বান্দরবান শহরে চাহিদার এক তৃতীয়াংশ পানিও পাচ্ছেন না মানুষ

fec-image

‘মুসল্লি ভাইয়েরা মসজিদে পানি নেই, বাসা থেকে অজু করে আসুন’। এটি বান্দরবান পৌর শহরের কয়েকটি মসজিদের মাইক থেকে ভেসে আসা মুসল্লিদের প্রতি অনুরোধ।

২৫.৮৮ বর্গকিলোমিটারের বান্দরবান পৌর শহরের বেশ কয়েকটি মসজিদে প্রায় সময় আজানের পর মুয়াজ্জিনের এমন অনুরোধ শুনা যায়। শুধু মসজিদই নয়, ‘পানি সংগ্রহ করা কষ্টকর ও ব্যয় বহুল দয়া করে পানি ব্যবহারে সাশ্রয়ী হউন’ এমন অনুরোধ সম্বলিত বিজ্ঞপ্তি টাঙ্গিয়ে দেওয়া হয়েছে অনেক বাড়ি ও হোটেল-রেস্তোরায়। এভাবে পর্যাপ্ত পানি না থাকায় বিপাকে পড়েছেন শহরের মানুষ।

সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ৭৫ হাজার মানুষের বান্দরবান পৌর শহর এলাকার বিভিন্ন হোটেল, বাসা-বাড়ি ও অফিসে পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। কোনভাবেই কাটছেনা পানির এই সংকট।

স্থানীয়রা জানান, খাবার পানি সংকট দীর্ঘদিনের। তার মধ্যে নিত্য প্রয়োজনীয় ব্যবহার্য পানির সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। চাহিদার এক তৃতীয়াংশ পানিও পাচ্ছেন না তারা।

বিশেষ করে পৌর শহরের আর্মিপাড়া, গোরস্তান মসজিদ, মেম্বারপাড়া, বনরূপা, কাশেমপাড়া, মধ্যমপাড়া, জাদিপাড়া, কলাপাড়া, ও বাজার এলাকায় পানির সংকট সবচেয়ে বেশি। এখানকার বাসিন্দারা আশপাশের মানুষের গভীর নলকূপ থেকে পানি সংগ্রহ করে থাকেন।

পৌর এলাকার বাসিন্দারা জানান, জনস্বাস্থ্য বিভাগের পানি সরবরাহ কেন্দ্র থেকে প্রতি সপ্তায় একদিন বা দুদিন এক ঘণ্টা করে পানি সরবরাহ দেওয়া হলেও তা মোটেও পর্যাপ্ত নয়।

শহরের আবদুল কুদ্দুস, মোহাম্মদ আলম, নুরুল আবছার, নুরুল কাশেমসহ একাধিক বাসিন্দা জানান, শুধু মসজিদে পানি সংকট তা না। প্রতিটি বাসাবাড়িতে পানির সংকট রয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন প্রতিষ্ঠিত বাড়ির মালিক এই প্রতিবেদককে জানান, লক্ষ লক্ষ টাকা ব্যয় করে বিল্ডিং করেছি। কিন্তু ঠিকমতো ভাড়াটিয়াদের পানি সরবরাহ করতে না পেরে ভাড়াটিয়াদের কাছে প্রতিনিয়ত ছোট হতে হয়। পানি না থাকায় এরকম বেশ কয়েকটি বাড়ি ভাড়াটিয়াদের কাছে চিহ্নিত হয়ে গেছে শহরে। পানি সংকটের কারনে এসব বাসায় সহজেই মানুষ ভাড়া নিতে চাননা।

সচেতন নাগরিকরা জানান, বান্দরবান শহর ঘেষে ৫.৫কি.মি সাঙ্গু নদী বয়ে গেছে। আশপাশে রয়েছে পাহাড় ছড়া। এরপরও বান্দরবান পৌর শহরে পানি সংকট দূর করতে না পারা জনস্বাস্থ্য বিভাগের ব্যর্থতা ছাড়া আর কিছুই-না। প্রতি বছর এই প্রতিষ্ঠানে কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ হলেও রমজান মাসে বান্দরবান পৌর শহরসহ বিভিন্ন উপজেলায় পার্বত্য উন্নয়ন বোর্ড ও সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে সুপেয় পানি সরবরাহ করতে হয়।

তাঁরা আরও জানান, ক্যাচিংঘাটা পৌর পানি সরবরাহ কেন্দ্র থেকে সরবরাহকৃত পানি কতটুকু স্বাস্থ্যসম্মত, নিয়মিত আর্সেনিক বা আয়রন এবং পানিতে নিয়মিত কেমিক্যালসহ অন্যান্য মেডিসিন মিশ্রিত হয় কিনা তা নিয়েও জনমনে শঙ্কা রয়েছে। পানির এমন সংকট নিয়ে প্রায় সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মানুষের ক্ষোভের চিত্র চোখে পড়ে।

এই প্রসঙ্গে জানতে যোগাযোগ করা হলে বান্দরবান জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপসহকারী প্রকৌশলী (পানি সরবরাহ) খোরশেদ আলম বলেন, পৌর শহরে দৈনিক পানির চাহিদা ৮০ লক্ষ লিটার। ৪০ লক্ষ লিটার পানি পালাক্রমে সরবরাহ করা হচ্ছে। জনসংখ্যা অনুপাতে ৫০ শতাংশ কভারেজ হচ্ছে বলে তিনি দাবি করেন।

তিনি আরও জানান, পৌর এলাকায় পানির সংকট রোধে ইতিমধ্যে একটি প্রকল্পের কাজ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে শহরে পানির সংকট কেটে যাবে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন