বিদেশে পাচার করা খালেদা-তারেকের টাকা ফেরত এনে মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণে ব্যয় করা হবে: আ ক ম মোজাম্মেল

চকরিয়া প্রতিনিধি:

বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ্য করে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এমপি বলেছেন, বিদেশে পাচার করা খালেদা-তারেকের আরও টাকা ফেরত এনে মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণে ব্যয় করা হবে।

তিনি বুধবার (২৪ জানুয়ারি) বিকেলে কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার লক্ষ্যারচর ইউনিয়নের মুক্তিযোদ্ধা মরহুম আনোয়ার হোসেন বাঙালীর নামে সদ্য প্রতিষ্ঠিত স্কুল এন্ড কলেজ’র উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, জিয়াউর রহমান মারা যাওয়ার পর বেগম খালেদা জিয়া বলেছিলেন, আমার কোন টাকা-পয়সা নাই। কিভাবে চলবো, আমার দুই ছেলেকে কিভাবে লেখাপড়া করাবো। তখন রাষ্ট্র থেকে আমরা পয়সা দিলাম, সেই পয়সা নিয়ে কি হয়েছে। একজন মারা গেছে আজকে তিনবছর। মরার আগের তার জেল হয়েছিল বিদেশে। টাকা চুরির দায়ে, রাষ্ট্রের তহবিল তছরুপের দায়ে এবং বাংলাদেশের অর্থ সিঙ্গাপুরে পাচার করার দায়ে।

মন্ত্রী আরও বলেন, আপনারা নিশ্চয়ই জানেন বর্তমান সরকার তথা আজকের সফল রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা সেই টাকা ফিরিয়ে এনে মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণে ব্যয় করছেন, মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা বাড়িয়েছেন। একমাস-দেড়মাস আগে সৌদিআরবে যখন সরকার পরিবর্তন হলো তখন বাদশার ১২জন ভাইকে গ্রেফতার করা হলো। গ্রেফতারের পর তাদের জিজ্ঞেস করা হলো তোমরা এত টাকা কোথা থেকে পেলে। তখন তারা জানালো এই টাকা আমাদের না, বিদেশী রাষ্ট্র প্রধানদের। তন্মধ্যে বেগম খালেদা জিয়ার, তারেক জিয়ার এবং পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর কথাও বলেছেন। আজকে আমাদের দেশের টাকা সৌদিআরবে পাচার করেছে তারা। পাঁচ হাজার কোটি ডলার তারা সৌদিআরবসহ মধ্যপ্রাচ্যে পাচার করে সেখানে মার্কেট, বহুতল ভবনসহ অট্টালিকা গড়েছেন। ইনশাল্লাহ আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেই টাকাও অচিরেই ফেরত আনতে সক্ষম হবেন।

মুক্তিযোদ্ধা মরহুম আনোয়ার হোসেন বাঙালীর ছেলে রেজাউল করিম সেলিমের সভাপতিত্বে আয়োজিত অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন চকরিয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ্ব জাফর আলম।

এতে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন কক্সবাজার জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোস্তাক আহমদ চৌধুরী, কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা, আশেক উল্লাহ রফিক এমপি, জেলা পরিষদ প্যানেল চেয়ারম্যান জাহেদুল ইসলাম লিটু, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী, পেকুয়ার সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম। এছাড়াও জেলা, উপজেলা, পৌরসভা, ইউনিয়নসহ সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

সাবেক ছাত্রনেতা হায়দার আলীর উপস্থাপনায় মন্ত্রী মোজাম্মেল আরও বলেন, বিদেশে খালেদা-তারেকের টাকা পাচারের বিষয়টি বিদেশী গণমাধ্যমে ফলাও হয়েছে। সেই পত্রিকার উদ্বৃতি দিয়ে সম্প্রতি আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পাচার করা টাকার কথা বলায় খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকে উকিল নোটিশ দেওয়া হয়েছে। আমরা বলতে চাই, শেখ হাসিনাকে উকিল নোটিশ দিয়ে লাভ হবে না। আমরা আদালতেই মোকাবেলা করব এবং ইনশাল্লাহ পাচারকৃত এসব টাকা ফেরত এনে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য আরো নতুন নতুন প্রকল্প হাতে নেওয়া হবে।

মন্ত্রী এছাড়া আরও বলেন, বর্তমান সরকার মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার করা হয়েছে। যারা এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিলেন তাদের অনেককেই ফাঁসিতে ঝুলিয়ে রায় কার্যকর করা হয়েছে। একইভাবে যুদ্ধাপরাধীদেরও একে একে বিচার করা হচ্ছে, ফাঁসিও দেওয়া হয়েছে বেশ কয়েকজনকে। আর তা সম্ভব হচ্ছে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকায়। ভবিষ্যতেও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সরকার যাতে ক্ষমতায় আসতে পারে সেজন্য আপনাদের সকলকে নৌকা মার্কার ভোট দিতে হবে। সারা বাংলাদেশে যেখানে বিদ্যুৎ নেই, সেখানে শতভাগ বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হবে নির্বাচনের আগে। একটি বাড়িও বিদ্যুৎ পাওয়া থেকে বঞ্চিত থাকবে না।

মন্ত্রী ঘোষণা দিয়ে বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলেই মুক্তিযোদ্ধাদের সঠিক মূল্যায়ন হয়। আগে মুক্তিযোদ্ধারা ভাতা পেতেন ৩ হাজার টাকা। এখন সেই ভাতা বাড়িয়ে ১০ হাজার করা হয়েছে। বর্তমানে বোনাস পাচ্ছেন বছরে দুটি। আগামী বাজেটে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বছরে পাঁচটি বোনাস দেওয়া হবে। প্রত্যেক উপজেলায় এবং জেলায় যে সকল মুক্তিযোদ্ধাদের থাকার জায়গা নেই তাদেরকে ১ হাজার স্কয়ার ফিটের পাঁচতলা ভবন নির্মাণ করে দেওয়া হবে। সেটা আমরা দুইমাসের মধ্যে কাজ শুরু করব। যত জায়গায় পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধ হয়েছে, আর যেখানে গণহত্যা হয়েছে সে সমস্ত জায়গায় আমরা স্মৃতিস্তম্ভ তৈরি করব। সারাদেশে প্রত্যেক মুক্তিযোদ্ধার কবর একই ডিজাইনে তৈরি করা হবে। যাতে ১০০ বছর পরেও সেই কবর দেখে যে কেউ বুঝতে পারে সেটা মুক্তিযোদ্ধার কবর। পাঠ্যবইয়ে শুধু মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নয়, পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী তাদের দোসর আলবদর, রাজাকার তারা কিভাবে মা-বোনদের অত্যাচার করেছে, নির্যাতন করেছে সেই ইতিহাস পাঠ্যপুস্তকে লিপিবদ্ধ থাকবে। বর্তমানে যেসব মুক্তিযোদ্ধা জীবিত রয়েছে তাদের বক্তব্য রেকর্ড করে সংরক্ষণ করা হবে, যাতে রোজ কেয়ামত পর্যন্ত সেই তথ্য থেকে যায়। এখন থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা ব্যাংক একাউন্টে এবং বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে পৌঁছে দেওয়া হয় সেই বন্দোবস্তও করা হবে। প্রথমে কক্সবাজার জেলা এবং উপজেলা থেকেই শুরু করা হবে এই উদ্যোগ। বক্তব্যের শুরুতে মন্ত্রী মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেন বাঙালীর ভূঁয়সী প্রশংসা করেন। বলেন, ‘আজকে তার নামে যে স্কুল অ্যান্ড কলেজ প্রতিষ্ঠা হচ্ছে তা দেখে আমি বেশ খুশি।’

পরে মন্ত্রী মুক্তিযোদ্ধা হাজি বশিরুল আলমের  চকরিয়া পৌরশহর চিরিঙ্গায় প্রতিষ্ঠিত চকরিয়া প্রি-ক্যাডেট স্কুল অ্যান্ড কলেজ পরিদর্শন করেন।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন