parbattanews

বিজিবির নির্মাণাধীন সেক্টরে জেএসএস ও পিসিপি’র হামলা: আহত ৪ বিজিবি সদস্য

বিজিবি বান্দরবান

নিজস্ব প্রতিবেদক:
বান্দরবানের সদর উপজেলার ক্রাইক্ষং পাড়া এলাকায় বিজিবির নির্মাণাধীন নতুন সেক্টরে হামলা চালিয়েছে জেএস এস, পিসিপি ও স্থানীয়রা। এ ঘটনায় বিজিবির সুবেদারসহ চারজন আহত হয়েছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বরিবার রাতে ঢাকা থেকে মাইক্রোযোগে একটি মিডিয়া টিম বান্দরবানে এসে সাঙ্গু হোটেলে ওঠে।  ১০ জনের এই টিমের নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরের ট্রাস্টি জিয়া উদ্দিন তারেক আলী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রাজীব মীর। এছাড়াও এই টিমে বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকা ও টিভি চ্যানেলের সাংবাদিক রয়েছেন। সোমবার ৯ টার দিকে এই টিমটি রোয়াংছড়িতে নব প্রতিষ্ঠিত বিজিবি’র বান্দরবান সেক্টর হেড কোয়ার্টারে যায়। সেসময় আগে থেকে সেখানে রোয়াংছড়ির উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা জেএসএস সভাপতি কেবা মং ও সদর উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ও জেএসএস সমর্থিত হিল উইমেন্স ফেডারেশন সভাপতি ওয়াইচিং প্রু মারমা দুই শতাধিক উপজাতি নারী-পুরুষ নিয়ে সমবেত ছিলেন। মিডিয়া টিম ঘটনাস্থলে পৌঁছে বিজিবি’র অনুমতি না নিয়ে সেক্টর হেড কোয়ার্টারের ছবি তুলতে শুরু করলে বিজিবি সদস্যরা তাদের বাধা দেয়। এসময় সমবেত উপজাতি নারী পুরুষ বিজিবি সেক্টর হেডকোয়ার্টারের ভেতর দিয়ে শ্মশানঘাট পরিদর্শনে যেতে চাইলে বিজিবি তাদের বাধা দিলে জেএসএস, পিসিপি ও পাড়াবাসীরা তাদের উপর লাঠি নিয়ে হামলা করে। হামলায় সুবেদার আবুল কালাম, নায়েক সুবেদার কাওছার, হাবিব, নায়েক সরওয়ার আহত হন। এসময় উপজাতি মহিলারা টিভি ক্যামেরার সামনে দাড়িয়ে বিজিবিকে তাদের উপর আক্রমণ করার আহ্বান জানায়। তবে বিজিবি সদস্যরা শুধু সাংবাদিকদের যেতে দেয়। পরে শহর থেকে অতিরিক্ত পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

সূত্র জানিয়েছে, এরপর মিডিয়া টিম সেক্টর হেডকোয়ার্টার্স থেকে অনতিদুরে উপজাতীয় হানসামা পাড়ায় এসে জনসমাবেশ করে। সমাবেশে বক্তারা সেক্টর হেডকোয়ার্টার্সের জায়গা উপজাতিদের বলে দাবী করে সেখানে বিজিবি ক্যাম্প করতে দেয়া হবে না বলে উষ্কানীমূলক বক্তব্য দেয়। অধ্যাপক রাজিব মীর বলেন, সরকার কোন পদ্বতিতে বিজিবির সেক্টর নির্মাণের জন্য ভূমি বরাদ্দ দিয়েছে। বরাদ্দ প্রক্রিয়া সঠিক ছিলা কিনা, তাতে পাহাড়ী জনগোষ্ঠি ভূমি থেকে উচ্ছেদ হয়েছে কিনা, ভূমির ক্ষতিগ্রস্ত পরিবাদের কি পরিমাণ ক্ষতিপূরণ দিয়েছে তা খতিয়ে দেখতে আমরা এ এলাকা পরিদর্শনে এসেছি।

এদিকে এই ঘটনা জেলা সদরে ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয় বাঙ্গালীদের মাঝে উত্তেজনা দেখা দেয়। পরে উত্তেজিত বাঙ্গালীরা কালাঘাটা বড়ুয়ার টেক এলাকায় রাস্তায় গাছের গুড়ি ফেলে ব্যারিকেড সৃষ্টি করে হামলাকারীদের উপর পাল্টা হামলা করার চেষ্টা চালায়। এসময় প্রায় ৪ঘন্টা যান চলাচল বন্ধ থাকে। পরে পুলিশ এসে ব্যারিকেড তুলে দিলে গাড়ী চলাচল শুরু হয়।

এরপর মিডিয়া টিম জেলা সদরে ফিরে এসে জেলা প্রশাসকের সাথে বৈঠক করে এবং সন্ধায় বিভিন্ন পর্যটন স্পট ঘুরে দেখে।

ক্রাইক্ষং পাড়া কারবারী (পাড়া প্রধান) মংনুসা বলেন, ২৫ বছর আগে এ পাড়া বিজিবির নির্মাণাধীন ভূমিতে ছিল। এ খাস ভূমিটি পাড়া অধিবাসীদের জন্য হেডম্যান রিপোর্ট নিয়ে জেলা প্রশাসকের নিকট বন্দোবস্তির জন্য আবেদন করা হয়েছে।

বিজিবির নির্মাণাধীন ভূমির মালিক কর্ণেল খিং (অবঃ) এর ভাই বাতিং জানান, আমার ভাই ১৯৯৫ সনে দুই ব্যাক্তির কাছ থেকে প্রায় ৮ একর ভূমি ক্রয় করে। বাকী আরো ২৭ একর ভূমি বন্দোবস্তির জন্য জেলা প্রশাসকের নিকট আবেদন করা হয়েছে। ১৯ বছর যাবৎ এ ভূমিতে আমরা বনজ, ফলজ বাগান করে এসেছি।

এ বিষয়ে বান্দরবান বিজিবি’র সেক্টর কমাণ্ডার কর্ণেল ওয়ালী পার্বত্যনিউজকে টেলিফোনে বলেন, সমগ্র ঘটনাটি অনভিপ্রেত ও উষ্কানীমূলক। জেলাপ্রশাসক সমস্ত নিয়মকানুন মেনে জায়গাটি অধিগ্রহণ করে বিজিবিকে দিয়েছে। বিজিবি টাকা দিয়ে সরকারী ও ব্যক্তিমালিকানাধীন জায়গা কিনে নিয়েছে। এটি কারো বসবাসের জায়গা নয়, এর আসেপাশে কারো বসতি নেই। তবু একটি মহল বিশেষ উদ্দেশ্যে খাগড়াছড়ির বাবুছড়ার মতো আরেকটি পরিস্থিতি সৃষ্টি করার মানসে নানা ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে।

বিজিবি, বান্দরবান সেক্টর মেজর হামিদ (জিটু) জানান, ঘটনাটি কাম্য নয়, খাস ভূমি জেলা প্রশাসন অধিগ্রহণ করে বিজিবিকে দেয় হয়েছে, ব্যক্তি মালিকানাধীন জায়গাটি সম্মতিক্রমে নেওয়া হয়েছে।

Exit mobile version