বিলাইছড়িতে পার্বত্য মন্ত্রণালয়ের প্রকল্পে অনিয়ম ও আত্মসাতের অভিযোগ!

images9

আলমগীর মানিক, রাঙ্গামাটি:
রাঙ্গামাটির বিলাইছড়ি উপজেলায় পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের বিশেষ প্রকল্প কর্মসূচীর প্রকল্পে কাজ না করে ব্যাপক অনিয়ম ও আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে। জানা গেছে, ২০১২-২০১৩ অর্থবছরে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষযক প্রতিমন্ত্রী দীপংকর তালুকদারের অনুমোদনের প্রেক্ষিতে বিলাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবরে ৭০ মেঃ টন চাল ও ৩০ মেঃ টন গমসহ সর্বমোট ১০০ মেঃ টন খাদ্যশস্য ১১টি শর্ত সাপেক্ষে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষযক মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়-১ শাখা স্মারক নং- ২৯.০০.০০০০.২২৩.০২০.০৫.১২-১১৯ তারিখ ০৯/০৬/২০১৩ খ্রিঃ এর প্রেক্ষিতে সহকারী সচিব মোঃ নুরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত পত্রমূলে বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল।
পত্রটির শর্তাবলীতে ৩০ জুন’২০১৩ খ্রিস্টাব্দে বরাদ্দকৃত খাদ্যশস্য দ্বারা উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন সম্পন্ন করা এবং বিলাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিলাইছড়ি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের সঙ্গে পরামর্শক্রমে প্রকল্পসমূহ বাস্তবায়নের ব্যবস্থা নেযার উল্লেখ ছিল। কিন্তু প্রকল্পের বরাদ্দকৃত খাদ্যশস্য নির্দিষ্ট সময়ে খাদ্যগুদাম থেকে উত্তোলন করে বিক্রি করার পর এ যাবত প্রকল্পের কাজ না হওয়ায় এ নিয়ে এলাকায় স্থানীয় বিভিন্ন মহলে চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে।

ফারুয়া ইউনিয়নের ৫টি প্রকল্পে ৫০ মেঃ টন খাদ্যশস্যের কাজ না হওয়ায় স্থানীয় নেতৃবৃন্দ ক্ষোভ প্রকাশ করেন। ফারুয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি বিমল তঞ্চঙ্গ্যা জানান, জন প্রতিনিধি ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এসব প্রকল্প সম্পর্কে ওয়াকিবহাল নন। প্রকল্পগুলো ভুয়া বলে তিনি উল্লেখ করেন। বিমল তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, এগুজ্যাছড়ি কমিউনিটি সেন্টারের ভিটার জঙ্গল পরিস্কারের জন্য ১০ মেঃ টন গম বরাদ্দের প্রয়োজন ছিল না। প্রকল্পটিতে ৬শত টাকা খরচ করলে জঙ্গল পরিষ্কার করা সম্ভব বলে তিনি জানিয়েছেন।

ফারুয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি আরও বলেন, এগুজ্যাছড়ি জাংবিল এলাকায় জনসাধারণের জলীয় উৎসের বাঁধ সংস্কারের ১০ মেঃ টন চালের প্রকল্প নেয়া হয়। কিন্তু উক্ত এলাকায় কোন বাঁধ না থাকায় প্রকল্পটি ভুয়া। রাইমং ছড়া এলাকার অধিবাসী জ্ঞানন্দ তঞ্চঙ্গ্যা জানান, বড়হার থেখে রাইমং ছড়া পর্যন্ত রাস্তা সংস্কার ১০ মেঃ টন চালের প্রকল্পে কোন কাজ হয়নি। ছাবাতলী বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক আনন্দপ্রিয় তঞ্চঙ্গ্যা জানান, ছাবাতলী হতে মন্দিরাছড়া পর্যন্ত রাস্তা সংস্কার ১০ মেঃ টন গমের প্রকল্পের কাজ হয়নি।

তিনি আরও জানান, উক্ত রাস্তা নল খাগড়ায় পরিপূর্ণ থাকায় অনেক কষ্টে এলাকাবাসীকে চলাচল করতে হচ্ছে। পূর্ব মন্দিরাছড়া বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠ ও পশ্চিম মন্দিরাছড়া বৌদ্ধ বিহারের মাঠ সংস্কার বাবদ ১০ মেঃ টন চালের প্রকল্পের প্রকল্প সভাপতি আদর কুমার তঞ্চঙ্গ্যা জানান, উপজেলা চেয়ারম্যান তার কাছ থেকে আইডি কার্ড ও পাসপোর্ট সাইজের ছবি নিয়ে গিয়ে ১০হাজার টাকা দিয়েছিল। উক্ত টাকা দিয়ে কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব নয় বলে তিনি জানিয়েছেন। প্রকল্প চেয়ারম্যান আদর কুমার তঞ্চঙ্গ্যা আরও জানান, প্রকল্প সংক্রান্ত অফিসিয়াল কাগজে তিনি কোন স্বাক্ষর করেন নি।
এদিকে কেংড়াছড়ি ইউনিয়নের বাঙ্গালকাটা মোন থেকে বেগেনাছড়ি মোন পর্যন্ত রাস্তা সংস্কার ৭ মেঃ টন চালের প্রকল্পের প্রকল্প চেয়ারম্যান প্রেম কুমার চাকমা জানান, তিনি টাকা যা পেয়েছেন তা দ্বারা কাজ সম্পন্ন করার মত নয়। বাঙ্গালকাটা মোন হতে পরিহলা মোন পর্যন্ত রাস্তার জঙ্গল পরিষ্কার ৬ মেঃ টন চালের প্রকল্পের কাজ হয় নি বলে ইউপি মেম্বার হলধর চাকমা জানিয়েছেন।
তিনি আরও জানান, উক্ত রাস্তাটি অতি ঢালু হওয়ায় এখানে কাজ করার তেমন সুযোগ নেই। অপরদিকে বিলাইছড়ি ইউনিয়নের তিন কুনিয়া ত্রিপুরা পাড়া হতে ঝান্ডি মোন পাংখোয় পাড়া পর্যন্ত রাস্তা সংস্কারের ১০ মেঃ টন চালের প্রকল্প, শালবাগান হতে লতাপাহাড় পর্যন্ত রাস্তা সংস্কারের ১০ মেঃ টন চালের প্রকল্প ও দীঘলছড়ি ঢেবার মাথা থেকে দীঘলছড়ি মোন পর্যন্ত রাস্তার জঙ্গল পরিষ্কার বাবদ ১০ মেঃ টন চালের প্রকল্পে বরাদ্দ অনুযায়ী কাজ হয়নি বলে বিলাইছড়ি উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান অমর কুমার তঞ্চঙ্গ্যা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, এসব প্রকল্পসমূহের অনিয়ম ও আত্মসাতের নিউজ শুনে নির্দিষ্ট প্রকল্প এলাকায় গিয়ে প্রকল্প চেয়ারম্যানের সাথে কথা বলেছেন ।

তিনি বলেন, প্রকল্প চেয়ারম্যানগণ প্রকল্পের কাজ ও বরাদ্দ সম্পর্কে অবগত নন। এমনকি কোন অফিসিয়াল কাগজে প্রকল্প কমিটির লোকজন স্বাক্ষর করেন নি বলে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান জানিয়েছেন। তিনি আরও জানান, প্রকল্পগুলো ভুয়া এবং অনেক প্রকল্প চেয়ারম্যান প্রকল্পভুক্ত এলাকার অধিবাসী নন। এসব প্রকল্পের অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে জনস্বার্থে কার্যকরী ব্যবস্থা নেয়ার জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট আবেদন নতুবা মামলা করবেন বলেও উপজেলা ভাইস চেয়রম্যান অমর কুমার তঞ্চঙ্গ্যা জানিয়েছেন।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন