বিশেষ সিন্ডিকেটের কবলে রাঙামাটির বিদ্যুৎ বিভাগ! ৫ কোটি টাকার টেন্ডার ভাগবাটোয়ারা

tender-tenderbaji
আলমগীর মানিক, রাঙামাটি:
বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে প্রতিনিয়ত একটি বিশেষ সিন্ডিকেটের কয়েকজন সুবিধাবাদি নেতা বিনা টেন্ডারে প্রতিনিয়ত হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকার কাজ। আর এই ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হচ্ছে দলের একটি বিশেষ অংশকে। যাদের কর্মকান্ড নিয়ে প্রতিনিয়ত সমালোচনার ঝড় বইছে পুরো রাঙামাটি জেলায়। এমনই একটি ঘটনা বর্তমানে সারা জেলায় টক অব দ্যা টাউনে পরিণত হয়েছে।  বৃহস্পতিবার রাঙ্গামাটি পার্বত্য চট্রগ্রাম বিদ্যুতায়ন প্রকল্পের প্রায় পাঁচ কোটি টাকার কাজ একটি বিশেষ সিন্ডিকেট চক্র কর্তৃক ভাগিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। টেন্ডারবাজির এই প্রক্রিয়ার সাথে সরকারদল, বিরোর্ধীদল ও আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল সমর্থিত একটি বিশেষ সিন্ডিকেট চক্রের ঠিকাদাররা জড়িত ছিল। আর তাদের এই অনৈতিক কর্মটি যাতে করে মিডিয়ায় না আসে সেলক্ষ্যে তথাকথিত কয়েকজন গণমাধ্যম কর্মীর পকেটে পুরে দেওয়া হয়েছে প্রায় লাখ টাকা।

তাদের এই সমঝোতার কারণে সরকার হারিয়েছে লাখ লাখ টাকার রাজস্ব। স্থানীয় বেশ ক’জন গণমাধ্যম কর্মী, কয়েকটি মিডিয়া ও সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, পার্বত্য চট্রগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের অর্থায়নে বিদ্যুৎ বিভাগের নিয়ন্ত্রধীন পার্বত্য চট্রগ্রাম বিতরন প্রকল্পের আওতায় ২টি নোটিশে ৪০ টি প্যাকেজের বিপরীতে প্রায় ৫ কোটি টাকার টেন্ডার আহব্বান করা হয়ে। টেন্ডারে সিডিউল বিক্রি করার শেষ সময় ছিল গত বুধবার এবং টেন্ডার জমা দেয়ার শেষ সময় ছিল বৃহস্পতিবার  দুপুর ১২ টা পর্যন্ত। পৌর আওয়ামীলীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের জেলা পর্যাশের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ বিএনপি ও জেএসএস সমর্থিত ঠিকাদারদের বুধবার রাতে সমঝোতা বৈঠক করেন। এতে প্রায় ৫৫লাখ টাকা সমঝোতা হয়।
এই সমঝোতা প্রক্রিয়ার সাথে কয়েকজন তথাকথিত গণমাধ্যম কর্মীও জড়িত রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট নির্ভরযোগ্য সূত্র নিশ্চিত করেছে। আর এই ক্ষেত্রে সাংবাদিকদের ম্যানেজের দায়িত্বও তারা নিজেদের কাধেঁ নিয়েছেন বলে সূত্রটি জানায়। ৩- ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত এই তথাকথিত গণমাধ্যম কর্মীরা পেয়েছে বলেও জানা গেছে।
সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, ৪০টি কাজের মধো সমঝোতায় বিএনপিকে ৫টি,  জেএসএস ৫টি, এবং আওয়ামীলীগ ৩০টি কাজ ভাগ ভাটোয়ারা করে নেয়। সমঝোতার কারণে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে টেন্ডার জমাদান পর্যন্ত যুবলীগ, ছাত্রলীগ, বিএনপি এবং জেএসএস সমর্থিত ক্যাডাররা  পাহারা দেয় এবং সমঝোতাকারীরা ছাড়া অন্য কাউকে টেন্ডার ড্রপ করতে দেয়নি।

পার্বত্য চট্রগ্রাম বিদ্যুতায়ন প্রকল্পের ডিভিশন ১ এর আওতায় ২২ টি প্যাকেজ ৯৬ টি সিডিউল বিক্রি হয়েছে এবং ৫৭টি জমা পড়েছে। এখানে ২২ টি প্যাকেজের বিপরীতে বরাদ্দ রয়েছে ৩ কোটি ১৬ লাখ টাকা। পার্বত্য চট্রগ্রাম বিদ্যুতায়ন প্রকল্পের ডিভিশন-২ এর আওতায় ১৮ টি প্যাকেজ ৯০টি সিডিউল বিক্রি হলেও জমা পড়েছে ৩২ টি সিডিউল। ঠিকাদারী সিন্ডিকেট চক্র টেন্ডার কাজ যেন হাত ছোড়া না হয় সে কারনে স্কীমের বিপরীতে ২/৩ টি করে সিডিউল জমা দিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে রাঙ্গামাটি পৌর আওয়ামীলীগের সভাপতি সোলায়মান চৌধুরীকে কয়েক দফায় ফোন করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। জেলা যুবলীগ এর সভাপতি আকবর  হোসেন চৌধুরী জানান, টেন্ডারে অংশ নিলে নানা বির্তক হয় বলে তিনি টেন্ডার প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত ছিলেন না। তবে টেন্ডার সমঝোতার মাধ্যমে হলে কারো সমস্যা থাকার কথা না দাবী করে তিনি আরো বলেন, কোন ঠিকাদারের আপত্তি থাকলে তিনি লিখিত অভিযোগ তো করতে পারেন। পার্বত্য চট্রগ্রাম বিদ্যুতায়ন  প্রকল্প পরিচালক অতিক্রম চাকমা বলেন, টেন্ডার প্রক্রিয়া সময় বাইরে পুলিশের পাশাপাশি সেনাবাহিনীও ছিল। আমাদের বাউন্ডারীর মধ্যে কোন অনিয়ম হয়নি, বাইরে কি হয়েছে সেটা আমাদের জানার বিষয় না, সিডিউল বিক্রি ও হয়েছে জমাও পড়েছে।

২০০৮ সালে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় দুর্গম পার্বত্য অঞ্চলে বিদ্যুৎ সুবিধা পৌছে দেয়ার লক্ষ্যে ১২৬ কোটি টাকা ব্যয়ে পার্বত্য চট্রগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রনালয় পার্বত্য চট্রগ্রাম বিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ হাতে নেয়। প্রকল্পের শুরু থেকে একটি ঠিকাদার সিন্ডিকেট চক্র টেন্ডার আহ্বান করা হলেই সমঝোতার মাধ্যমে বিপুল পরিমান টাকা হাতিয়ে নেয়। অন্যদিকে সরকার হারায় লাখ লাখ টাকার রাজস্ব।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন