বিলাইছড়ি ও জুরাছড়িতে ৭ দিন ধরে নৌ-যান বন্ধ, নৌ-যান চালু না হলে রাঙ্গামাটির সব পরিবহন বন্ধের ঘোষণা

রাঙ্গামাটি প্রতিনিধি:

বিলাইছড়িতে আওয়ামী লীগের নেতা অরবিন্দু চাকমা খুন ও জুরাছড়িতে দুই নেতা হত্যা চেষ্টা ঘটনার পর আওয়ামী লীগ ও জনসংহতি সর্ম্পকে অবনতি হয়েছে ফলে অশান্ত হয়ে উঠছে রাঙ্গামাটি। এক সপ্তাহের ব্যবধানে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠন থেকে পদত্যাগ করেছেন ৩শতাধিক নেতাকর্মী। সন্ত্রাসীদের হুমকির কারণে ইতিমধ্যে জুরাছড়ি উপজেলার কৃষক লীগের কমিটি বিলুপ্তি করা হয়েছে।

প্রায় ৭দিন যাবত নৌযান বন্ধ রয়েছে দুই উপজেলায়। এদিকে হত্যাকাণ্ডের আসামি হিসেবে প্রায় ১৯জনকে গ্রেফতার করা হলে গত ১১ ডিসেম্বর থেকে রাঙ্গামাটি দুই উপজেলায় নৌযান বন্ধ করে দেয় আঞ্চলিক দলের পেশি শক্তির নেতারা।

সরেজমিনে লঞ্চঘাটে গিয়ে দেখযায়, রাঙ্গামাটির জুরাছড়ি ও বিলাইছড়ি উপজেলায় গত ৬ দিন যাবত নৌযান বন্ধ থাকলেও অ-ঘোষিতভাবে চলাচল করছে পাহাড়ি সম্প্রদায়ের মানুষরা। তবে বাঙালিরা চলাফেরা করতে পারছে না অজ্ঞাত ব্যক্তির হুমকির কারণে।

এবিষয়ে জুরাছড়ি থেকে আগত কয়েকজন পাহাড়ি যাত্রীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, এখানে প্রায় ১ সপ্তাহ ধরে নৌযান বন্ধ থাকলেও আমরা ইঞ্জিন বোটে জুরাছড়িতে যাতায়াত করতে পারছি। আমাদের কোন আতঙ্ক বা ভয় নেই বলে তারা জানান।

রাঙ্গামাটির নৌ-পরিবহনের সারেং মো. কামাল পাশা জানান, আমাদের লঞ্চ মালিকদের মেরে ফেলার হুমকি দেওয়ার কারণে আজ প্রায় ৭ দিন ধরে  কোন লঞ্চ জুরাছড়িতে আসা-যাওয়া করছে না। কিন্তু পাহাড়ি সম্প্রদায়ের মানুষরা ইঞ্জিন চালিত বোট দিয়ে চলাফেরা করছে।

রাঙ্গামাটি নৌ যান মালিক সমিতির সভাপতি মঈন উদ্দিন সেলিম বলেন, আগামী তিন দিনের মধ্যে আমরা লঞ্চ চালাবো যদি কোন বাধা আসে তাহলে রাঙ্গামাটির সব পরিবহন বন্ধ করে দেওয়া হবে। কিন্তু সমতাঘাট এবং রির্জাভবাজার নাপ্পিঘাটা থেকে পাহাড়িরা চলাচল করতে পারলেও বাঙালিরা চলাচল করতে পারছেনা এটা সাম্প্রদায়িক উস্কানিমুলক কাজ। তিনি আরো বলেন, প্রশাসন যদি কোন ব্যবস্থা না নেয় তাহলে রাঙ্গামাটিতে অবরোধ পালন করা হবে।

এবিষয়ে বিলাইছড়ি উপজেলার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোসাদ্দিকুর মাওলা জানান, নৌযান বন্ধের কারণে বেশ কয়েকজন বোট চালকদের সাথে কথা বলে জানতে পারলাম, এরা নাকি যাত্রীর অভাবে বোট চালাচ্ছে না।

সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ড নিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুছা মাতব্বর বলেছেন, যত চেষ্টাই করা হোক না কেন মানুষের মন এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে আওয়ামী লীগকে উৎখাত করা যাবে না। আঞ্চলিকদলগুলো অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে মানুষের রাজনৈতিক মতাদর্শকে জিম্মি করতেও পারবে না। তিনি বলেছেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে আমরা নিত্য অভিযোগ করে আসছি কিন্তু সরকারের উচিত এখানে মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।

তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেছেন, আমাদের নেতাকর্মীদের হত্যা এবং হত্যা চেষ্টা মোটেও কাম্য নয় এটি তাদের প্রতিহিংসা রাজনীতির চর্চা। সন্ত্রাসীদের ভয়ে এবং হুমকীতে ইতিমধ্যে দল থেকে যারা পদত্যাগ করেছেন বা করছেন সে গুলো গ্রহণযোগ্য হবে না। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিকরা অপনীতি এবং বুলেটের কাছে মাথা নত করবে না। সাম্প্রতিক সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সন্ত্রাসীদের ধরতে অভিযান চালাচ্ছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

জনসংহতি সমিতির কেন্দ্রীয় সহ তথ্য ও প্রচার সম্পাদক সজীব চাকমা বলেছেন, আমরাও কোন অশান্তি চাই না। সাম্প্রতিক ঘটনা নিয়ে সরকার দল যে অভিযোগ করছে তা ভিত্তিহীন। আমরাও চাই এখানে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডগুলো বন্ধ হোক। তবে ধরপাকড়ের নামে সাধারণ মানুষদের যাতে হয়রানি করা না হয় সেদিকে প্রশাসনের নজর থাকা দরকার। তিনি বলেছেন, পার্বত্য চুক্তি পুরো বাস্তবায়ন না হওয়ায় এখানে অস্থিরতার সৃষ্টি হচ্ছে।

রাঙ্গামাটির পুলিশ সুপার সাঈদ তারিকুল হাসান জানান, আওয়ামী লীগ নেতা অরবিন্দু চাকমা হত্যা এবং রাসেল মার্মা ও মহিলা আওয়ামী লীগের নেত্রী ঝর্ণার হত্যা চেষ্টার আসামি এ পর্যন্ত ১৯জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে বাদ বাকীগুলো গ্রেফতারে জন্য অভিযান পরিচালনা করা হবে বলেও তিনি জানান।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন