parbattanews

বিজেপি নেতা দিলীপের ‘গরুর দুধে সোনা আছে’ দাবিকে বিজ্ঞানীদের সমর্থন 

সম্প্রতি বর্ধমান টাউন হলে গাভী কল্যাণ সমিতির একটি অনুষ্ঠানে বিজেপির রাজ্য সভাপতি তথা সাংসদ দিলীপ ঘোষের ‘গরুর দুধে সোনা আছে’ দাবি করার পরেই রাজ্য জুড়ে শুরু হয়েছে বির্তক। বিষয়টি অবাস্তব বলে সোশ্যাল মিডিয়ায় যতই কটাক্ষ করা হোক না কেন বৈজ্ঞানিক গবেষণা কিন্তু দিলীপবাবুর বক্তব্যকে সমর্থন করছে।

পোল্যান্ডের ডিপার্টমেন্ট অফ্ অ্যানিমাল হাইজিন অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট, ক্রাকো, ইনস্টিটিউট অফ ইনঅরগানিক টেকনোলজি অ্যান্ড মিনারেল ফার্টিলাইজার এবং ইউনিভার্সিটি অফ টেকনোলজির গবেষণার পাশাপাশি জুনাগড় কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণায় গোরুর দুধে সোনার পরিমাপ যোগ্য উপস্থিতিকেই সমর্থন করছে!

পোল্যান্ডের গবেষক জে ডোবরানজেনকি, আর কোলেজ, এইচ গোয়েরকা, কে চোজনাকা এবং এ বারটোওয়াক ওই গবেষণাপত্রটিতে গোরুর দুধে মোট ৩৮ রকম মাইক্রোএলিমেন্ট রয়েছে। তার মধ্যে সোনাও রয়েছে। মধ্য ইউরোপের সাইলেসিয়া অঞ্চলের গোরুর দুধেই সোনা পাওয়া যায় বলে দাবি করেছেন।

কলকাতার মেডিক্যাল কলেজের ইনস্টিটিউট অব হেমাটোলজি অ্যান্ড ট্রান্সফিউশন বিভাগের রির্সাচ ফেলো ড. রাজলক্ষ্মী বসুর মতে গরুর দুধে স্বল্পমাত্রায় সোনার উপস্থিতি রয়েছে। তিনি বলেন,‘ ২০০৪- ০৫ সাল নাগাদ পোল্যান্ডের একটি গবেষণা পত্র আন্তর্জাতিক পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। সেখানের গবেষণা অনুসারে, গোরুর দুধে স্বল্প মাত্রায় (অবশ্যই তা পরিমাপ যোগ্য) স্বর্ণও অন্যান্য ধাতব যৌগের লবণের উপস্থিতির কথা স্বীকার করা হয়েছে। স্বর্ণ যে পরিমাণে উপস্থিত থাকে তা, বিশেষ বৈজ্ঞানিক যন্ত্র দ্বারাই পরিমাপযোগ্য । শুধু স্বর্ণ কেন, সব ধাতুর ক্ষেত্রেই তা প্রযোজ্য। প্রসঙ্গক্রমে বলা উচিত, এই স্বর্ণ যৌগিক লবণ রূপে অবস্থান করে। যা দুধের মধ্যে সমসত্ত্ব মিশ্রণ।’

দুধ শুধু নয়, গোমুত্রেও সোনার অস্তিত্ব পাওয়া গিয়েছে বলে জানিয়েছেন ড. রাজলক্ষ্মী বসু। তিনি বলেন,‘ জুনাগড় কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণা প্রমাণ করেছে যে- গির অঞ্চলের দেশি গোরুর মূত্রে স্বল্প মাত্রায় স্বর্ণ উপস্থিত। মূত্রে সোনার উপস্থিতি থাকা মানাই তা গোরুর রক্ত ও দুধে থাকবেই। বিজ্ঞান তাই বলে। এ অর্থে দিলীপ কিন্তু একদমই ভুল বলেননি। বিশ্বের অনেক গবেষণাগার এই বিষয়ে কাজ করছে। ব্যবসায়িক পদ্ধতিতেও যখন গো পালন করা হয়, সেক্ষেত্রও কখনও কখনও স্বর্ণ জৈবিক চিলেট গো খাদ্যে প্রয়োগ করা হয়। সেক্ষেত্রে গোরুর দুধের মান কিছুটা দেশি গরুর মতোই হয়।’

শাস্ত্রের ব্যাখ্যা উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, বৈদিক চর্চা অনুযায়ী গরুর দেহের পিঠের উপর কুঁজে সূর্যকেতুনাড়ি অবস্থান করে। প্রকৃতি থেকে প্রাপ্ত সবরকম ধাতু খাদ্য থেকে সংশ্লেষ করার বিশেষ ক্ষমতা এর আছে। আধুনিক উন্নত বিজ্ঞান চর্চার দ্বারা এও প্রমাণিত যে, সামান্য মাত্রায় স্বর্ণ এই দুধে বর্তমান । বৈজ্ঞানিক ভাষায় বললে- সে স্বর্ণ খনিজ লবণের যৌগিক রূপে অবস্থান করে। নানাবিধ যৌগিক ধাতুর সঙ্গে স্বর্ণ ও উপস্থিত । এই স্বর্ণ কোনও অর্থেই দুধ থেকে পৃথক করা বা তার ব্যবসায়িক মুনাফা র কথা বলা হয়নি। তাই অযথা উত্তেজনা বা বিকৃত ব্যাখ্যাও কাম্য না।’

অধ্যাপক ও গবেষক এস চক্রবর্তীর মতে, প্রত্যেক প্রাণীর দেহে সোনার উপস্থিতি আছে। তিনি বলে,‘এটা নিয়ে অহেতুক বির্তক করে লাভ নেই। গোরুর দেহে সোনা আছে মাইক্রোকম্পান্ড রূপে। তবে তার মানে এই নয় যে এই দুধ বা মূত্র সংগহ করে বাণিজ্যিক সোনা উৎপাদন করা যাবে।’

সূত্র: যুগসঙ্খ

Exit mobile version