parbattanews

বিস্ফোরণে হতাহতদের দেহ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় মৃতের সংখ্যায় গরমিল: ফায়ার সার্ভিস

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিএম ডিপোতে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় মৃতের সংখ্যা নিয়ে যে ‘বিভ্রান্তি’ দেখা দেয়, তা এখনো রয়েছে। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল, সিভিল সার্জনের কার্যালয় এবং জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ভিন্ন ভিন্ন তথ্য দেওয়ায় এ বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়।

রোববার (৫ জুন) বিকেলে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন জানান, মৃতের সংখ্যা ৪৯। এর দেড় ঘণ্টা পর সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় জেলা প্রশাসক জানান, ৪৬ জনের মৃত্যুর তথ্য। তবে সোমবার দুপুরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের পরিচালক মৃতের সংখ্যা সংশোধন করে ৪১ জনের কথা জানান।

এদিকে, মঙ্গলবার (৭ জুন) দুজনের মরদেহ উদ্ধারের পর জেলা প্রশাসন থেকে মৃতের সংখ্যা সমন্বয় করে ৪৩ জনের মৃত্যুর তথ্য জানানো হয়। তবে এদিন দুপুরে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের চট্টগ্রাম বিভাগের উপ-পরিচালক আনিসুর রহমান ব্রিফিংয়ে উল্লেখ করেন যে, ফায়ার সার্ভিসের হিসাবে এখন পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ৪৪। ফলে সীতাকুণ্ড বিস্ফোরণে মৃতের সংখ্যা নিয়ে যে গরমিল, তা থেকেই যাচ্ছে। তবে মৃতের সংখ্যা নিয়ে গরমিলের ‘যৌক্তিক’ কারণও জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস।

ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা বলছেন, বিস্ফোরণের আগে বিএম ডিপোর শেডের নিচে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে আশপাশের বাসিন্দারাও ছিলেন। সেখানে কাজ করছিলেন কুমিরা ও সীতাকুণ্ডের ফায়ার ফাইটাররা। সবমিলিয়ে অসংখ্য মানুষ ছিলেন। বিস্ফোরণে তারা সবাই রীতিমতো উড়ে যান। মৃত অধিকাংশের হাত, পা, মাথা দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। কারও দেহের অংশবিশেষ আগে উদ্ধার করা হলে সেটাকে একজনের মরদেহ হিসেবে হিসাব রাখা হচ্ছিল। পরে একই ব্যক্তির দেহের অন্য অংশ উদ্ধারের পর সেটিকে আরেকজন ধরে প্রাথমিকভাবে হিসাব করা হয়। ফলে মৃতের সংখ্যা বেড়ে যায়। যাচাই-বাছাইয়ের পর এ তথ্য সমন্বয় করা হয়েছে। ফলে ‘বিভ্রান্তি’র সৃষ্টি হয়।

তবে এ নিয়ে সন্দেহ বা সংশয়ের অবকাশ নেই। মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে সবাই আন্তরিকভাবে শতভাগ সততার সঙ্গে কাজ করার চেষ্টা করছে বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস।

মঙ্গলবার (৭ জুন) চট্টগ্রাম বিভাগের উপ-পরিচালক আনিসুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ‘শেডের নিচে বিস্ফোরণের সময় অনেকে দাঁড়িয়ে ছিলেন। তারা আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ দেখছিলেন। সেজন্য সেখানে উদ্ধার তৎপরতা চলছে। আজকেও সেখান থেকে দুটি মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। তবে ভেতরে এখন যদি মৃতদেহ থাকেও, তা চিহ্নিত করা মুশকিল হয়ে পড়েছে। আজকে যে দুটি মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে, তা দেহের অংশ বিশেষ ছিল। পুড়ে যাওয়ার পর তাদের হাত বা পেটের একটি অংশ বা মাথার খুলির অংশবিশেষ অবশিষ্ট আছে। ফলে মরদেহ থাকলেও সেটা আলাদা কোনো ব্যক্তির নাকি আগেই উদ্ধার হওয়া কারও, তা বলা মুশকিল।’

আগুন নিয়ন্ত্রণের সর্বশেষ অবস্থা প্রসঙ্গে আনিসুর রহমান বলেন, ‘আজকে সকাল পর্যন্ত এখানে ছয়টি ইউনিট কাজ করেছে। এখানে কার্যক্রম সীমিত করে নিয়ে এসেছি। আগুন এখন নিয়ন্ত্রণে। শহরের অন্য কোথাও বড় কোনো দুর্ঘটনা ঘটতে পারে, এজন্য এখানে কার্যক্রম সীমিত করা হয়েছে। বর্তমানে ডিপো এলাকায় আমাদের দুটি ইউনিট কাজ করছে।’

বিস্ফোরণে এ পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা কত, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে ফায়ার সার্ভিসের চট্টগ্রাম বিভাগের উপ-পরিচালক আনিসুর রহমান বলেন, ‘এ পর্যন্ত সর্বমোট মৃত্যুর তথ্য যদি বলি, তাহলে সেটা আমাদের হিসাবে ৪৪ জন। তাদের মধ্যে সাধারণ মানুষ, ডিপোর কর্মকর্তা-কর্মচারী ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা রয়েছেন।’

আহতের সংখ্যা বিষয়ে তিনি বলেন, ‘৯৯ জন সাধারণ মানুষ গুরুতর দগ্ধ হয়েছেন। আহতের তালিকায় ফায়ার সার্ভিসের ১৫ জন রয়েছেন। তাদের মধ্যে একজন ফায়ার ফাইটার সুস্থ হয়ে এরই মধ্যে কর্মস্থলে ফিরেছেন। দুজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাদেরকে হেলিকপ্টারযোগে ঢাকায় নেওয়া হয়েছে। তারা শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন। বাকি ১২ জন ফায়ার সার্ভিসের কর্মী চট্টগ্রাম সিএমএইচে চিকিৎসাধীন।’

ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের মৃত্যুর সংখ্যা নিয়ে এ কর্মকর্তা বলেন, ‘এ পর্যন্ত ফায়ার সার্ভিসের মৃতের সংখ্যা ১২ জন। তার মধ্যে তিনজন এখনো মিসিং (নিখোঁজ)। তাদের বাবা-মায়ের স্যাম্পল নেওয়া হয়েছে, ডিএনএ টেস্ট করা হচ্ছে। অল্প সময়ের মধ্যে আমরা তাদের পরিচয় ও মরদেহ সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারবো। আজকে দুজনের দেহাবশেষ পাওয়া গেছে। আলামত দেখে মনে হচ্ছে, দুজনের মধ্যে একজন আমাদের সদস্য হতে পারেন। ডিএনএ টেস্টের পর আমরা নিশ্চিত হতে পারবো। আরেকজন সিকিউরিটির নেমপ্লেট ছিল। ধারণা করছি, তিনি ডিপোর কোনো ডিউটিতে ছিলেন।’

সূত্র: জাগোনিউজ

Exit mobile version