ। কাদামাটিতে ইট বিছিয়ে রড বাধা হয়েছে। সমাপ্ত হওয়া কাজের উপরিঅংশে স্লাব বসানো হয়েছে। বর্ষা মৌসুমে ড্রেনে পানি চলাচল কোন কাজে আসবে না বরঞ্চ ড্রেনে পানি জমাট হয়ে রাস্তায় চলাচলে মানুষের দুর্ভোগ বাড়বে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।

এদিকে এমন নিম্নমানের কাজের বিষয়ে স্থানীয়রা প্রতিবাদ জানালেও কর্ণপাত করছেন না ঠিকাদার। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন শ্রমিক জানান, ঠিকাদারের নির্দেশমতো কাজ করছেন তারা। নিয়ম-অনিয়ম দেখার কাজ তাদের নয়। সরেজমিনে কাজের বিষয়ে জানতে চাইলে শ্রমিক রুবেল জানান, ‘পৌরসভার কাউন্সিলর শেখর দাশ, সুমনসহ কয়েকজন ঠিকাদার এই কাজ করছেন বলে শুনেছি। তবে কাজের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য জানা নেই আমার’।

এই প্রসঙ্গে চলমান উন্নয়ন কাজের চিত্র পাঠিয়ে কাজের মানের বিষয়ে জানতে চাইলে বান্দরবান পৌরসভার প্যানেল মেয়র শেখর দাশ বলেন, ‘পাথরগুলো নিম্নমানের’। কাজটি তিনি করছেন না। তবে কাজ যেই করুক-না কেন, এই বিষয়ে তিনি খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নিতে পারবেন।

জানতে চাইলে বান্দরবান পৌরসভার উপসহাকারী প্রকৌশলী ও কাজ তদারকির দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা খায়রুজ্জামান বলেন, ‘পাহাড়ি পাথর ব্যবহার না করার জন্য ঠিকাদারকে বার বার বলা হয়েছে, বিষয়টি নিয়ে ঠিকাদারের সঙ্গে আপনারা কথা বলেন’। এলাকার লোকজন পানির লাইনগুলো সরিয়ে নেয়নি এবং ড্রেনে বৈদ্যুতিক খুটি রেখে ঢালাইয়ের কথা স্বীকার করেন তিনি।

Exit mobile version