বার্মায় ‘সেইফ জোন’ প্রতিষ্ঠায় জটিলতা দেখছে ইউএনএইচসিআর

পার্বত্যনিউজ ডেস্ক:

রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে বাংলাদেশের প্রস্তাবে একমত জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর, তবে বার্মার ভিতরে রোহিঙ্গাদের জন্য সেইফ জোন প্রতিষ্ঠার বিষয়ে সংশয়ী সংস্থাটি।

ইউএনএইচসিআর’র প্রধান ফিলিপ্পো গ্রান্ডি সোমবার ঢাকায় সাংবাদিকদের বলেন, এই সিদ্ধান্ত তো নিতে হবে মিয়ানমার সরকারকে। অন্যথায় নিরাপত্তা পরিষদের হস্তক্ষেপ লাগবে, যা একটি জটিল কাজ।

তিনি বলেন, “আমরা রাখাইন (আরাকান) প্রদেশে স্বাভাবিক নিরাপত্তা চাই। এটা ছাড়া মানুষ সেখানে ফিরবে না। তারা সব হারিয়েছে। যদি নিরাপত্তার বিষয়ে ওই ধরনের কোনো নিশ্চয়তা না থাকে, তারা ফিরে যাবে না।”

সংকটের সময় সীমান্ত খোলা রাখায় বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানানোর পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের জন্য সহায়তা বাড়াতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান গ্রান্ডি।

আরাকানে বর্মী সেনাবাহিনীর দমন-পীড়নের মুখে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রিত চার লাখ ৩০ হাজার রোহিঙ্গার জন্য দাতাদের কাছে বড় তহবিলের আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ।

শনিবার (২৩ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশে গিয়ে কক্সবাজারে শরণার্থী শিবির পরিদর্শনের পর এই সংবাদ সম্মেলন করেন ফিলিপ্পো গ্রান্ডি।

ইউএনএইচসিআর বলছে, গত ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে চার লাখ ৩৬ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ঢুকেছে। শরণার্থীদের এই ঢল এখন কমে এসেছে।

গ্রান্ডি জানান, নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনের ফাঁকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে আলোচনার পর বাংলাদেশে আসেন তিনি।

“এই শরণার্থীদের জন্য সীমান্ত খোলা রাখায় আমি শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি, বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। বর্তমান বিশ্বে এভাবে শরণার্থীদের গ্রহণ করা হয় না এবং এর প্রশংসা করা উচিত।”

জাতিসংঘে ভাষণে অবিলম্বে রোহিঙ্গাদের ওপর সহিংসতা বন্ধের পাশাপাশি এই সংকটের স্থায়ী সমাধানে কফি আনান কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়ন এবং দেশটির ভিতরে রোহিঙ্গাদের জন্য নিরাপদ এলাকা (সেইফ জোন) প্রতিষ্ঠাসহ কয়েকটি প্রস্তাব তুলে ধরেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

গ্রান্ডি জানান, শেখ হাসিনা তাকে বলেছেন, এই সংকটের সমাধান মিয়ানমারের হাতে। তিনিও শেখ হাসিনার সাথে একমত বলে জানান।

রোহিঙ্গাদের বার্মায় ফেরত যাওয়াই সংকটের সমাধান মন্তব্য করে তিনি বলেন, তবে এটা হতে হবে স্বেচ্ছায় এবং নিরাপত্তা ও মর্যাদা নিয়ে।

“এর জন্য রাখাইন (আরাকান) পরিস্থিতির পরিবর্তন হতে হবে, সহিংসতা বন্ধ হতে হবে এবং ত্রাণ সংস্থাগুলোকে সেখানে প্রবেশ করতে দিতে হবে।”

সেইফ জোন নিয়ে ইউএনএইচসিআর হাই কমিশনার বলেন, সেইফ জোনের বিষয়টি স্পষ্ট করতে হবে এবং কীভাবে এটা নিরাপদ রাখা যাবে সে বিষয়ে বলতে হবে।

“এ ধরনের বিষয় ইউএনএইচসিআর ঠিক করতে পারে না। এটা আন্তর্জাতিক মহলের আলোচনার বিষয়।”

তার মতে, দুইভাবে সেইফ জোন প্রতিষ্ঠা হতে পারে।

“হয় দেশটির সরকারকে সেইফ জোন গড়ে তোলার সিন্ধান্ত নিতে হবে এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে অথবা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের হস্তক্ষেপের মধ্য দিয়ে এটা করতে হবে।

গ্রান্ডি বলেন, রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের বিষয়টি একটি রাজনৈতিক ও সামরিক বিষয় এবং এটা করার দায়িত্ব মিয়ানমার সরকারের।

বাংলাদেশ অভিমুখে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের এই ঢল সম্ভবত বিশ্বে সবচেয়ে কম সময়ের মধ্যে বেশি মানুষের আগমণ বলে মনে করছেন ইউএনএইচসিআর হাই কমিশনার।

গ্রান্ডি বলেন, কক্সবাজার সফরে তিনি শরণার্থীদের কাছ থেকে শারীরিক ও যৌন সহিংসতার ভয়াবহ সব ঘটনা এবং চরম বর্বরতার কথা শুনেছেন।

রোহিঙ্গাদের এভাবে পালিয়ে আসার কারণ হিসেবে তাদের ‘রাষ্ট্রহীন’ হওয়াকে চিহ্নিত করেছেন জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থার প্রধান।

তারা শরণার্থী মর্যাদা পাচ্ছে কি না প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, এটা আশ্রয়দাতা দেশ ঠিক করবে।

“আমাদের দৃষ্টিভঙ্গিতে, তারা বৈষম্য, নিপীড়ন, সহিংসতা, সংঘাত থেকে পালিয়ে এসেছে এবং কারও শরণার্থী মর্যাদা পাওয়ার কারণ হিসেবে এসব কারণকেই বিবেচনায় নেওয়া হয়।”

সূত্র: বিডিনিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকম।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন