parbattanews

বাবুল দে হত্যায় উপজাতীয় সংখ্যালঘু নেতারা নীরব কেন?

আল আমিন ইমরান:

আমাদের পার্বত্য চট্টগ্রামে বৃহত্তর বাঙালি জনগোষ্ঠীর পাশাপাশি তেরটি ক্ষুদ্র-জাতিসত্তা তথা উপজাতি সম্প্রদায়ের বসবাস। এখানে বাঙালি সম্প্রদায় বলতে মুসলমান, হিন্দু, বড়ুয়া ও খৃষ্টান ধর্মাবলম্বীদের বোঝায়।
সারা দেশে মুসলমান ধর্মাবলম্বী ব্যতীত অন্য সকল ধর্মাবলম্বীদের বলা হয় সংখ্যালঘু। তবে এই ক্ষেত্রে পার্বত্য চট্টগ্রামের অবস্থান ভিন্ন। ভিন্ন এইজন্য যে সারাদেশের পরিস্থিতি ও পার্বত্য প্রেক্ষাপট আলাদা। পাহাড়ে
জনসংখ্যায় উপজাতীয় বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী ও বাঙালি মুসলমান ধর্মাবলম্বীরা সংখ্যাগরিষ্ঠ। এখানে হিন্দু ও বড়ুয়ারা জনসংখ্যার দিক থেকে কম। অর্থাৎ পাহাড়ের প্রকৃত সংখ্যালঘু হলো, হিন্দু ও বড়ুয়া সম্প্রদায়।

বরাবরই পার্বত্য উপজাতীয় ভিক্তিক সংগঠনের নেতারা দাবি করে বলে থাকেন যে, পার্বত্য হিন্দু ও বড়ুয়া সম্প্রদায় তাদের সমজাতীয়। উপজাতীয় নেতাদের ভাষ্য, তারা পাহাড়ে নির্যাতিত সংখ্যালঘুদের অধিকার প্রতিষ্ঠা ও নির্যাতনের প্রতিবাদে সংগ্রাম করছে। এই নেতাদের এমনই মুখের বুলি দিয়ে দেশের স্পর্শকাতর সংখ্যালঘু ইস্যুতে নিজেদের সম্পৃক্ত করতে সারাদেশের হিন্দু ও বড়ুয়া নেতাদের সাথে আঁতাত করছে। সেই ধারাবাহিকতায় পার্বত্য রাঙামাটির সংসদ সদস্য ও উপজাতীয় নেতা বাবু উষাতন তালুকদার সারাদেশের সংখ্যালঘুদের সর্ববৃহৎ সংগঠন “হিন্দু-বৌদ্ধ -খৃষ্টান ঐক্য পরিষদ” এর কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি পদ অর্জন করেছেন। এই পদাধিকারবলে উপজাতীয় নেতারা পার্বত্য উপজাতীয় ভিত্তিক ইস্যুতে সারাদেশের সংখ্যালঘু নেতাদের ব্যবহার করছেন।

কিন্তুু উপজাতীয়ভিত্তিক সংগঠনের কথিত পার্বত্য সংখ্যালঘু নেতারা পার্বত্য চট্টগ্রামের আসল সংখ্যালঘু হত্যায় নীরব কেন- এ প্রশ্ন আজ ঘুরে ফিরছে পাহাড়ের সর্বত্র। বিশেষ করে, পার্বত্য রাঙামাটি জেলার নানিয়ারচরে সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের বুড়িঘাট জগন্নাথ মন্দিরের সভাপতি বাবুল দে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় এইসব উপজাতীয় ‘সংখ্যালঘু’ নেতাদের নীরবতায় পার্বত্য চট্টগ্রামে সৃষ্টি হয়েছে নানা প্রশ্নের। এদিকে কারা পার্বত্য সংখ্যালঘু নির্যাতনকারী এবং এই হত্যাকাণ্ডে কারা জড়িত- সে প্রশ্নও উঠে আসছে মুখে মুখে। পার্বত্য চট্টগ্রামের কথিত সংখ্যালঘুদের নেতা যারা রয়েছেন তাদের উদ্দেশ্যইবা কী তা এবার দেশের সুশীল সমাজের বোঝার সময় এসেছে। বিশেষ করে এ হত্যাকাণ্ডকে ঘিরে খোদ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের রহস্যময় অবস্থান নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে নানা প্রশ্নের।

সম্প্রতি পার্বত্য রাঙামাটি জেলার নানিয়ারচরে সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের বুড়িঘাট জগন্নাথ মন্দিরের সভাপতি বাবুল দে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। হিন্দু সম্প্রদায়ের সর্ববৃহৎ উৎসব দূর্গাপূজার আগ মূহুর্তে এই নির্মম হত্যাকাণ্ডে সম্প্রদায়ের সাধারণ মানুষের মাঝে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃস্টি হলেও কথিত উপজাতীয় সংখ্যালঘু নেতারা সম্পূর্ণ নীরব। পার্বত্যবাসী মনে করে, কথিত সংখ্যালঘু নেতাদের এই নীরবতার মূল কারণ: বাবুল দে ধর্মীয় দিক থেকে হিন্দু হলেও জাতে বাঙালি। আর পার্বত্য বাঙালি হত্যা করা উপজাতীয় নেতাদের কাছে কোন গুরুতর অপরাধ নয়। কারণ তারা কারণে অকারণে প্রতিনিয়ত বাঙালীদের উপর খুন, ধর্ষণ, অপহরনের মতো নানা নির্যাতন করে থাকে। তাছাড়া পার্বত্য উপজাতিরা তাদের আঞ্চলিক ভাষায় সকল বাংলাভাষীদের বলে  থাকে ‘মগদা বাঙাল’, ‘স্যাটেলার’। এই ‘মগদা বাঙাল’ শব্দটি মুসলমান, হিন্দু ও বড়ুয়া সকলের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। তাই কথিত পার্বত্য সংখ্যালঘু উপজাতি নেতাদের কাছে সংখ্যালঘু ‘মগদা বাঙাল’ হত্যা করা কোন প্রতিবাদের বিষয় হিসাবে গণ্য হয়নি।

তাদের কাছে প্রতিবাদের বিষয় হলো উপজাতীয় সন্ত্রাসীদের চাঁদা না দেয়া, তাদের কাছে অপরাধ হলো উপজাতীয় চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে কথা বলা, হত্যা, সন্ত্রাস, ক্রিশ্চিয়ানাইজেশন, বিচ্ছিন্নতাদের বিরুদ্ধে কথা বলা, উন্নয়ন ও সম্প্রীতির অনুসারীদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার করা, মেডিকেল কলেজ, প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা ঠেকাতে প্রাণপাত করা। তারাতো পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রকারান্তরে বাঙালী খেদা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে বহুবছর যাবত। তাই একটি বাঙালী কমা মানে যেভাবেই হোক তাদের দাবী পুরণ। সে ধর্মেরই হোক।

সুতরাং উপজাতীয় কথিত সংখ্যালঘু নেতারা যদি প্রকৃত সংখ্যালঘু নেতা হতেন এবং সংখ্যালঘুদের জন্য কাজ করতেন তবে তাদের উচিত ছিলো বাবুল দে হত্যার প্রতিবাদ করা, হত্যাকারীদের বিচার দাবি করা। কিন্তু তারা তা করেন নি। কারণ বাবুল দে একজন সংখ্যালঘু বাঙালি এবং তাকে  হত্যা করেছে উপজাতীয়
চাঁদাবাজ সন্ত্রাসীরা। তাই প্রতিবাদ করলে নিজেদের জালে নিজেরাই আটকে যাবে। বাবুদ দে যদি কোনো বাঙালী মুসলমানের দ্বারা হত্যাকাণ্ডের শিকার হতেন তাহলে এই তথাকথিত সংখ্যালঘু নেতাদের আন্দোলন চোখে পড়তো!

এখানে একটি বিষয় তুলে ধরা জরুরি যে, সারাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দু ও বড়ুয়া নির্যাতন এবং তাদের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে হামলার বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ঘটলেও পার্বত্য চট্টগ্রামে এমন ঘটনা বিরল। এখানে মুসলিম, হিন্দু, বড়ুয়া সবাই পরস্পর ভ্রাতৃত্ববোধ বজায় রেখে বসবাস করছে। পাহাড়ে মুসলিম ও সংখ্যালঘু বাঙালি এবং সাধারণ উপজাতি সবাই উপজাতীয় সন্ত্রাসী কর্তৃক নির্যাতিত। এই সন্ত্রাসীদের দ্বারা নির্যাাতিত সাধারণ নিরীহ উপজাতীয় সদস্যরাও।  আর উপজাতি নেতারা যারা সংখ্যালঘু নেতার মোড়কে কাজ করছেন তাদের উদ্দেশ্য প্রকৃত সংখ্যালঘুদের জন্য কাজ করা নয় বরং সংখ্যালঘুদের পার্বত্য ইস্যুতে ব্যবহার করে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করা।

তাই আজ সময় এসেছে, পার্বত্যবাসীর সামনে পাহাড়ের কথিত সংখ্যালঘু নেতার ছদ্মাবরণে উপজাতীয় সন্ত্রাসী ও সাম্প্রদায়িক নেতাদের মুখোশ উন্মোচনের, স্বরূপ উৎঘাটনের।

আল আমিন ইমরান: সভাপতি, সমঅধিকার ছাত্র আন্দোলন, রাঙামাটি জেলা শাখা।

Exit mobile version